অর্থকড়ি প্রাপ্তির যোগটি বিশেষ শুভ। কর্ম সাফল্য ও চিন্তার অবসান। দেবারাধনায় মন। ... বিশদ
ভারতের মতো দেশে, যেখানে এখনও পর্যন্ত সংসদীয় গণতন্ত্র টিম টিম করছে, সেখানে জনগণকে ভোটের লাইনে দাঁড় করাবার বিকল্প নেই। এই বহুদলীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় ছোট বড় সব দলকেই প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হয়। ভোটযুদ্ধে জয়ের হাতিয়ার প্রচার। নিজ নিজ ভালো কাজের খতিয়ান এবং জনকল্যাণমূলক ভাবনার কথা প্রচারে তুলে ধরাই নিয়ম। কিন্তু বেশিরভাগ দল এই লক্ষ্মণরেখার ভিতরে নিজেদের আটকে রাখার সংস্কৃতি অনেক আগেই বিসর্জন দিয়েছে। প্রচারে, অগ্রাধিকারের তালিকায় তারা ‘উজ্জ্বল’ দেখাতে চায় তাদের রাজনৈতিক বিরোধীদের ‘খারাপ’ দিকগুলি। এটাও ভোটাররা মেনে নিয়েছেন বহুকাল হল। কিন্তু এবার যেন সব ছাপিয়ে গিয়েছে। বিরোধীদের ‘খারাপ’ দিক তুলে ধরার জন্য কোনও কোনও দল, বাস্তবের গলা টিপে ধরে ভয়ানক মাত্রায় কল্পনাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে। এমন কীর্তি বহু নিন্দিত ‘তিলকে তাল’ করার অভ্যাসকেও দশ গোল দিচ্ছে দিনে রাতে। বলা বাহুল্য, এই ব্যাপারে এবার যেন ‘শিরোমণি’ পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার একমাত্র দাবিদার হয়ে উঠেছে বিজেপি। ‘কুৎসা’র প্রচারে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহদের পার্টির পাখির চোখ এবার বাংলার জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস। এই অন্যায় কেন, তা রাজনৈতিক মহল তো বটেই সাধারণ মানুষের কাছেও পরিষ্কার। আমরা জানি, মোদির হ্যাটট্রিকের সামনে এখনও পর্যন্ত বৃহত্তম চ্যালেঞ্জারের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরই উদ্যোগে মোদি-বিরোধী মহজোট ‘ইন্ডিয়া’ গড়ে উঠেছে এবং গেরুয়া শিবিরের পক্ষে জ্বালা ধরানো অনবদ্য নামকরণটিও তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। অতএব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর দল এবং দলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘ম্যালাইন’ করার কোনও চেষ্টা এবার বাদ রাখেনি মোদি সরকার। অবশেষে সাধারণ নির্বাচনে দলীয় প্রচারের নামে হাতিয়ার করেছে তারা একাধিক ‘কুৎসা বিজ্ঞাপন’।
খবরকাগজ এবং অন্য মিডিয়ায় প্রকাশিত বিজেপির আপত্তিকর বিজ্ঞাপনের প্রতি তৃণমূল নেতৃত্ব প্রথমে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বাংলার শাসক দলের দাবি ছিল, ওই বিজ্ঞাপনে নির্বাচনের আদর্শ বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে। কিন্তু কমিশন কোনোরকম পদক্ষেপ না-করায় শেষমেশ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় তৃণমূল। ২০ মে সেই আবেদনে সাড়া দেয় উচ্চ আদালত। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দেয়, বিজেপি এই ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে না। কমিশনের নীরবতাকেও তুলোধনা করে হাইকোর্ট। এরপর উচ্চ ন্যায়ালয়ের ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েও মুখ রক্ষা হয়নি বিজেপির। শেষমেশ শেষদফা ভোটের আগে, একই ইস্যুতে শীর্ষ আদালতেও রামধাক্কা খেল মোদির পার্টি। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল তাদের। শুনানিতে বিচারপতি মাহেশ্বরী এবং বিচারপতি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ সাফ সাফ জানায়, বিজ্ঞাপন দুটি অত্যন্ত অপমানজনক। তাই বিজেপির আবেদনে সাড়া না দিয়ে প্রায় পত্রপাঠ খারিজ করে দেওয়া হল। সুপ্রিম বেঞ্চ বলে দিল, ‘এই মামলায় আমরা কোনও হস্তক্ষেপ করছি না।’ পর্যবেক্ষণে বিচারপতি বিশ্বনাথন বলেন, ‘বিজ্ঞাপনটি আমরা দেখেছি, অত্যন্ত অপমানজনক। আপনারা নিজেদের সেরা বলে দাবি করতেই পারেন, কিন্তু তা অন্যকে আক্রমণ করে নয়। আপনাদের মধ্যে বিদ্বেষ বাড়তে পারে, এমন কাজ কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।’ বিরোধী মানেই শত্রু নয়, বিজেপিকে সে-কথাও মনে করিয়ে দিয়ে বিচারপতি আরও বলেন, ‘এই বিজ্ঞাপনটি আপনাদের সাহায্য করতে পারে, কিন্তু ভোটারদের কোনও স্বার্থসিদ্ধি করবে না। বরং বিতর্ক আরও বাড়াবে। তাই আমরা এই মামলায় হস্তক্ষেপ করছি না।’ কোনও সন্দেহ নেই, মানুষের সার্টিফিকেটের তোয়াক্কা না-করারই পরিণাম এই ভর্ৎসনা। রাজনীতি মানুষের মানুষের মতামতের উপর আস্থা যত হারাতে থাকবে, এই ভয়াবহ ‘নার্সিসিজিম’ তত গ্রাস করবে তাকে। তাই গণতন্ত্রের সুস্থতার স্বার্থে এই ঘটনা থেকে সব দলেরই শিক্ষাগ্রহণ জরুরি।