শ্লেষ্মা ও বাতজ রোগ বৃদ্ধিতে কাজকর্মে ব্যাঘাত। গৃহাদি নির্মাণ বা সংস্কারে শত্রুর বাধা। ধর্মে মতি। ... বিশদ
শনিবার কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে সাংবিধানিক নৈতিকতা প্রসঙ্গে এটাই পরিষ্কার করলেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। তাঁর সাফ কথা, ‘সাংবিধানিক নৈতিকতার বার্তা এটাই যে বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করো এবং সহনশীল হও।’ মোদি জমানায় দেশজুড়ে ধর্মীয় মেরুকরণ ও বিভাজনের রাজনীতির আবহ তৈরি হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে দেশের প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কলকাতা হাইকোর্ট বার লাইব্রেরি ক্লাবের দ্বিশতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুক্রবার শহরে আসেন তিনি। তারপর শনিবার অন্য-এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘সংবিধানই আমাদের মুক্তচিন্তার অধিকার দিয়েছে। একজন ভারতীয় যেমনভাবে চান তেমনভাবেই ভাবতে পারেন। তাঁর বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া যায় না, অর্থাৎ তিনি যা চান, বলতে পারেন সেটাই। তিনি যাঁকে চান, আরাধনা করতে পারেন তাঁরই। অনুসরণও করতে পারেন তিনি তাঁরই আরাধ্যকে। একজন মানুষ তাঁর রুচি-পছন্দমাফিক খাওয়া-দাওয়া করতে পারেন। এমনকী, তিনি বিয়েও করতে পারেন তাঁঁর পছন্দের মানুষটিকে।’ এই বক্তব্যের মাধ্যমে দেশের বিচারব্যবস্থার সুপ্রিম আসন থেকে এটাই ঘোষিত হল যে, সাংবিধানিক নৈতিকতা লঙ্ঘনের এক্তিয়ার কারও নেই—না বিচারব্যবস্থার, না নির্বাচিত কোনও সরকারের।
শুক্রবারের অনুষ্ঠান থেকে বিচারব্যবস্থার সংস্কারের পক্ষে তাঁর মত জানান প্রধান বিচারপতি। তিনি শনিবার যা বলেছেন, সেটি বস্তুত আরও একধাপ এগিয়ে। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ‘বিচারের ক্ষেত্রে বিচারপতির নিজস্ব চিন্তাধারা থাকতে পারে না; আমরা সকলেই সংবিধানের ভৃত্য; কেউই প্রভু নই।’ এই প্রসঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তিনি, ‘মানুষের কাছে আদালত ন্যায়বিচারের মন্দির—নিজেদেরকে সেই মন্দিরের দেবতা ভেবে আমরা ভুল করি—এটা বিপজ্জনক। আমার নিজস্ব চিন্তাভাবনা রয়েছে। আমার সামনে আদালতকে কেউ ‘মন্দির’ বললে আপত্তি জানাই। আমি মনে করি, বিচারপতিরা মানুষের সেবকমাত্র।’ এরপরই বিচারপতিদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘অন্যের সম্পর্কে আগাম কোনও ধারণা নিয়ে বিচারকের আসনে বসবেন না। আপনারা সহানুভূতি রাখুন। মনে রাখতে হবে, আমাদের সামনে যাঁরা দাঁড়িয়ে থাকেন, তাঁরা প্রত্যেকে মানুষ। বিচারপতিরা যেন নিজ নিজ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার না করেন। সমাজকে নিয়ে সংবিধানের যে মূল উদ্দেশ্য, বিচার করতে হবে সেটা বজায় রেখেই।’ বাইরের ‘কুৎসা’ বা ‘ষড়যন্ত্র’ তত্ত্ব উপেক্ষা করতেই পারে ‘বুলডোজ’ প্রশাসন। কিন্তু দেশের বিচারব্যবস্থার সর্বোচ্চ আসন থেকে যে সময়োচিত বার্তাটি দেওয়া হল, তাকে অগ্রাহ্য করার অবকাশ কোথায়? লাভ জিহাদ, ধর্মান্তরণ, হিজাব বিতর্ক, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগসন্ধান প্রভৃতি থেকে এখনই বেরিয়া আসা উচিত সরকারের। কারণ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্রের কর্মসূচি এসব হতে পারে না। সর্বোপরি, অবাঞ্ছিত কাজে সময় ও উদ্যম এতই নষ্ট হচ্ছে যে, অবহেলিত রয়ে যাচ্ছে ‘সবকা বিকাশ’-এর বাস্তব উদ্যোগ। চড়া মাশুল গুনছে দেশের অর্থনীতি—তাতে সবচেয়ে বেশি কোপ পড়ছে গরিব এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির উপর।