অর্থকড়ি প্রাপ্তির যোগটি বিশেষ শুভ। কর্ম সাফল্য ও চিন্তার অবসান। দেবারাধনায় মন। ... বিশদ
এবছর নির্বাচনী খরচের সীমা বেঁধে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাতে প্রতি লোকসভা কেন্দ্রের জন্য সর্বাধিক এক কোটি টাকা খরচের অনুমতি দেওয়া হয়েছে একজন প্রার্থীকে। শাসকদলের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ থেকে ২০২২-২৩ সালের নির্বাচন পর্যন্ত দলের মোট খরচ হয়েছে ৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। যদিও সিএমএস-এর দাবি, শুধু ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেই মোদির দল খরচ করেছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। বিজেপির এক সর্বভারতীয় নেতা জানিয়েছেন, দেশের ২৯০টি জেলায় ইতিমধ্যে দলের জেলা অফিস তৈরি হয়েছে, আরও ৯০০টি জেলা অফিস (এক জেলায় একাধিক জেলা অফিস) তৈরির প্রস্তুতি চলছে। এছাড়াও রয়েছে প্রচুর জমি বাড়ি। এইসব সম্পত্তি শুধু রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই ২০২৩ সালে বিজেপিকে খরচ করতে হয়েছে ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এবার আয়ের হিসেবের দিকে একটু নজর ফেরানো যাক। মোদি জমানার শুরুতে ২০১৪-১৫-তে দলের আয় ছিল ৯৭০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯-এ তা বেড়ে হয় ২ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। তার ঠিক পরের বছরই আয় আরও বেড়ে হয় ৩ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা। আগে দিল্লির অশোকা রোডে ছিল বিজেপির সদর দপ্তর। ২০২১ সালে সদর দপ্তরের ঠিকানা বদলে যায়। বর্তমানে দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে, এক লক্ষ ৭০ হাজার বর্গফুট এলাকাজুড়ে প্রাসাদোপম দলীয় কার্যালয় তৈরি হয়েছে। দিল্লি ছাড়া বিভিন্ন রাজ্যেও এই দলের রাজ্য দপ্তর তৈরি হয়েছে। যেমন অসমে এক লক্ষ বর্গফুট এলাকাজুড়ে সদর দপ্তর তৈরি হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের ভোপালে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে সদর দপ্তর। হাস্যকর হল, তামিলনাড়ুতে বিজেপির একটিও জেতা লোকসভা আসন না থাকলেও পাঁচতলা রাজ্যদপ্তর তৈরি হয়েছে। আবার বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়ের মাঝে কৃষ্ণগিরি জেলায় গত বছর উদ্বোধন হয়েছে নতুন রাজ্যভবন। ভবন তৈরি হয়েছে ওড়িশাতেও। অফিস-বাড়ির নামে রাজ্যে রাজ্যে এই বিপুল সম্পদ তৈরির সব হিসাব অবশ্য এখনও জানা যায়নি। তবে মানুষ ভুলে যায়নি নোটবন্দির সেই দুর্ভোগের দিনগুলিতে শাসকদলের অনেকের জমি-বাড়ি সম্পদ কিনে রাতারাতি ফুলেফেঁপে ওঠার ঘটনা।
মাত্র দশ বছরে এই বিপুল ধন সম্পদ করায়ত্ত করেছে যে শাসকদল, তাদের আমলে দেশের মানুষ কেমন আছেন? মোদির ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-এর প্রকৃত হাল কী? ‘ফকির’ থেকে ‘ঈশ্বরের দূত’ হয়ে ওঠা, গরিবের মনের ব্যথা বুঝতে পারা প্রধানমন্ত্রী কাদের স্বার্থ দেখেছেন? প্যারিস স্কুল অব ইকনমিক্স ‘ওয়ার্ল্ড ইন ইকুয়ালিটি ল্যাব’-এ গবেষণারত একদল প্রথম সারির অর্থনীতিবিদের মতে, মোদি জমানায় আর্থিক অসাম্য ভারতে ব্রিটিশ জমানাকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে। তাঁদের মতে, ভারতে এখন আধুনিক বুর্জোয়া শ্রেণি’র নেতৃত্বে ধনকুবেরদের রাজত্ব চলছে। তাঁদের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভারতের মোট সম্পদের ৪০ শতাংশ রয়েছে এক শতাংশ ব্যক্তির হাতে। দেশের মোট আয়ে তাদের ভাগ ২২ শতাংশের বেশি। আয়ের বিচারে পিছনের দিকে থাকা অর্ধেক মানুষের আয় মোট আয়ের ১৯ শতাংশ। বিত্তের বিচারে দেশের এক শতাংশ মানুষের আয় বছরে ৫৩ লক্ষ টাকা। আর সবচেয়ে ধনী ১০ হাজার ব্যক্তির গড় আয় বছরে ৪৮ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি ওই নীচের দিকে থাকা ৫০ শতাংশের গড় আয় বছরে মাত্র ৭১ হাজার টাকা। শুধু প্যারিসের এই সংস্থাই নয়, অক্সফ্যাম সহ আরও কয়েকটি সংস্থার মূল্যায়নও প্রায় একই। মোদিবাহিনীর অবশ্য এসব নিয়ে কিছু আসে যায় না! কারণ, তারা ওই বাংলা গানের লাইনের মতো নিজেরটা নিজেদের মতো গুছিয়ে নিয়েছে।