অর্থকড়ি প্রাপ্তির যোগটি বিশেষ শুভ। কর্ম সাফল্য ও চিন্তার অবসান। দেবারাধনায় মন। ... বিশদ
রাজ্যে পালাবদলের পর সিপিএম ও কংগ্রেসের বহু গড়ের পতন ঘটেছে। কংগ্রেসের গড় বলতে একমাত্র টিকে ছিল বহরমপুর। টানা পাঁচবার সাংসদ হয়ে ‘রবিনহুড’ মেজাজে গোটা মুর্শিদাবাদ জেলায় শাসন করতেন অধীররঞ্জন চৌধুরী। তাঁকে ঘিরে একটা ‘মিথ’ও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। অধীরকে হারানোর সাধ্যি নেই কারও। সেই ‘মিথ’ এবার ভেঙে দিয়েছেন মমতার ‘মাস্টারস্ট্রোক’। রাজনৈতিক মহলকে অবাক করে বহরমপুরে প্রার্থী করেন ক্রিকেট তারকা ইউসুফ পাঠানকে। অচেনা-অজানা পিচে ছক্কা হাঁকিয়ে দিদির মান রেখেছেন তিনি। একইভাবে আর এক প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদকে মমতা বাজি ধরেছিলেনবর্ধমান-দুর্গাপুর ছিনিয়ে আনতে। সেখানেও তাঁর এই কৌশল সফল। বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী দিলীপ ঘোষকে লক্ষাধিক ভোটে পরাজিত করেছেন কীর্তি।
দক্ষিণবঙ্গে আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বাম-কংগ্রেসের জোটকেও কার্যত অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়েছে তৃণমূল। মুর্শিদাবাদ ছিল জোটের মূল আঁতুড়ঘর। একুশের বিধানসভা ভোটে ‘সাঘরদিঘি মডেল’ নিয়ে শুরু। পরে পঞ্চায়েত হয়ে লোকসভা ভোট। জোটের মূল কারিগরও প্রার্থী হয়েছিলেন এই জেলা থেকে। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে সিপিএমের মহম্মদ সেলিম। বহরমপুরে অধীর। ভগবানগোলা বিধানসভার উপনির্বাচনেও লড়াই করেছে জোট বেঁধে। দু’জনেই হাত ধরাধরি করে প্রচার করেছেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। জোটের সব সমীকরণ ওলট-পালট করে দিয়েছে মমতা-ঝড়। স্বভাবতই এখন বড় প্রশ্নের মুখে জোট-ভবিষ্যৎ!
ফলাফল ঘোষণার পর কথা হচ্ছিল মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের জয়ী প্রার্থী আবু তাহের খানের সঙ্গে। জয়ের কারণ হিসেবে তিনি বলছিলেন, ‘সিপিএম এই জেলায় কংগ্রেস কর্মীদের উপর কম অত্যাচার করেনি। বহু কংগ্রেস কর্মী শহিদ হয়েছেন। সেই সিপিএমের সঙ্গেই অধীর চৌধুরী হাত মিলিয়েছিলেন। জেলার মানুষ ওঁদের এই সখ্য মানতে চাননি। তাই আমার জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল।’ বর্ধমান-দুর্গাপুরের কীর্তির জয়ের সমীকরণ অবশ্য আলাদা। কীর্তি নিজেই বলেছেন, ‘বিজেপির ঔদ্ধত্য, অহং মানুষ ভালোভাবে নেননি।’
বীরভূমের ‘বেতাজ বাদশা’ বলে পরিচত অনুব্রত মণ্ডল তিহার জেলে বন্দি। বিজেপি তাঁর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে অন্তত একটি আসনে তৃণমূলের থেকে ছিনিয়ে নিতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে তারা। বীরভূম ও বোলপুর ফের দখলে রেখেছে তৃণমূল। বর্ধমান পূর্বে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই রাজনীতিতে আনকোরা চিকিৎসক শর্মিলা সরকারকে বাজি ধরেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। বাজিতে জিত। দিল্লি যাচ্ছেন ‘ডাক্তার দিদি’। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদি-ম্যাজিকে পদ্মচাষ বেড়েছিল বাঁকুড়া জেলায়। সেখানে এবার মোদি-মাহাত্ম্য খুব একটা কাজ করেনি। বাঁকুড়া কেন্দ্র পুনরুদ্ধার করে তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তী। বিষ্ণুপুরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে হারতে হয় সুজাতা মণ্ডলকে। আরামবাগেও চমকপ্রদ ফল করেন তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগ। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে শেষ হাসি হাসলেন তিনি।
সবমিলিয়ে দক্ষিণবঙ্গ বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতিকে উড়িয়ে আস্থা রাখল সম্প্রীতিতেই। ভরসা খুঁজে পেল মমতাতেই।