ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়। ... বিশদ
কিন্তু এই আনন্দের দিনে প্রশ্নটা আরও বড় আকারে সামনে চলে আসছে। এই রাজ্যে বাংলা ভাষা তার প্রাপ্য মর্যাদা দিনকে দিন হারিয়ে ফেলছে না তো? সামাজিক ক্ষেত্রে, তথাকথিত শিক্ষিত মহলেও কি বাংলা ভাষার ব্যবহারে দৈন্য ক্রমবর্ধমান নয়? সমাজের একটা বড় অংশ, বিশেষত একবিংশ শতকে তরুণ সমাজের একটা বড় অংশ কি শুদ্ধ বাংলা বলতে, লিখতে, পড়তে অপারগ নয়? অনেক ঘোষণা সত্ত্বেও আজও সরকারি নির্দেশিকা, অফিস আদালতে কাজকর্ম, পণ্য ও পরিষেবার বিজ্ঞাপন, সাইনবোর্ডে কত শতাংশে মাতৃভাষা জ্বলজ্বল করে? আবার রাজনীতির প্রচার থেকে অনুষ্ঠানের বিজ্ঞপ্তি, নানা অনুষ্ঠানের ঘোষণায় কি আজও নির্ভুল বাংলা ভাষার অনটন নজরে পড়ে না? অথচ আমাদের এই রাজ্যে বাংলাভাষার ব্যবহার নিয়ে কম-বেশি আন্দোলন কম হয়নি। এই বিষয়ে সরকারি উদ্যোগও মাঝেমধ্যে চোখে পড়েছে। কিন্তু তা যৎসামান্যই। বাংলা ভাষা ব্যবহারে কোথাও কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। বরং বাংলা-হিন্দি-ইংরেজির এক পাঁচমেশালি সংস্কৃতি যেন গ্রাস করে নিচ্ছে সবটা! তাই নতুন এই স্বীকৃতি লাভে গা-ভাসানোর পাশাপাশি আত্মসমালোচনাও ভীষণভাবে জরুরি। এই ধ্রুপদী স্বীকৃত ভাষাকে প্রচার ও প্রসারে কীভাবে আরও বেশি করে কাজে লাগানো যায় সেই অনুশীলন শুরু হোক আজ থেকেই। একমাত্র তাহলেই বাংলা ভাষা তার প্রকৃত মর্যাদা পাবে।
এই প্রসঙ্গেই ফের উঠে এসেছে রাজ্যের নামবদলের বিষয়টি। ইংরেজি বর্ণমালা অনুযায়ী ডব্লু দিয়ে শুরু পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তনের আর্জি জানিয়ে মমতার সরকার বারবার দরবার করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে। রাজ্য চায়, ইংরেজি, হিন্দি ও বাংলা তিনটি ভাষাতেই রাজ্যের নাম হোক ‘বাংলা’। নাম নিয়ে রাজ্য বিধানসভায় দু’বার প্রস্তাব পাশ হয়েছে। নাম পরিবর্তন নিয়ে কেন্দ্রের তরফে যা যা তথ্য চাওয়া হয়েছিল তার সবই লিখিত আকারে পেশ করেছে রাজ্য। তবু কোনও এক অজানা কারণে রাজ্যের প্রস্তাব বছরের পর বছর ঠান্ডা ঘরে ফেলে রেখেছে মোদি সরকার। তাই হয়তো দুর্গাপুজোর ঠিক মুখে কেন্দ্রের তরফে বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার প্রসঙ্গটিকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের রাজনৈতিক ‘কৌশল’ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তাঁরা মনে করছেন, বাঙালি মননে জায়গা পেতেই পুজোর এই ‘উপহার’। আসলে হিন্দি বলয়ের পার্টি হিসেবে পরিচিত বিজেপি ও সেইদলের নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে দূরত্ব কমাতে চাইছে। কেন্দ্রের উদ্দেশ্য যাই হোক, এই স্বীকৃতি বাংলার ন্যায্য প্রাপ্তি। তাই এখন বাংলা ভাষার জাতীয় স্বীকৃতি মেলায় রাজ্যের নাম বদলের দাবিতেও ফের সরব হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের ঘুম ভাঙবে কবে তা অবশ্য কেউ জানে না।