ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়। ... বিশদ
তর্কের খাতিরে এই দাবি সাকার রূপ নিলেও সাধারণ ভারতবাসীর জীবনযাত্রার মানের খুব হেরফের হবে কি? প্রশ্নটি এই কারণে যে, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষের দেশের নাম এখন ভারত, সাম্প্রতিক অতীতে চীনকে টপকে আমরা এই ‘অসামান্য সাফল্য’ অর্জন করেছি। ভারতের জনসংখ্যা আপাতত দেড়শো কোটির মাইলস্টোন ছোঁয়ার জন্যও ভীষণ দ্রুতগতিতে এগচ্ছে। মনে রাখতে হবে, দায়িত্বশীল রাষ্ট্র যদি তার মানুষকে মানবসম্পদে (হিউম্যান রিসোর্স) রূপান্তরিত করতে পারে তাহলে বিপুল জনসংখ্যা উদ্বেগের কারণ নাও হতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্র এই দায়িত্বপালনে ফেল করলে বিপুল জনসংখ্যার বেশিরভাগটাকেই ‘বোঝা’ (বার্ডেন) মনে হতে বাধ্য। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরের পূর্বশর্ত হল বৈষম্য দূর করে ফেলা। কিন্তু সাতাত্তর বছরের স্বাধীন দেশ বৈষম্য বৃদ্ধিতেই হাত পাকিয়ে চলেছে। ধনবৈষম্য কী সাংঘাতিক—তা পরিষ্কার হয় ধনাঢ্য শ্রেণির বিপরীতে রামা কৈবর্ত, গফুর মিয়াঁ গোছের লোকগুলির ছবিতে চোখ রাখলে। মোট সম্পদের ৭০-৮০ শতাংশ মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের কুক্ষিগত হলে জনসংখ্যার নীচের ৫০ শতাংশ মানুষের জন্য যা পড়ে থাকে তার নাম শুধুই হাহাকার। এই দেশ অচিরে তৃতীয় বূহত্তম অর্থনীতি হলেও গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির দশা পাকা বেলের সামনে ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত কাকের মতোই অসহায় দেখাবে বইকি।
সাধারণ মানুষের অসহায়তা কমানোর জন্য সবচেয়ে জরুরি হল কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামে লাগাম পরানো। সাধারণ মানুষের স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার বৃদ্ধিতেও কিছুটা সুরাহা মেলে। কিন্তু তিনটি ক্ষেত্রেই মোদি সরকার জনগণকে লাগাতার বিমুখ করে চলেছে। তারই মধ্যে দুঃসংবাদ পাওয়া গিয়েছে যে, পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতের বাজেট বরাদ্দ কেন্দ্র খরচই করতে পারেনি। চলতি অর্থবর্ষের অর্ধেক পেরিয়ে গিয়েছে, অথচ এই খাতে বরাদ্দের প্রায় কিছুই কাজে লাগাতে পারেনি তারা। এবছর রেকর্ড সাড়ে ১১ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করাই সার হয়েছে তাদের। ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ রাজ্য সরকারগুলির ছিদ্রান্বেষণে চ্যাম্পিয়ন হতে গিয়ে মোদি সরকার নিজেই নিকম্মা হয়ে উঠছে না কি? যাই হোক, তাদের এই অপদার্থতার দায় বইতে হবে সারা দেশকে। সড়ক, সেতু, রেলপথ, বন্দরসহ নানা ক্ষেত্রে নির্মাণযজ্ঞ ধাক্কা খাবে। ঝুলে যাবে বহু জরুরি প্রকল্প। যেমন কলকাতায় মেট্রোরেল প্রকল্পগুলির হামাগুড়ি দেওয়া শেষই হচ্ছে না। একইসঙ্গে মার খাবে কর্মসংস্থান। মনরেগায় (১০০ দিনের কাজের প্রকল্প) বরাদ্দ হ্রাসের ক্ষতি কিছুটা পূরণ করতে পারত পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে গুরুত্ব বৃদ্ধি। কিন্তু মোদি সরকার এখানেও ডাহা ফেলু! অন্দরের খবর, রাজস্ব ঘাটতি কমাতেই নাকি এই কৌশল। কিন্তু এর পরিণাম সাধারণ মানুষের জন্য হিতে বিপরীতই হবে। কারণ মানুষের হাতে কাজ কমে গেলে বাজার ক্রেতা হারাবে। মারখাবে চাহিদা ও উৎপাদন। এমনিতে আমেরিকা ও চীন এবং ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে ভারতীয় অর্থনীতির কাহিল অবস্থা। তার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাজারও সংগত করলে আর দেখতে হবে না। নীতি বদল না করলে এই পরিস্থিতির সংশোধন চলতি অর্থবর্ষে আদৌ সম্ভব কি না সেই আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।