অর্থকড়ি প্রাপ্তির যোগটি বিশেষ শুভ। কর্ম সাফল্য ও চিন্তার অবসান। দেবারাধনায় মন। ... বিশদ
প্রকল্প রূপায়ণের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালে করেও সাফল্যের ধারেকাছেও কি পৌঁছনো গিয়েছে?
এই প্রশ্নচিহ্নটি আকারে বিরাট! যে-প্রকল্পের গোড়ায় গলদ, তাতে সাফল্যলাভের ভাবনা কতটা বাস্তবসম্মত? উত্তর কারও অজানা নয়। ব্যর্থতার অন্য বড় কারণটি নিঃসন্দেহে, সরকার পরিচালনার ভিত্তি—বর্ধিত রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা, বিরোধী দল বা জোটের সরকারগুলিকে অপদস্থ করার ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র। পাছে তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস, ডিএমকে, বিআরএস, আপ প্রভৃতি দল ‘মাইলেজ’ পেয়ে যায়, এই আতঙ্কে ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ সরকার পরিচালিত রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দে নানাভাবে বঞ্চনা করা হয়েছে। এই তালিকায় শীর্ষস্থানীয় রাজ্যটির নাম পশ্চিমবঙ্গ, যেখানে টানা তিন দফায় বিশেষ দক্ষতা ও জনপ্রিয়তার সঙ্গে সরকার পরিচালনা করছেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একুশের ভোটে যেকোনও প্রকারে নবান্ন দখলের খোয়াব দেখেছিল মোদি-শাহদের পার্টি, কিন্তু বিজেপির কাজ কারবার থেকে বাংলার বীতশ্রদ্ধ মানুষই তাদের ‘মুখের গ্রাস’ কেড়ে নিয়ে সুন্দরভাবে পরিবেশন করে দিয়েছিল তৃণমূলের পাতে। আর যায় কোথায়, যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা মুহূর্তে জলাঞ্জলি গেল, প্রতিহিংসার রাজনীতি বহুবর্ধিত হল বাংলার জন্য। তিনবছর যাবৎ দেওয়া হল না একশো দিনের কাজের গ্যারান্টি স্কিমের (মনরেগা) টাকা এবং একইসঙ্গে আটকে দেওয়া হল আবাস যোজনার ন্যায্য প্রাপ্যও! দিল্লিওয়ালাদের ‘চোর’ ধরার ফ্লপ নাটকের সৌজন্যে শুধু মনরেগা আর আবাস প্রকল্পেই বাংলার সঙ্গে অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকার বঞ্চনা হয়েছে বলে নবান্নের দাবি। মনরেগায় নষ্ট হয়েছে ৬০-৬৫ কোটি শ্রমদিবস। সোজা কথায়, বাংলার কোটি কোটি গরিব মানুষের সঙ্গে যে বঞ্চনা-প্রতারণা করা হয়েছে, তার পাশে অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে ‘ম্লান’ লাগে!
‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের মাহাত্ম্য বৃদ্ধির এই অন্যায় প্রয়াসে দেশের বিকাশ কতখানি ধ্বংস হল, সেই বোধ বিন্দুমাত্র থাকলে একটি দায়িত্বশীল সরকারের পক্ষে এই ধ্যাষ্টামো করা সম্ভব ছিল না। তারা ভেবেই দেখেনি, জিডিপির বৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস প্রভৃতির উজ্জ্বল খতিয়ান বিরোধী রাজ্যগুলিকে বন্ধনীর বাইরে রেখে কখনোই পাওয়া সম্ভব নয়। তাই গালভরা ‘অমৃতকাল’-এ প্রবেশ করেও পাঁচ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সাইজের অর্থনীতি নির্মাণের স্বপ্ন অধরা এখনও, যদিও এই স্বপ্ন ছুঁয়ে ফেললেও ১৪৪ কোটি ভারতবাসীর মাথাপিছু আয় যে তলানিতে রয়েছে তার চেয়ে আহামরি উপরে উঠত না। যাই হোক, মোদি সরকার দিনে দিনে নিজগুণে প্রমাণ দিয়ে চলেছে, তারা চরম নির্বোধেরও অধম! গেরুয়া সংস্কৃতির নির্বুদ্ধিতারই মাশুল গুনতে হচ্ছে ভারতবাসীকে। ঘৃণার বিস্তার এবং মেরুকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে যখন ঘরে-বাইরে নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে, তখনই ‘উন্নয়ন’ বা ‘সবকা বিকাশ’-এর ঢোলক বাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন মোদিবাবুরা। কিন্তু বছরভর নষ্টামিতে মগ্ন থাকায় যে-উন্নয়ন আদৌ করা হয়নি, প্রচারে তাকে তুলে আনতে হলে মিথ্যার আশ্রয়ের বিকল্প কী! তাই মেট্রোরেল সম্প্রসারণের কাহিনি ফাঁদতে গিয়ে একবার বিদেশের প্রকল্পের ছবি সেঁটে দেওয়া হল বিজ্ঞাপনে। আর ‘আবাস’ যোজনায় ‘সাফল্যের’ বিজ্ঞাপনে একুশের ভোটের আগে এমন এক মহিলার ছবি ছাপা হল, যিনি এখনও বাস্তবে গৃহহীন! অথচ ‘আত্মনির্ভর ভারত, আত্মনির্ভর বাংলা, আমি পেয়েছি নিজের ঘর’ বিজ্ঞাপনের মুখ ছিলেন তিনি! সেই বিজ্ঞাপনের ট্যাগলাইন পাল্টে হয়েছে এখন ‘মোদির গ্যারান্টি’—‘মধ্যবিত্তের সেবা, মধ্যবিত্তের নিজের বাড়ির স্বপ্ন হবে সত্যি’। মধ্য কলকাতার ওই দরিদ্র সাফাই কর্মী থাকেন এক চিলতে ভাড়ার ঘরে। বড় পরিবার। সবার জায়গা সেখানে হয় না। কারও কারও রাত কাটে ‘গ্যারান্টিসহকারে’ ফুটপাতে এখনও।