ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়। ... বিশদ
এপ্রিলে কাঁকেরের পর, গত শুক্রবারের মাওবাদী দমন অভিযানকেই ‘সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় সাফল্য’ ভাবা হচ্ছে। দীর্ঘদিনের মাওবাদী-গড় হিসেবে কুখ্যাত ছত্তিশগড়ের অবুঝমাড়। সেখানকার ঘন জঙ্গলে এদিন অন্তত ৩১ মাওবাদী জঙ্গিকে খতম করেছে যৌথবাহিনী। শনাক্ত হয়েছে ১৬ জন। মৃতদের তালিকায় রয়েছে কমলেশ ওরফে আর কে এবং নীতি ওরফে ঊর্মিলা। তারা দু’জনেই মাওবাদীদের দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটির গুরুত্বপূর্ণ মুখ। ওরছা ও বারসুর থানা সীমানার থুলথুলি এবং নেন্দুর গ্রামের মাঝে ঘন জঙ্গলে কমলেশ, ঊর্মিলা, নান্দু-সহ জনা পঞ্চাশ মাওবাদী লুকিয়ে ছিল। এমন গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে দ্রুত অভিযানের রণকৌশল স্থির করে ডিআরজি-এসটিএফ-সিআরপিএফ। প্রায় ২৫ কিমি ট্রেক করে জওয়ানরা প্রবেশ করেন জঙ্গলের গভীরে। এরপর দু’দলে ভাগ হয়ে তাঁরা হামলা চালান মাওবাদীদের উপর। আচমকা আক্রমণে কার্যত হতচকিত হয়ে পড়ে কমলেশরা। ঘণ্টাখানেক ধরে চলে সংঘর্ষ। প্রায় ১০ কিমি এলাকাজুড়ে চলে অভিযান। যৌথ বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারায় ৩১ জন মাওবাদী জঙ্গি। বাকিরা পালিয়ে যায়। তাদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে আধাসেনা। এই নিয়ে গত ৬ মাসে তিনটি ‘অত্যন্ত সফল’ মাওবাদী-বিরোধী অভিযান সংঘটিত হল। আইটিআই পড়ুয়া কমলেশ অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ার বাসিন্দা। মাওবাদী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছিল সে। ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা এবং মহারাষ্ট্র জুড়ে ছিল তার দাপাদাপি। পাঁচ রাজ্যের পুলিস দীর্ঘদিন যাবৎ তার খোঁজে হন্যে ছিল। বিজাপুরের গাঙ্গলুরের বাসিন্দা ঊর্মিলা মাওবাদীদের রণকৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিত। বস্তার জুড়ে এখনও পর্যন্ত ২১২ জন মাওবাদী জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আত্মসমর্পণও করেছে ২০১ জন। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি ছত্তিশগড়ে গিয়ে তামাম ভারত ২০২৬ সালের মধ্যে ‘মাওবাদী-মুক্ত’ করার ডাক দেন। কোনও সন্দেহ নেই, তারপর থেকে মাওবাদী দমন অভিযানে নতুন জোয়ার এসেছে।
আর এখানেই প্রশ্ন, এমন ‘সাফল্য’-এর মূল্য দীর্ঘ মেয়াদে কতটা? একে যদি ‘সাফল্য’ বলা হয় তবে দেশবাসী কিন্তু এর চেয়ে বড় ‘অ্যান্টি মাওয়িস্ট এনকাউন্টার’-এর সাক্ষী হয়েছে আগেই। গড়চিরোলি অভিযানের রোমহর্ষক কাহিনি অনেকের মনে আছে নিশ্চয়। মহারাষ্ট্রে গড়চিরোলির কাসান্সুর গ্রামে সেটি হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৪-২৫ এপ্রিল। টানা ৪৮ ঘণ্টার ওই ‘সফল’ এনকাউন্টারে তিন দফায় খতম করা হয়েছিল অন্তত ৩৭ জন মাওবাদী জঙ্গিকে। দেহ উদ্ধার হয়েছিল যথাক্রমে ১৬, ১৫ ও ৬ জনের। ওই অপারেশনে লিড করেছিল সিআরপিএফ। মৃতদের মধ্যে ছিল নিষিদ্ধ পার্টির দুই শীর্ষ নেতা—শ্রীনু ওরফে শ্রীকান্ত এবং সাঁইনাথ ওরফে ডোলেশ মাধি আতরাম। তাদের মাথার দাম ধার্য ছিল যথাক্রমে ২০ ও ১২ লক্ষ টাকা। মৃতদের মধ্যে ১৮ জন তরুণীও ছিল। তাদের মধ্যে অষ্টাদশী কুলয়েতির মাথার দাম ধার্য ছিল ৪ লক্ষ টাকা। নিহত ৩৭ জনের মাথার সর্বমোট মূল্য ধার্য ছিল ১০৯ কোটি টাকা! তাহলে গড়চিরোলির ‘সাফল্য’ জনজীবনে প্রভাব ফেলতে পারল কতটা? পূর্ববর্তী ঘটনাগুলি সামান্যও প্রভাব ফেলতে পারলে, পরবর্তী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ অনুষ্ঠানের প্রয়োজনই নিশ্চয় পড়ত না। গলদটা আসলে গোড়ায়। মানুষ কখন মরার ঝুঁকি নেয়? যখন তার সব আশা ভরসা শেষ হয়ে যায়। বেকার যুব শ্রেণির বাঁচার আশা জাগিয়ে রাখে একটি চাকরি। এক দশকের মোদি জমানা এখানেই ডাহা ফেল। এই পরীক্ষায় সরকার সসম্মানে উত্তীর্ণ হতে না-পারলে, ‘সফল’ এনকাউন্টারের সিরিজ লেখাই চলতে থাকবে, অধরা থেকে যাবে জনজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার হাজারো স্বপ্ন।