শ্লেষ্মা ও বাতজ রোগ বৃদ্ধিতে কাজকর্মে ব্যাঘাত। গৃহাদি নির্মাণ বা সংস্কারে শত্রুর বাধা। ধর্মে মতি। ... বিশদ
কাউকে বিচারের কাঠগড়ায় তুলে দেওয়া হল মানেই তিনি ‘দুষ্কৃতী’ বা ‘দুর্বৃত্ত’ হয়ে গেলেন না। তিনি কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের শিকার কি না, নিরপেক্ষ অনুসন্ধান ও তদন্তের আগে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই। তাই যেকোনও গুরুতর অভিযোগকে বিচারের আওতায় আনা জরুরি। শাস্তির ব্যাপারে আদালতবহির্ভূত যেকোনও সিদ্ধান্ত ‘অবৈধ’, ‘অসাংবিধানিক’ ও ‘অবাঞ্ছিত’। এমন সিদ্ধান্ত কোনও সভ্য সমাজে গ্রাহ্য বা কার্যকর হওয়ার কথা ভাবাও অনুচিত। বরং এই ধরনের অবৈধ, অসাংবিধানিক ও অবাঞ্ছিত কাণ্ড ঘটাবার দুঃসাহস ও নিষ্ঠুরতা যারা দেখায় তাদেরই আনা উচিত বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে এবং তৎক্ষণাৎ। এই পুরো ব্যাপারটি মাথায় রেখেই গণপিটুনির মতো ন্যক্কারজন অমানবিকতার সমস্যার মোকাবিলা করা দরকার। সম্প্রতি বাংলার নানা স্থানে বেশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এই সামাজিক সমস্যাটি। কারও ঘাড়ে কিছু অপবাদ বা কলঙ্ক চাপিয়ে দিয়ে কিছু মানুষকে তাৎক্ষণিকভাবে উত্তেজিত করা হচ্ছে। তারপরই চলছে সেই মানুষটির উপর নিষ্ঠুরতা প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। তাতে মানুষটি জখম তো হচ্ছেনই, খুনও হয়ে যাচ্ছেন কখনও কখনও। আত্মপক্ষ সমর্থনের সামান্যতম সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না তাঁকে।
এই দলবদ্ধ নৃশংসতা শুধু নিন্দনীয় নয়, কঠোরতম শাস্তিযোগ্য। রাজ্যে এই সমস্যাটি অতিসাম্প্রতিক এক প্রবণতা। চতুর্দিক যখন মতলববাজে ছেয়ে যায়, তখন এই বিপদ মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। সম্ভবত, এই চিন্তা থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বহু আগে এর সমাধানের পদক্ষেপ করতে চেয়েছিল। গণপিটুনি প্রতিরোধ বিল বিধানসভায় পাস করিয়েছিল রাজ্য সরকার ২০১৯ সালে। ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রিভেনশন অব লিঞ্চিং বিলে বলা হয়েছে, গণপ্রহারে কারও মৃত্যু হলে বা খুনের উদ্দেশ্য নিয়ে কাউকে মারা হলে, দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। ওইসঙ্গে রয়েছে মোটা অঙ্কের জরিমানার ব্যবস্থাও। গণপ্রহারে কেউ জখম হলে দোষীদের তিনবছর পর্যন্ত জেল এবং মোটা অঙ্কের জরিমানারও সংস্থান রাখা হয়েছে। ১০ বছর, এমনকী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডেরও ব্যবস্থা আছে গণপ্রহারে গুরুতর জখমের ঘটনায় দোষীদের জন্য। সব মিলিয়ে এটাই ছিল দেশের প্রথম রাজ্য হিসেবে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু পাঁচবছরেও বিলটিতে রাজভবনের সম্মতি মেলেনি! কেন্দ্রের প্রতিনিধি রাজ্যপালের কাছেই ‘বন্দি’ সেটি। আটকেছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার। পরবর্তীকালে, বাঙালির নয়নের মণি নেতাজির পদবি ধার করা সি ভি আনন্দ বোস এসেও এমন ন্যায়বিচারের মুক্তির রাস্তাটি খোলেননি। অথচ, আইনটি এখনই কার্যকর হওয়া জরুরি। কারণ শিশুচুরিসহ নানারকম গুজবে ভর করে প্রায়ই সংঘটিত হচ্ছে গণপিটুনির ঘটনা। ইতিমধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুও হয়েছে। এই সমস্যা আর কোনোমতেই বাড়তে দেওয়া উচিত নয়। প্রশাসন তার কাজটি নিরপেক্ষতা এবং দক্ষতার সঙ্গে নিশ্চয় করবে। কিন্তু তার সঙ্গে আইনি ব্যবস্থার সংগতটিও সমানুপাতিক হওয়া কাম্য। রাজ্য এগিয়েছে সেই পথেই। রাজভবনের সবরকম ইগো ছেড়ে নবান্নের সৎ প্রচেষ্টার পাশে এখনই আন্তরিকতার সঙ্গে দাঁড়ানো উচিত, তার পক্ষে সেটাই হবে বাংলার মানুষের পাশে থাকা।