শ্লেষ্মা ও বাতজ রোগ বৃদ্ধিতে কাজকর্মে ব্যাঘাত। গৃহাদি নির্মাণ বা সংস্কারে শত্রুর বাধা। ধর্মে মতি। ... বিশদ
আইনজীবীদের একাংশ বলছেন, ঔপনিবেশিক আমলের আইন বদলের কথা বলা হলেও এই পরিবর্তনের সিংহভাগ একই রয়েছে। যেমন, ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৪টি ধারা বাদ দিয়ে ২৩টি নতুন ধারা যোগ করা হয়েছে, ফৌজদারি দণ্ডবিধির প্রায় ৯৫ শতাংশ ধারা প্রায় একই আছে। সাক্ষ্য আইনে ১৭০টি ধারার কোনও পরিবর্তন হয়নি। আসলে পরিবর্তন হয়েছে নতুন ধারার সংখ্যায়। কীরকম? খুনের ধারা (৩০২) হয়েছে ১০৩(১), ১০৩(২)। অনিচ্ছাকৃত খুন (৩০৪এ) হয়েছে ১০৬(১), ধর্ষণ (৩৭৬) হয়েছে ৬৪, শ্লীলতাহানি (৩৫৪) হয়েছে ৭৪, বধূ নির্যাতন (৪৯৮এ) হয়েছে ৮৫, প্রতারণা (৪২০) হয়েছে ৩১৮(৪)। কিন্তু এসব বাহ্য। আসল পরিবর্তন হয়েছে পুলিসের ক্ষমতায়। পুরনো আইনে অভিযুক্তকে সর্বাধিক ১৪দিন পুলিসি হেফাজতে রাখা যেত। নতুন আইনে সেই সময়সীমা অনেক বেড়েছে। কোনও ঘটনায় পুলিস এফআইআর না করেই প্রথমে ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে পারবে। তারপর মনে করলে এফআইআর করবে। আবার ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ কোনও ব্যক্তিকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারবে। কার্যত পুলিসের ইচ্ছাতে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা! এসব ‘পুলিসি রাষ্ট্র’ গঠনের দিকে এগনোর লক্ষণ বলে মনে করছে বিরোধীরা। রাজনৈতিক স্বার্থে পুলিসকে আরও বেশি করে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এই নতুন আইন। নতুন আইনে মোদি-শাহ জুটি কৌশলে ‘দেশদ্রোহ’ আইনকে ফিরিয়ে এনেছে নতুন নামে। বলা হয়েছে, দেশের সার্বভৌমত্ব, একতা ও অখণ্ডতা বিপন্ন হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এরসঙ্গে অপরাধ ও সন্ত্রাস দমনে নতুন ধারা যোগ হয়েছে। উদ্দেশ্য সেই এক এবং পরিষ্কার। যেটা উদ্বেগের তা হল, এতদিন কারও বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইন দিতে গেলে সরকারের অনুমতি লাগত। এখন পুলিস নিজেই এই সর্বনাশা আইন লাগু করতে পারবে।
উপযুক্ত পরিকাঠামো না তৈরি করেই নতুন আইন চালু হয়ে যাওয়ায় বিচারব্যবস্থায় ভয়ঙ্কর রকমের জটিলতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকারের ঘোষণা মতো, ৩০ জুন রাত ১১.৫৯ মিনিট পর্যন্ত যে কোনও অভিযোগের বিচার হবে পুরনো আইনে। তারপর থেকে অভিযোগ নেওয়া হবে নতুন আইনে। অর্থাৎ দেশে একইসঙ্গে সমান্তরালভাবে দুটি আইনে বিচার চলবে। এর জন্য পুলিস, প্রশাসন, আইনজীবী, বিচারপতি-বিচারকরা কতটা প্রস্তুত আছেন? নতুন আইন নিয়ে কিছু কিছু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হলেও তার সংখ্যা একেবারেই অকিঞ্চিতকর। এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত পর্যন্ত গোটা দেশে বকেয়া মামলার সংখ্যা কয়েক কোটি। পরিকাঠামোর বেহাল দশায় এই পাহাড়প্রমাণ বকেয়া মামলার নিষ্পত্তি কত বছরে হবে তা কেউ জানেন না। এই পরিস্থিতিতে নতুন আইন জানা, তার ভিত্তিতে মামলা ও বিচার চালাতে গেলে এক বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। ফলে নতুন আইনকে ঘিরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে সর্বত্র। মোদি-শাহরা অবশ্য ‘ন্যায়’ প্রতিষ্ঠার নামে অনিয়মের পথে ভ্রুক্ষেপহীন।