বিদ্যার্থীরা মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
করোনা আবহে বিমর্ষ ক্রিকেট দুনিয়া। ব্যাটে-বলে ঝড়ের দৃশ্য ভারতের মাঠে স্থগিত এখন। তাই উল্লাসের সেঞ্চুরিরাও গিয়েছে অকালের শীতঘুমে। কিন্তু মাঝে মাঝে ভুলে যাই, আজকের ভারতেশ্বরের নাম শ্রীনরেন্দ্র মোদি! দেশ ঝিমিয়ে রয়েছে তাতে কী—সেঞ্চুরি হতে দেশবাসীকে তিনি তো বঞ্চিত করতে পারেন না! তেলের দামে সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছেন তিনি। ভোজ্য তেল সেঞ্চুরি পার করেছে অনেক আগেই। বাকি ছিল পেট্রল, ডিজেল। মোদি সরকার এই দু’টিতেই সেঞ্চুরি উপহার দিতে মরিয়া ছিল অনেক দিন যাবৎ। পশ্চিমবঙ্গের ১৯ জেলায় পেট্রল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে সোমবারই। মঙ্গলবারের বাজার দর বলছে, লিটার প্রতি ডিজেলের দামও প্রায় সারা দেশে সেঞ্চুরির প্রতীক্ষায়: জয়পুর (৯৮ টাকা ৪৭ পয়সা), হায়দরাবাদ (৯৭ টাকা ৪০ পয়সা), ভুবনেশ্বর (৯৭ টাকা ৩৯ পয়সা), মুম্বই (৯৬ টাকা ৯১ পয়সা), বেঙ্গালুরু (৯৪ টাকা ৭২ পয়সা), চেন্নাই (৯৩ টাকা ৯১ পয়সা), কলকাতা (৯২ টাকা ২৭ পয়সা)। মঙ্গলবার পেট্রল ভোপাল (১০৮ টাকা ১৬ পয়সা), ঔরঙ্গাবাদ (১০৬ টাকা ২৬ পয়সা), মুম্বই (১০৫ টাকা ৯২ পয়সা), হায়দরাবাদ (১০৩ টাকা ৭৮ পয়সা), চেন্নাই (১০০ টাকা ৭৫ পয়সা), ভুবনেশ্বর (১০০ টাকা ৬৬ পয়সা) প্রভৃতি স্থানে কলকাতাসহ বাংলার যে-কোনও জায়গার থেকে দামি ছিল। এতদিন ক্রীড়ামোদি আর শেয়ারের কারবারিরা তাকিয়ে থাকতেন স্কোর বোর্ডের দিকে—কী হয় সংখ্যার উত্থান পতন! নরেন্দ্র মোদি আর তাঁর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এমন দুই খেলোয়াড় সবাইকে দাঁড় করিয়েছেন অন্য স্কোর বোর্ডের সামনে। সবাই অবাক বিস্ময়ে দেখে যাচ্ছে পেট্রল-ডিজেলের দামের উত্থান শুধু, পতনের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় ক্বচিৎ!
শিল্প-বাণিজ্য-অর্থনীতির পণ্ডিতরা জানাচ্ছেন, এবছরের ৪ মে-৫ জুলাই—মাত্র দু’মাসের ভিতরে দেশে পেট্রলের দাম ৩৫ বার বেড়েছে। খুব পিছিয়ে নেই ডিজেল। তার দাম এই সামান্য সময়ে বেড়েছে ৩৩ বার। এই অস্থিরতা ভারতের মাটিতে অভূতপূর্ব! কেন এই তুঘলকি কাণ্ড? মোদি সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ চিত্রে একবার চোখ বুলালেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যায়। ২০১৯-২০-র তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবর্ষে শুধু পেট্রপণ্য থেকে রাজস্ব বেড়েছে ১ লক্ষ ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। মোদি জমানার সাত বছরে পেট্রপণ্য থেকে কর সংগ্রহ বেড়েছে ৩৭০ শতাংশ! সোজা কথায়, মোদি আর তাঁর অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের কাছে পেট্রপণ্যই হল দেবতরু—তার সামনে হাত পাতলেই নেমে আসে বৃষ্টির মতো টাকা! কিন্তু এই সরকার দু’টি জিনিস ভুলে যাচ্ছে। এক, সব পণ্য ও পরিষেবার দাম প্রত্যক্ষভাবে পেট্রপণ্যের সঙ্গে যুক্ত। তাই মূল্য সূচক তির বেগে বেড়ে চলেছে। দেশবাসী সেই তিরে দিনরাত বিদ্ধ, রক্তাক্ত হচ্ছে। এই জমানায় মৃত্যুও আর সুখের নয়। খুব ন্যায্য প্রতিবাদ জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্য বিরোধীরা। দুই, রাজস্ব সংগ্রহ ও বৃদ্ধির একবগ্গা এই নীতি অর্থ এবং বাণিজ্য মন্ত্রকের দক্ষতা তলানিতে নিয়ে যাচ্ছে। এই সরকার হারিয়ে ফেলছে তার উদ্ভাবনী কৌশল। তেলের গাছকেও একদিন শুকিয়ে যেতে হবে কালের নিয়মে। সেইদিন কীভাবে ভরবে রাজকোষ? সেই ভয়ঙ্কর দিনের কথা মোদি সরকার একবারও ভাবছে বলে মনে হয় না।