অর্থকড়ি প্রাপ্তির যোগটি বিশেষ শুভ। কর্ম সাফল্য ও চিন্তার অবসান। দেবারাধনায় মন। ... বিশদ
মালাকরেরই দশা হতে পারে অন্য ব্যক্তিদেরও, যাঁদের জীবনের মূলধন শব্দ, বাক্য, ভাষা প্রভৃতি। তাঁরা অভিভাবক বা নেতা গোত্রভুক্ত হলে তো কথাই নেই, তাঁদের সতর্ক থাকতে হবে সবচেয়ে বেশি। কারণ তাঁদের ভাবনাচিন্তা নিমেষে অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। কিন্তু ভারতের রাজনীতির দুর্ভাগ্য এই যে, এদেশের কিছু নেতার মুখ আর নর্দমায় ফারাক নেই। তাঁরা কুভাষার ব্যবহারে বেশ স্বচ্ছন্দ! এমনকী সেসব শুনে কিছু মানুষ হাততালি দিয়ে তাঁদের উৎসাহও বাড়ায়। অনুরাগী ও ক্যাডাররা তাঁদের নকল করে এলাকায় দাপাবার হিম্মত পায়। শীর্ষ নেতৃত্ব ভালো হলে অবশ্য এই জিনিস বন্ধ করা সহজ—অসভ্য ক্যাডার বা নেতাদের চিহ্নিত করে সাসপেন্ড, নিদেন পক্ষে সতর্ক ও ভর্ৎসনা করলে তারা হাতির পাঁচ-পা দেখা বন্ধ করবে, সমঝে যাবে বাকিরাও। কিন্তু এদেশে অন্তত ইদানীং এমন দৃষ্টান্ত বিরলপ্রায়—বরং গরম গরম ভাষণে মেঠো মঞ্চ চাঙ্গা করিয়েদের মারাত্মক কদর নেতৃত্বের কাছেও। গোটা সমাজ তাদের ধিক্কারে মুখর হলেও নেতৃত্ব সেসব আমল দিতে নারাজ, উল্টে অভিযুক্তদেরই পক্ষ নিয়ে চাবুক ওকালতি করে, যা পরিষ্কার গাজোয়ারি। অপশব্দ এবং কুবাক্যের লক্ষ্য নানা স্থানে নানারকম—কোথাও নারী, কোথাও জাতি/বর্ণ বা ধর্ম, কোথাও-বা মানুষের ভাষা ও প্রাদেশিক পরিচয় এবং দৈহিক বিবরণ! ফলে এই ধরনের বৈরিতা অনেক ক্ষেত্রেই ঘৃণা, বিভাজন ও অশান্তি সৃষ্টির রাজনীতিকে মদত দেয় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণ হয়ে ওঠে। ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সাধারণভাবে রাজ্যের এক্তিয়ারে। তবে দেশ যখন সাধারণ নির্বাচনের আবহে প্রবেশ করে, তখন গুরুদায়িত্বটি ন্যস্ত হয় জাতীয় নির্বাচন কমিশনের উপর। ভোট প্রচারকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়াটা এদেশে একটি চেনা ছবি। তখন প্রতিপক্ষকে বাক্যবাণে বিদ্ধ করাই সব দলের কৌশল।
কিন্তু সেই বাগযুদ্ধ যাতে কোনোভাবেই অপ্রীতিকর না-হয়ে ওঠে, তা খেয়াল রাখার দায়িত্ব সব দলের। পাশাপাশি, জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে দক্ষ ‘রেফারি’র ভূমিকায় প্রত্যাশা করে গণতন্ত্র। শব্দ বা বাক্য ব্যবহারে কেউ শালীনতার সীমা ছাড়ালে কমিশনের উচিত, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাকে সতর্ক করা এবং প্রয়োজনে কঠোর পদেক্ষপ। তবে এই ভূমিকায় কমিশনের নিরপেক্ষতা এবং স্বচ্ছতা কাম্য। অভিযুক্ত ব্যক্তি কোনও বড় দলের শীর্ষ নেতা, মুখ্যমন্ত্রী, ওজনদার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, এমনকী দেশের প্রধানমন্ত্রী হলে তাদের চুপসে যাওয়া চলে না। উচিত কাজটি যথাসময়ে জোরের সঙ্গে করার জন্য এই স্বশাসিত সংস্থাকে দেশের সংবিধান যথেষ্ট ক্ষমতা ও স্বাধীনতা দিয়েছে। কমিশনের শীর্ষকর্তা আপসকামী ব্যক্তি না-হলে এই দায়িত্ব কীভাবে পালন করতে হয় তা দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন টি এন সেশন। সামনে এত মহৎ দৃষ্টান্ত থাকার পরেও কমিশনের আজকের ভূমিকা কোনোভাবেই প্রশ্নাতীত নয়। তার বড় প্রমাণ—একই নেতারা শব্দচয়নে, বাক্য ব্যবহারে একই ভুল বারবার করে চলেছেন, এমনকী সেসব শালীনতারও সীমা অতিক্রম করছে কখনও। এই ব্যাপারে সবার আগে আসে নরেন্দ্র মোদির নাম। বিরোধীদের লক্ষ্য করে দেশের প্রধানমন্ত্রী ‘মুজরা’ শব্দটিও ব্যবহার করলেন অবশেষে! তিনি কি জানেন না, অপশব্দটি কী বিষয়ক? বিরোধীদের কোনও চাল বা কৌশলে তিনি ক্ষুব্ধ, এমনকী ভয়ানক ক্রুদ্ধও হতে পারেন, তাই বলে এমন শব্দে জব্দ করতে চাইবেন প্রতিপক্ষকে, যা সুশীল সমাজে নিষিদ্ধ! ভোটপ্রচার শেষ হওয়ার আগেই শব্দভাণ্ডার নিঃশেষিত তাঁর! তাহলে মোদির অনুগামীরা যে এবার যথেচ্ছাচারে লিপ্ত হবে। নিন্দনীয় শব্দটি এখনই প্রত্যাহারসহ জনসমক্ষে ক্ষমাপ্রার্থনা করা উচিত প্রধানমন্ত্রীর।