বিদ্যার্থীরা মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
এই হিসেবে কৃষির বাড়তি কদর প্রাপ্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, দেশের সরকার কৃষি ও কৃষকের প্রাপ্য প্রদানে কুণ্ঠিত। অন্তত পশ্চিমবঙ্গে এই ট্র্যাডিশন ভাঙতে সচেষ্ট রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কৃষিনির্ভর ভারতের মধ্যে সুজলা সুফলা বাংলার গুরুত্ব সবসময়ই আলাদা। এখানে চাষির সংখ্যা ৭১ লক্ষাধিক। কিন্তু পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের শেষদিকে কৃষি ও কৃষক শ্রেণির প্রাপ্য মর্যাদা প্রত্যাখ্যাত হয়। কৃষির সঙ্গে যুক্ত নাগরিকদের আয়বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমান সরকার অনেকগুলি পরিকল্পনা নিয়েছে। তার মধ্যে একটি হল, ধানসহ কৃষিপণ্যের ন্যায্য দামের ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ চাষাবাদ করে কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না-হন সেটা নিশ্চিত করার ব্যাপারে রাজ্য সরকার যথেষ্ট আন্তরিক। এজন্য রবি ও খরিফ দু’টি মরশুমেই সরকার সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে (এমএসপি) ধান কিনে থাকে। ধান ক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে ধানের সংগ্রহ যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজে বৈঠক করেন, খাদ্যমন্ত্রী ও অফিসারদের নিয়ে। ফড়েরাজ ঠেকাতে বিশেষ নজরদারিও চালু করেছে রাজ্য। খাদ্যদপ্তরের ভিজিল্যান্স বিভাগ সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসনও রয়েছে সজাগ। যার ফলে গত মরশুমে ২০ লক্ষাধিক চাষি বিশেষভাবে উপকৃত হন। তাঁরা এমএসপিতে ধান বিক্রির সুযোগ পান। উপকৃত চাষির সংখ্যাটা এবার বেড়ে ২২ লক্ষ হতে পারে। গত মরশুমে রাজ্য সরকার প্রায় ৫০ লক্ষ টন ধান কিনেছিল। এটা সর্বকালীন রেকর্ড। গত মরশুমে চাষিরা ধান বেচে ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি পেয়েছিলেন। চলতি মরশুমে ইতিমধ্যেই প্রায় ৪০ লক্ষ টন ধান কেনা হয়ে গিয়েছে। তাতে চাষিদের ঘরে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা ঢুকেছে। পশ্চিমবঙ্গের গণবণ্টন বা রেশন ব্যবস্থা দেশের মধ্যে অন্যতম সেরা। এখানে ১০ কোটির অধিক রেশন গ্রাহক। কৃষকস্বার্থ রক্ষাসহ কৃষির উন্নয়নের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এই সিস্টেমকে যেভাবে যুক্ত করেছেন তা প্রশংসাযোগ্য।
কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনে চাল তৈরির ব্যবস্থা হয় মূলত রেশন ব্যবস্থাকে চাঙ্গা রাখার জন্য। পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্য খাদ্যশস্যের বিকেন্দ্রিত সংগ্রহ ব্যবস্থার (ডিসিপি) সঙ্গে যুক্ত। এই রাজ্যগুলি সেন্ট্রাল পুল বা কেন্দ্রের জন্য ধান কিনে তা থেকে চাল তৈরি, প্যাকিং ও গুদামজাত করার পুরো দায়িত্ব নেয়। পশ্চিমঙ্গের ৬ কোটির বেশি রেশন গ্রাহকের প্রাপ্য চাল বণ্টন হয় সেন্ট্রাল পুল থেকে। বাকি ৪ কোটি নাগরিকের চাল আসে স্টেট পুল থেকে। রাজ্য সরকার এই মরশুমে ৪৬ লক্ষ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা দ্রুতই পূরণ হয়ে যাবে বলে রাজ্য মনে করছে। একইসঙ্গে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের প্রস্তাব, তারাও সরাসরি ৬ লক্ষ টন ধান কিনুক। কিন্তু মরশুমের অর্ধেক পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সংস্থা এফসিআই ৫০ হাজার টনও ধান কেনেনি। উল্টে, সেন্ট্রাল পুলের সংগ্রহ তদারকি করার নামে কিছু রাইস মিলে ‘অভিযান’ চালাচ্ছে তারা। রাজ্যের এবং রাইস মিলগুলির সীমাবদ্ধতার কথা ভুলে গিয়ে, কিছু আইনি প্রশ্ন তুলে, এটা বাংলাকে বিব্রত করার কেন্দ্রীয় অতি সক্রিয়তা নয়তো?। রাইস মিলসহ রাজ্যের সংগ্রহ ব্যবস্থায় কোনও ত্রুটি থাকলে তা অবশ্যই শুধরে নিতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ফোকাস’ হওয়া উচিত কৃষকের পাশে দাঁড়ানো। তারা বাংলা থেকে আরও বেশি ধান কিনুক অথবা চাল সংগ্রহ করুক। খোলা বাজারে প্রতি কুইন্টল চালের দাম ১৫০০ টাকার কম, কিন্তু এমএসপি ১৮৬৮ টাকা। বাংলায় সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও, এফসিআই চাল সংগ্রহের ব্যাপারে তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড়, পাঞ্জাব ও ওড়িশার প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে বলে অভিযোগ। এটাও বন্ধ হওয়া দরকার। সেন্ট্রাল পুলের জন্য চাল সংগ্রহের টাকা আটকে রাখার প্রবণতাও বন্ধ হওয়া জরুরি, কারণ সীমিত আর্থিক ক্ষমতায় রাজ্যকেই প্রথমে পুরো খরচটা করতে হয়।