বিদ্যার্থীরা মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
২০০৮-০৯ সালেও গৃহস্থ বাড়িতে এলপিজি কানেকশনের সংখ্যা ছিল সাড়ে ১০ কোটির কিছু বেশি। ২০১৮-১৯ সালে সেটা বেড়ে ২৬ কোটির বেশি হয়। তার মধ্যে প্রায় ৪ কোটি কানেকশন ছিল নিষ্ক্রিয়। অর্থাৎ কানেকশন নিয়েও বিশাল সংখ্যক পরিবার গ্যাস ব্যবহার করে না। আরও পরিষ্কার করে বলা যায়, তারা মূলত আর্থিক কারণে গ্যাসে রান্না করতে পারে না। কোনও সন্দেহ নেই এই চিত্রটা মূলত শহরের। তবু মোদি সরকার মনে করে, প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার কল্যাণে এলপিজির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। ৩ ফেব্রুয়ারি পেট্রলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান রাজ্যসভায় দাবি করেন, ২০২১-র ১ জানুয়ারির হিসেবে দেশের ৯৯.৫ শতাংশ পরিবারে এলপিজি-র সুবিধা পৌঁছে গিয়েছে। সারা দেশে ডোমেস্টিক এলপিজি কানেকশনের সংখ্যা এখন ২৮ কোটি ৯০ লক্ষ। অন্যদিকে, ২০২১-২২ সালের বাজেট ঘোষণায় সরকার আরও জানায়, ১০০ জেলায় আরও ১ কোটি নতুন কানেকশন দেওয়া হবে। সরকারের ভাবখানা এই, এরপর সারা দেশে কাঠ-ঘুঁটে-শুকনো-পাতালতা জ্বেলে রান্নার পাঠ চুকে যাবে। মহিলাদের দুর্দশার চির অবসান ঘটিয়ে ছাড়ছেন নরেন্দ্র মোদি। সত্যি কি তাই? নতুন ১ কোটি কানেকশন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এখনও কাগজে-কলমেই। ব্যাপারটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গরজই দেখা যাচ্ছে না। বরং, ২০১৬ সাল থেকে এ-পর্যন্ত উজ্জ্বলা যোজনায় যত কানেকশন দেওয়া হয়েছে (৭ কোটি ১৯ লক্ষাধিক) বলে সরকারের দাবি, তারও একটা বড় অংশ ইতিমধ্যেই নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে।
লম্বা চওড়া তথ্য ও দাবি এটাই প্রমাণ করে যে, এই সরকারের সঙ্গে দেশের যোগাযোগ ও সম্পর্ক অতি ক্ষীণ। এখনও কয়েক লক্ষ পরিবার রয়েছে যারা রান্নার গ্যাস নামক বস্তুটি চেনেই না। আবার চিনেও কানেকশন নেওয়ার সাহস পায় না বহু পরিবার। কারণ, তাদের চেনা অনেক পরিবার কানেকশন নিয়েও গ্যাস ব্যবহার করছে না। গ্যাস ওভেনটা অনেক রান্নাঘরের শোভাবর্ধন করে মাত্র, শোপিসের মতোই। সিলিন্ডারের নিত্য দামবৃদ্ধির কারণে বহু পরিবার গ্যাসের ব্যবহার ছেড়েই দিয়েছে। তারা আবার ফিরে গিয়েছে ধোঁয়ার মধ্যে রান্নার পুরনো পরিবেশে। কেরোসিনে রান্নার অবস্থাও অনেকের নেই। ভর্তুকি প্রায় উঠে গিয়েছে। রেশনে সাপ্লাইও যৎসামান্য। খোলা বাজার থেকেও কেনার ক্ষমতা নেই তাদের। অতএব যা হওয়ার সেটাই হচ্ছে। এই অবস্থায়, মূল প্রশ্ন একটাই—সরকার কি নিজের ঢাক পেটানোর বাইরে বেরতে আন্তরিক? তাহলে বাস্তবের মাটিতে পা রাখতে হবে সরকারকে। জানতে হবে, দেশের কত পরিবার, এই মহামারী পরিস্থিতিতে কেমন দুর্দশায় রয়েছে। গ্যাসের দাম কমাতে হবে। সাধারণের সাধ্যের মধ্যে রাখতে হবে সিলিন্ডারের দাম। দারিদ্রসীমার নীচের মানুষকে গ্যাস দিতে হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। সরকার যেন ভুলে না যায় ইউএনডিপির পরামর্শ, গৃহস্থের রান্নাঘরে গ্যাসের প্রবেশের সঙ্গে দারিদ্র মোচনের সম্পর্কটি ওতপ্রোত।