অর্থকড়ি প্রাপ্তির যোগটি বিশেষ শুভ। কর্ম সাফল্য ও চিন্তার অবসান। দেবারাধনায় মন। ... বিশদ
সব জেনেবুঝেও চৈতন্য ফেরেনি বঙ্গে একুশে রামধাক্কা খাওয়া বিজেপির। চলতি সাধারণ নির্বাচনে বাংলার শাসক দলকে ‘ম্যালাইন’ করার বদ মতলবে ‘কুৎসা-বিজ্ঞাপন’ প্রচারে অগ্রাধিকার দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর দল। তা দেখে গোড়াতেই ভুরু কুঁচকেছিল নাগরিক সমাজ। তাদের মনে প্রশ্ন জেগেছিল, রাজনৈতিক স্বাধীনতার নামে ভোট চলাকালে কোনও দল কি এই ভাষায় তার প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে পারে? এই জিনিস গণতন্ত্রের অপব্যবহার নয় কি? নির্বাচনের আদর্শ আচরণ বিধি কি এই অনাচার অনুমোদন করে? তাহলে দেশজুড়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ‘শাসন’ বলবৎ থাকাকালে একটি দল স্রেফ কেন্দ্রীয় ক্ষমতার আস্ফালন প্রদর্শনে এই অন্যায় কী করে চালিয়ে যাচ্ছে? মে মাসে চারদিন বিভিন্ন খবরকাগজে বিজেপির তরফে দেওয়া ওই বিতর্কিত বিজ্ঞাপনের প্রতি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তৃণমূল কংগ্রেস। ওই মামলাতেই কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, বিজেপি সংবাদমাধ্যমে আর কোনও ‘কুৎসা-বিজ্ঞাপন’ দিতে পারবে না। জারি হল আইনি নিষেধাজ্ঞা। প্রধানমন্ত্রীর দলের বিতর্কিত নির্বাচনী বিজ্ঞাপনের উপর সোমবার অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছে তারা। উচ্চ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘিত হতে পারে, এমন বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না পদ্মপার্টি।
এই ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকেও একহাত নিয়েছে আদালত। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘বিজ্ঞাপন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগের ভিত্তিতে অনেক আগেই পদক্ষেপ করা উচিত ছিল কমিশনের।’ ভোট চলাকালে আদালতের এই তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণে নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক সংস্থার ‘নিরপেক্ষতা’ও প্রশ্নের মুখে পড়ল বইকি! বিজেপির কুৎসামূলক বিজ্ঞাপনের প্রতি তৃণমূল প্রথমেই কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কিন্তু কমিশন কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে তৃণমূলের অভিযোগ। স্বভাবতই গুরুতর বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায় মমতা-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। সোমবার বিচারপতি ভট্টাচার্যের সিঙ্গল বেঞ্চে শুনানি হয়। তৃণমূলের আইনজীবী দাবি করেন, ওই বিজ্ঞাপনে রাজ্য সরকারকে যেভাবে ‘সনাতন বিরোধী’ দেগে দেওয়া হয়েছে, আইনে তার অনুমোদন নেই। তাঁর আশঙ্কা, এই ঘটনা মানুষের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাঁর দাবি, বিজ্ঞাপনে রাজ্য সরকারকে যেভাবে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলা হয়েছে তা শুধু বিভ্রান্তিকরই নয়, অবমাননামূলকও। কমিশন অবশ্য আদালতে সাফাই দিয়েছে, তৃণমূলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তারা ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছে, শো-কজের নোটিস পাঠিয়েছে বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে। সবশেষে বিচারপতির কড়া পর্যবেক্ষণ এইরকম, এতে শুধু আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গ হচ্ছে না, বিষয়টি সংবিধানের ১৯ ও ২১ ধারারও পরিপন্থী। তাঁর নির্দেশ, ৪ জুন অর্থাৎ ভোটের ফল প্রকাশের দিন পর্যন্ত ওই ‘আনভেরিফায়েড’ বিজ্ঞাপনটি আর কোনও মিডিয়ায় প্রকাশ করা যাবে না। আদালতের এই অবস্থান প্রশংসার দাবি রাখে। মেরুকরণ এবং ঘৃণার বেসাতিতে দড় বিজেপিকে নীতিশিক্ষা দিতে যাওয়াটা অর্থহীন। কমিশনেরই উচিত ছিল, গোড়াতেই স্বতঃপ্রণোদিত অবস্থান গ্রহণ। কারও অভিযোগ পাওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবে কেন? শুধুই কি কুৎসা-বিজ্ঞাপন! নির্বাচনী প্রচার সভাগুলিরও অসংযত ব্যবহার শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের মন খারাপ করে দিচ্ছে যে! কমিশন কি চোখ কান খুলে না-রেখেই নির্বাচন পরিচালনার মতো গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে? এই ‘সংস্কৃতি’ বন্ধ হওয়ার উপরেই নির্ভর করছে, ভারতে নির্বাচনই গণতন্ত্রের বৃহত্তম উৎসব আর থাকবে কি না।