শ্লেষ্মা ও বাতজ রোগ বৃদ্ধিতে কাজকর্মে ব্যাঘাত। গৃহাদি নির্মাণ বা সংস্কারে শত্রুর বাধা। ধর্মে মতি। ... বিশদ
মার্চ মাসে দিল্লির টার্মিনাল ভবনের উদ্বোধন করে মোদি বলেছিলেন, ‘আমি অন্য মাটি দিয়ে তৈরি। আগে সবাই শিলান্যাস করে পালিয়ে যেত। আমি এমন দ্রুতগতিতে কাজ করছি যে ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হয়ে যাবে ভারত’। ঘটনা হল, দ্রুতগতিতে কাজ শেষ করার কথা বলে প্রধানমন্ত্রী খুব ভুল কিছু বলেননি। কিন্তু যে সত্যটাকে তিনি আড়াল করেছেন তা হল, তাঁর শাসনে দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদে নিম্নমানের সামগ্রী ও প্রযুক্তির সাহায্যে জোড়াতালি দিয়ে কাজ সারছে বলে একশ্রেণির ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ। এর পাশাপাশি কাজের নিয়মিত তদারকির অভাব, শ্রমিকদের নিরাপত্তা না দেখা, প্রশিক্ষিত পরিদর্শকের অভাব, দুর্নীতি এবং পারস্পরিক স্বার্থরক্ষায় নজর দিতে গিয়ে আসল কাজেই ফাঁকি থেকে যাচ্ছে। মোদি চান, তাই এই নিম্নমানে তৈরি প্রকল্পের শংসাপত্র দিতে দুবার ভাবছেন না সরকারি কর্তারা। বলাই বাহুল্য, এর পরিণতি হচ্ছে ভয়ঙ্কর। গত জানুয়ারিতে একাধিক শঙ্করাচার্যের আপত্তি সত্ত্বেও অযোধ্যায় অসমাপ্ত রামমন্দিরের উদ্বোধন করেছিলেন মোদি। পাঁচ মাসের মাথায় সেই মন্দিরের গর্ভগৃহের মাথার ছাদ চুঁইয়ে রামলালার ঘরে জল ঢুকতে শুরু করেছে। মন্দিরে যাওয়ার জন্য ৩১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১৩ কিলোমিটার ‘রামপথ’ ইতিমধ্যেই খানাখন্দে ভরে উঠেছে। মোদির সাধের অযোধ্যার রেলস্টেশনের ৪০ মিটার দেওয়ালের একটি অংশ ভেঙে পড়েছে। মোদির তড়িঘড়ি উদ্বোধন করা মুম্বইয়ের অটল সেতুতে ফাটল ধরেছে। তাঁর নিজের রাজ্য গুজরাতের মোরবিতে সেতু ভেঙে ১৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। মাত্র কিছুদিন আগে উত্তরাখণ্ডে পাথর কেটে সুড়ঙ্গ তৈরির সময় ৪০ জন শ্রমিক আটকে পড়েন। পনেরো দিন পরে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। শুধু বিহারেই ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে ১৩টি সেতু ভেঙে পড়ে। দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভোট পেতে তড়িঘড়ি উদ্বোধন এবং সেই কারণে প্রকল্প তৈরির ক্ষেত্রে রয়েছে ন্যক্কারজনক আপস করার অভিযোগ। ফলে কেউই নিরাপদ নয়।
দেশের মানুষের অভিজ্ঞতা হল, ক্ষমতায় টিকে থাকতে মোদি যা খুশি করতে পারেন। পাশাপাশি তিনি তাঁদের স্বার্থই দেখেন, যাঁরা তাঁর দলকে দুধে-ভাতে রাখার ব্যবস্থা করেন। ‘গিফ অ্যান্ড টেক’ পলিসি। এই নীতি মেনেই ২০১৮ সালে ’নির্বাচনী বন্ড’ চালু করে সবচেয়ে বেশি চাঁদা আদায় করেছে মোদির দল। বিনিময়ে দাতাদের নির্বিচারে সরকারি বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন দিল্লি বিমানবন্দর। রাষ্ট্রায়ত্ত এই বিমানবন্দর এখন সরকারি বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বে ‘পিপিপি’ মডেলে চলে। এই মডেল অনুযায়ী মোদি ঘনিষ্ঠ কর্পোরেট সংস্থা ‘জিএমআর’ কনসোর্টিয়াম দিল্লি বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। গত ছ’বছর ধরে এই সংস্থা বিজেপির নির্বাচনী তহবিলে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়ে আসছে। ক্রুডেন্ট ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট্রের অংশীদার হয়ে তারা এই চাঁদা দিচ্ছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, দিল্লি বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভেঙে পড়ার ঘটনায় মোদি-ঘনিষ্ঠ এই কর্পোরেট সংস্থার কেশাগ্র স্পর্শ করার সাহস দেখাতে পারবেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ? উত্তর সকলেরই জানা।