বিদ্যার্থীরা মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
৩০ জুন সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, এ-পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে মোট ৩২ কোটি ১৩ লক্ষ ৭৫ হাজার ৮২০ ডোজ ভ্যাকসিন সাপ্লাই করেছে। এই পরিমাণ টিকা ‘ডাইরেক্ট স্টেট প্রোকিওরমেন্ট ক্যাটিগরি’ মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। তার মধ্যে মোট ব্যবহার (ওয়েস্টেজ বা অপচয়সহ) হয়ে গিয়েছে ৩১ কোটি ৪০ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬৪৫ ডোজ। এরপর রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর হাতে এদিন অবশিষ্ট ছিল মোট ৭৩ লক্ষ ১৬৬ ডোজ। এর থেকে এটা পরিষ্কার যে, একটা চমক দেওয়ার জন্যই সরকার ২১ জুন দিনটাকে আলাদা করে রেখেছিল। ওইদিনের আগে পরে ৮৮ লক্ষ দূরে থাক, তার ধারেকাছেও আর টিকাকরণ হয়নি। দেশবাসী ভেবেছিল, নরেন্দ্র মোদি বোধহয় ২১ জুনের সাফল্যটাকে একটা স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে সেট করে দিলেন। ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সব নাগরিকের টিকাকরণের উদ্যোগ ওটাকেই আদর্শ ধরে এগবে। হয়তো দৈনিক এক কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার রেকর্ডও আমরা কিছুদিন বাদে দেখতে পাব। দেশ অচিরেই করোনামুক্ত হওয়ার আয়োজন সম্পূর্ণ করে ফেলেছে মোদির নেতৃত্বে। কিন্তু কোথায় কী? সারা দেশে টিকার মোট মজুতের পরিমাণ ২১ জুনের মোট টিকাকরণের চেয়েই তো কম! জুনের শেষদিনে স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, ‘পাইপলাইনে’ আছে আরও ২৪ লক্ষ ৬৫ হাজার ৯৮০ ডোজ ভ্যাকসিন। সেগুলো রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর হাতে পৌঁছতে লাগবে আরও দু’-তিনদিন। সোজা কথাটা এই, মন্ত্রীমশায় হর্ষ বর্ধনের অফিস সবাইকে ফের চেপে খেলার পরিষ্কার নির্দেশ দিচ্ছে।
দিন যত এগচ্ছে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে, ২১ জুন মাহাত্ম্যের অন্য একটা দিক। শুধু মধ্যপ্রদেশ থেকেই অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে, টিকা আদৌ নেননি বা টিকাকরণ কেন্দ্রের ছায়াও মাড়াননি এমন বহু মানুষের স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে আপনি ‘ভ্যাকসিনেটেড’ মেসেজ! এমনকী, ১৩ বছরের এক কিশোরের নামও জ্বলজ্বল করছে করোনার টিকাপ্রাপকের তালিকায়। কোউইন অ্যাপ চেক করে তার বাবা দেখেন তাঁর ছেলের বয়স মাত্র ৫৬! চমকের ইতি এখানেও নয়, একই আধার নম্বরে ১৬ জন টিকাপ্রাপকের নাম নথিভুক্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় পোর্টালে! গৌরবে বহুবচনের এটাই একমাত্র দৃষ্টান্ত নয়, একটি আধার নম্বরে একাধিক ব্যক্তির নাম টিকাপ্রাপকের তালিকাভুক্ত হওয়ার ঘটনা মধ্যপ্রদেশে ঘটেছে ভূরি ভূরি! মোদি সরকার ব্যাপারটাকে টেকনিক্যাল ত্রুটি হিসেবে লঘু করে দেখাতে চাইলেও, কোনও সন্দেহ নেই, এটা মারাত্মক এক কেলেঙ্কারি! চমক দেওয়ার নেশাই এর কারণ। নোটবন্দির নায়ক সরকার আর কবে বুঝবে, চমক দিয়ে আর যা-ই হোক, করোনা জয় করা যাবে না। নরেন্দ্র মোদিকে বাস্তবটা ভেবে দেখতে হবে, করোনা মোকাবিলায় প্রধান দেশগুলির মধ্যে ভারতই কেন সবচেয়ে পিছড়েবর্গ রয়ে গেল। সর্বশেষ তথ্য বলছে, ব্রিটেনের ৪৯.১ শতাংশ নাগরিকের দু’টি ডোজ টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। সংখ্যাটা আমেরিকা ও ব্রাজিলের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৪৭ ও ১২.৪ শতাংশ। সেখানে ভারতের সম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়েছে মাত্র ৪.২ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক নাগরিকের। আমাদের চিরকালের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে তুলনাটাও আমাদের মাথা হেঁট করে দেয়: এখনও পর্যন্ত চীন ভ্যাকসিন দিয়েছে ১২৩ কোটির অধিক ডোজ। সংখ্যাটি ভারতের ক্ষেত্রে ৩২ কোটি ১৩ লক্ষ মাত্র! এই সরকার সস্তা চমকের রাজনীতি ছেড়ে স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতার নীতি অনুসরণ না করলে নিরীহ নির্দোষ দেশবাসীর জন্য আরও দুর্ভোগ আর দুর্নামই শুধু অপেক্ষা করে থাকবে।