বিদ্যার্থীরা মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
বাম আমলে শুরু হওয়া সারদা কাণ্ড এরাজ্যে যে একটি নজিরবিহীন আর্থিক কেলেঙ্কারি তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সেই কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে রাজ্যের ওই ডাকসাইটে নেতাকে আগে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। আবার হাত পেতে টাকা নেওয়ার ছবি ক্যামেরাবন্দি হওয়ার ঘটনা নিয়ে যে নারদ মামলা আদালতে চলছে তার চার্জশিটে অভিযুক্ত বিজেপি নেতার নাম রাখতে চেয়ে ইতিমধ্যে লোকসভার স্পিকারের কাছে নাকি দরবারও করেছে সিবিআই। এহেন একজন অভিযুক্ত আইনি শলাপরামর্শ করতে তুষার মেহতার মতো একজন নামজাদা আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতেই পারেন। কিন্তু তুষার মেহতা তো শুধু সলিসিটর জেনারেলই নন, তিনি সারদা ও নারদ মামলায় দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি ও সিবিআই-এর হয়ে সাওয়াল করেন বলে খবরে প্রকাশ। নারদ কেলেঙ্কারি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে চলা মামলাতেও তাঁকে নাকি সওয়াল করতে দেখা গেছে নিয়মিত। প্রশ্ন এখানেই। এখন দুই আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে মামলা চলাকালীন কী করে তদন্তকারীদের কৌসুলি সলিসিটর জেনারেলের সঙ্গে অভিযুক্তের কথা হতে পারে? সন্দেহ নেই, এমন বৈঠক যদি হয়ে থাকে তাহলে তা বিরল ঘটনাই বটে। নজিরবিহীনও।
তবে এই নিয়ে কলকাতা দিল্লি তোলপাড় হওয়ায় তাঁর সঙ্গে অভিযুক্তের বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছেন সলিসিটর জেনারেল। একই দাবি করেছেন অভিযুক্ত বিজেপি নেতাও। সলিসিটর জেনারেলের দাবি, বিনা নোটিসে তাঁর বাড়ি কাম অফিসে দেখা করতে এসেছিলেন অভিযুক্ত। তিনি তখন অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় অভিযুক্তকে পত্রপাঠ বিদায় করা হয়েছে। যদিও তৃণমূলের অভিযোগ তাঁর বাড়িতে প্রায় আধ ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের ওই বিরোধী নেতা। প্রভাব খাটানোর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তৃণমূল। তাই চার দেওয়ালের মধ্যে এই ঘটনা নিয়ে কোন পক্ষের দাবি সঠিক, তা পরিষ্কার নয়। তাই দুধ কা দুধ, পানি কা পানি বুঝে নিতে মেহতার বাড়ির সিসি টিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখার দাবি করেছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্দেহ নেই দাবি খুবই যুক্তিসঙ্গত। বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষার স্বার্থেই ফুটেজ খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীর সঙ্গে অভিযুক্ত দেখা করতে গেছেন, তা তো পুষ্পস্তবক নিয়ে ভালো আছেন বলতে নিশ্চয়ই নয়। যদিও অভিযুক্ত বিজেপি নেতার সাফাই, পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসা প্রসঙ্গে মামলার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলেন। প্রশ্ন তবু থামছে না।
প্রশ্ন হল, একজন সলিসিটর জেনারেলের বাড়িতে কী করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই একজন রাজ্য স্তরের নেতা চলে যেতে পারেন? আরও প্রশ্ন, একজন ব্যক্তি কয়েকজন দেহরক্ষী নিয়ে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আইনি অফিসারের বাড়িতে ঢুকে পড়তে কী করে পারেন? কে তাঁকে অনুমতি দিয়েছিলেন? এসব শুনে তৃণমূলের সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ের মন্তব্য, ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সিবিআইয়ের হয়ে সওয়াল করা সলিসিটর জেনারেল বাড়িতে বসে চা খাওয়ালেন? এ তো আরব্য রজনীর উপন্যাসকেও হার মানায়। সন্দেহ নেই, ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগের। অভিযোগ যেহেতু গুরুতর এবং দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজনৈতিক দল নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে ওই সরকারি পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে, তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উচিত ঘটনাটিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে অভিযোগ ও পাল্টা দাবির স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া। সত্যিটা সামনে আসুক। না হলে আরও অনেক কিছুর মতোই এই ঘটনাতেও তাঁর গায়ে কালি লাগবে।