বিদ্যার্থীরা মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
মিশ্র অর্থনীতির অনুশীলন থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে মরিয়া ভারত গত শতকের নব্বইয়ের দশকে উদারীকরণ, বিশ্বায়ন ও বেসরকারিকরণের পথে পা বাড়ায়। অর্থনীতির পণ্ডিতদের মতে, গত শতকের ষাটের দশকের মাঝামাঝি দেশজুড়ে আর্থিক সঙ্কট এবং ১৯৯১-এর তীব্র বাণিজ্য ঘাটতি থেকে শিক্ষা নিয়েই ভারতের অর্থ-বাণিজ্য-বিদেশ নীতির নয়া উড়ান শুরু হয়। ১৯৯১ সালে নরসিমা রাওয়ের অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিং তাঁর প্রথম নিও-লিবারাল বাজেট পেশ করতে গিয়ে ভিক্টর হুগোকে উদ্ধৃত করলেন, ‘যে-চিন্তার সময় উপস্থিত হয়েছে, পৃথিবীর কোনও শক্তিই তাকে রুখতে পারে না।’ ভারতের বাজার সেদিনই সারা পৃথিবীর সামনে উন্মুক্ত হল। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মনমোহন খোলাবাজার অর্থনীতির পরীক্ষা-নিরীক্ষা আরও বিশদে করার মওকা পেয়েছিলেন। তাতে দেশ বিকিয়ে যাচ্ছে, দেশের অর্থনীতি রসাতলে যাচ্ছে বলে একযোগে চিলচিৎকার জুড়েছিল বামেরা এবং বিজেপি। ২০১৪ সালে লোকসভার ভোটের প্রচারে বেরিয়ে বিজেপির মুখ নরেন্দ্র মোদি বামেদের সহস্রগুণ ছাপিয়ে গেলেন ‘মনমোহিনী অর্থনীতি’র বিরোধিতায়। মুহুর্মুহু তর্জনী উঁচিয়ে মোদি সেদিন নেহরু-গান্ধী পরিবারেরও তুলোধোনা করেন। তাঁর মোদ্দা অভিযোগ ছিল, শিল্প-অর্থনীতি-বিদেশ নীতিতে ভারত যে এতটা পিছিয়ে তার জন্য এক ও একমাত্র দায়ী নেহরু-গান্ধী পরিবার। বেকারত্ব বৃদ্ধি রুখতে ভারতের সীমাহীন ব্যর্থতার জন্য মোদি দায়ী করেন বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের হাতের পুতুল মনমোহনের অর্থনীতিকে। এর বিপরীতে মোদি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার সারার্থ এটাই দাঁড়ায় যে, ভারতের শাসনক্ষমতা একটিবার পেলেই তিনি জাস্ট ম্যাজিক দেখাবেন। তাঁর জাদু কথা বলবে, স্বদেশিয়ানা এবং আত্মনির্ভরতার শক্তিকে পাথেয় করে।
সাত বছরের বেশি হল, নরেন্দ্র মোদিই ভারতেশ্বর। তাঁর জমানায় দেশবাসীর প্রাপ্তির সারসংক্ষেপের নাম ‘তীব্র যন্ত্রণা’। যে-নীতিতে মোদির নেতৃত্ব দেশকে এই নরকে ঠেলে দিয়েছে তার মধ্যে স্বদেশিয়ানা এবং আত্মনির্ভরতার চিহ্নমাত্র নেই। বরং মোদির পার্টি একহাতে কুসংস্কার আর অন্যহাতে চরম উগ্র মার্কিন অর্থনীতি আঁকড়ে রয়েছে। মোদির অর্থনীতির চরম লক্ষ্য হল, শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যকে সম্পূর্ণরূপে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাওয়া। এই সরকার সবটাই ছেড়ে দেবে বেসরকারি পুঁজির হাতে। ফলে, মানুষের কর্মসংস্থানের কোনও দায় আর সরকার নেবে না। এমনকী, পুরো অর্থনীতি রসাতলে গেলেও সরকার হাত ধুয়ে ফেলতে লজ্জিত হবে না। উদার অর্থনীতি গ্রহণের পর যেটুকু বেঁচে আছে সেটুকুও চৌপাট করে দিতে বদ্ধপরিকর এই সরকার। ব্যাঙ্ক, বিমা প্রভৃতির উপর রাষ্ট্রের রাশ এই আমলে অনেক বেশি আলগা হয়েছে। সরকার বাকিটাও তুলে দেবে বিলগ্নিকরণে চূড়ান্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে। এজন্য সামান্য বাধা ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা মন্ত্রক এবং ডিপার্টমেন্ট অফ পাবলিক এন্টারপ্রাইজেস (ডিপিই)। মঙ্গলবার সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, ডিপিই এবার থেকে অর্থমন্ত্রকের অধীনে এল। ডিপিই হল অর্থমন্ত্রকের অধীন ষষ্ঠ দপ্তর। পরিষ্কার যে, কেন্দ্রীয় বাজেটে বিলগ্নিকরণের মাধ্যমে ২০২১-২২ সালে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের যে ঘোষণা নির্মলা সীতারামন করেছিলেন ডিপিই নিয়ে নয়া পদক্ষেপ তারই অঙ্গ। এরফলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি বেচে দেওয়া অনেক সহজ হয়ে গেল। এবার থেকে এসব হবে আরও খুল্লাম খুল্লা এবং চটজলদি। সোজা কথায়, মোদি স্বদেশির নামে ক্ষমতা দখল করে মনমোহিনী অর্থনীতিরই অর্চনা করে যাচ্ছেন। হয়তো মনমোহন যেটা করতে কুণ্ঠিত হতেন, সেটারও চূড়ান্ত করে দেখালেন মোদি।