ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়। ... বিশদ
আর জি কর কাণ্ডের সুবিচার এবং দোষীর কঠোর সাজার দাবিতে সরব মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। শুধু দাবি জানিয়েই দায় সারেননি, বিচারে গতিবৃদ্ধিসহ দোষীর চরম সাজা নিশ্চিত করতে নতুন আইন প্রণয়নেও উদ্যোগী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যা ভিতর থেকে বোঝার এবং দীর্ঘমেয়াদি সুরাহার ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার উপর্যুপরি চেষ্টার ফলে তাঁর সঙ্গে একবার এবং মুখ্যসচিবের সঙ্গেও একবার বৈঠক হয়েছে আন্দোলনকারীদের। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেটাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নবান্ন ইতিমধ্যেই একাধিক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করেছে। তার পরেও জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন থামছে না। হাসপাতালগুলিতে ফিরছে না স্বাভাবিক পরিবেশ। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বস্তুত যেমন ছিল রয়ে গিয়েছে তেমনই। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন গরিব মানুষগুলি যাঁরা চিকিৎসার প্রয়োজনে শুধুই সরকারি হাসপাতালে ছুটে যান। বড়লোকের বেসরকারি হাসপাতালের ছায়াও মাড়াতে ভয় পান তাঁরা। বহু মধ্যবিত্ত পরিবারও সরকারি হাসপাতালে ভরসা রাখেন। কিন্তু এই দুর্দিনে অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজনে কিছু বেসরকারি হাসপাতালে যেতে তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন। জীবনদায়ী প্রয়োজনে এর ফলে অনেকে যে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন তা এক সহজ অনুমান।
তাই জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। শুরুর দিকে আন্দোলনটি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল বলেই মনে করা হয়েছিল। তাই নাগরিক সমাজের আন্তরিক সমর্থন পেতে আন্দোলনকারীদের সমস্যা হয়নি। সেই সমর্থন প্রথম দিকে অনেক দিনই ছিল। বাম-ডান একাধিক বিরোধী দল একদশক যাবৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াইতে সুবিধা করতে পারছে না। মাসকয়েক আগে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনেও গোহারা হয়েছে সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি। তাই আর জি কর কাণ্ডে সংগঠিত নাগরিক আন্দোলনের ফাঁকফোকর গলে তারাও মাথা তোলার চেষ্টা করেছে। তারা দাবি তুলেছে ‘দফা এক দাবি এক/ মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’! সাধারণ মানুষ বেশ বুঝতে পেরেছেন আর জি করে নির্যাতিতার বিচার এবং দোষীর শাস্তির দাবিটি ক্রমে পিছনে চলে যাচ্ছে। এই আন্দোলনে মুখ্য হয়ে উঠছে রাজ্য ক্ষমতা দখল বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচিত ও জনপ্রিয় সরকারকে অকালে ফেলে দেওয়া! এই মতলব যখন জলের মতো পরিষ্কার হচ্ছে তখনই কলকাতার বুকে শোনা গেল ভয়ঙ্কর দেশবিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহী, বিচ্ছিন্নতাবাদী স্লোগান—‘কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদি’! স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, নেপথ্যে তাহলে আরও কারা? জল গড়িয়েছে এবার দিল্লিতেও। কারণ সদ্য অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্র যখন কাশ্মীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তুলতে চাইছে, ঠিক তখনই দেশের সংস্কৃতির পীঠস্থান কলকাতার বুকে কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন! তাও আবার ডাক্তারদের আন্দোলনকে সামনে রেখে! এই জোড়া বিস্ময়ে কেন্দ্রীয় সরকার একইসঙ্গে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ এবং উদ্বিগ্ন। এই সম্ভাব্য বৃহৎ ষড়যন্ত্রের কারিগরদের চিহ্নিত করতে যৌথভাবে উদ্যোগী এবার কেন্দ্র ও রাজ্য। নির্যাতিতার বিচার এবং মেডিক্যাল কলেজগুলিতে সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ার ব্যাপারে জুনিয়র ডাক্তাররা আন্তরিক হলে এই ধরনের আন্দোলন থেকে তাঁদের অবিলম্বে সরে আসা উচিত। তাঁদের ভেবে দেখা দরকার, তাঁদেরকে সামনে রেখে কোনও অশুভ শক্তি বড় খেলায় মেতেছে কি না। তাঁদের আবেগ নিয়ে রাজনৈতিক ব্যবসা হচ্ছে না কি? তাঁরা ব্যবহৃত হচ্ছেন না তো?