ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়। ... বিশদ
রাজনৈতিক দলগুলির তরফে তহবিল সংগ্রহ নিয়ে নানা সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পার্টিগুলিকে দুর্নামের হাত থেকে বাঁচাতে একটি ‘স্বচ্ছ’ ব্যবস্থা আবিষ্কার করেন নরেন্দ্র মোদির প্রথম অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি মহোদয়। ২০১৮ সালে তিনি চালু করেন ইলেক্টোরাল বন্ড স্কিম। এক বিজ্ঞপ্তি মারফত কেন্দ্র আশ্বস্ত করেছিল যে, ওই বন্ড কিনে যেকোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা তাঁর পছন্দের রাজনৈতিক দলকে অর্থ সাহায্য করতে পারবেন। তবে এই বন্ড কারা এবং কী উদ্দেশ্যে কিনছেন, তা গোপন থাকবে। নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের মার্চ থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত অনেকগুলি কর্পোরেট সংস্থা বিভিন্ন দলকে বন্ডের মাধ্যমে মোট ১৬,৫১৮ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছে। তার মধ্যে ৮,২৫০ কোটি বা প্রায় অর্ধেক ঢুকেছে বিজেপির ফান্ডে! রাজনৈতিক দলগুলিকে সাহায্যের নামে এই বিপুল পরিমাণ টাকার ‘অতিশয় গোপন’ লেনদেন নিয়ে নাগরিক সমাজ গোড়াতেই প্রশ্ন তুলেছিল। তারা জানতে চেয়েছিল, এই আজগুবি ‘বৈধতা’ দীর্ঘমেয়াদে চলতে দেওয়া উচিত কি না। দেশবাসীর সৌভাগ্য এই যে, শীর্ষ আদালত গত ফেব্রুয়ারিতে স্পষ্ট করে দিয়েছিল, এই ব্যবস্থা ‘অবৈধ, অসাংবিধানিক এবং চলতে পারে না’। পুরো বিষয়টি সবিস্তারে জনসমক্ষে প্রকাশ করারই নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। এতে এবারের লোকসভা ভোটের মুখে ভয়ানক বেকায়দায় পড়ে যায় মোদির সরকার ও পার্টি। নানারকম বাহানা করেও পার পায়নি এসবিআই এবং সরকার। শেষমেশ অনেককিছুই সামনে সামনে আনতে বাধ্য হয় তারা। তারপর থেকে ব্যবস্থাটি সম্পর্কে নিন্দার ঝড় বয়ে গিয়েছে। এমনকী মোদিরই অর্থমন্ত্রীর অর্থনীতিবিদ স্বামী পরকাল প্রভাকর মন্তব্য করেন যে, ‘শুধু ভারত নয়, নির্বাচনী বন্ড বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি।’ বন্ড বিতর্কের মধ্যেই ফের মাথাচাড়া দেয় পুরনো নোট বাতিল ইস্যু। নোট বাতিল মামলায় সরকার জয়ী হওয়া সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতির মন্তব্যে সরকারের অস্বস্তির বাড়ে। তারপরেও অবশ্য শাসক দলের ‘মুখ’ দেশজুড়ে ‘স্বচ্ছতার পাঠ’ বিতরণে ক্লান্তিহীন! ‘ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধেই’ দাপিয়ে বেড়ান তিনি ‘খড়্গ’ হাতে!
কদর্য মুখ মুখোশের আড়ালে সারাক্ষণ ঢেকে রাখতে পারল না মোদি সরকার। সেই পুরনো বিতর্কেই ফের মুখ পুড়ল তার। যে-বিজেপি যেকোনও অজুহাতে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়, তারা এবার তাদের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইবে না কেন? যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের ফাটকে ভরার রাজনীতিতে দিবারাত্র শান দেয়, তারা এবার দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে মুখর হবে না কেন? বন্ড কেলেঙ্কারি কোনোভাবেই ছোটখাটো বিষয় নয়। এমন কেলঙ্কারির দায় নির্মলা দেবীর একার নয়, এই অনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করতে তাঁকে যিনি প্ররোচিত করেছেন, তিনি বেকসুর খালাস পাবেন কোন যুক্তিতে? এই ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদির নামেও এফআইআর হওয়া জরুরি। দেশের সংবিধান অনুসারে, কোনও ব্যক্তিই আইনের ঊর্ধ্বে নন।