বিদ্যার্থীরা মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
আতঙ্ক আরও। সংক্রমণ যখন মধ্যগগনে তখন করোনা আক্রান্ত কোনও প্রিয়জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে না পেরে তাঁর প্রাণ সংশয়ের আতঙ্কে দিন-রাত এক হয়ে যেত। সেই পরিস্থিতি কাটতেই ভ্যাকসিনের হাহাকার নতুন উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়েছিল জনজীবনে। প্রথম অথবা দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন পেতে এখনও হয়রানি হচ্ছে অনেকের। কারণ চাহিদার থেকে কেন্দ্রের জোগান কম। স্বভাবতই চলছে নানা বিশ্লেষণ, সময়ে টিকা না নিতে পারলে কী কী ক্ষতি হতে পারে, তার আলোচনা। যে ভাইরাসটি প্রায় দেড় বছর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তার টিকা সহজে না পেলে মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়বেনই। এই আবহে দেবাঞ্জন দেব নামক এক কীর্তিমান সেই আতঙ্কের নবতম সংযোজন। সাধারণ মানুষ চাকরি থেকে ব্যবসার বরাত পাওয়ার জন্য জাল শংসাপত্র জমা দেওয়ার খবর শুনেছেন এতদিন। জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র—তাও জাল হওয়ার ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে। বেবি ফুড বা নকল ভোজ্য তেলের খবরও অজানা নয়। চালু কথা হল, যাহা কিছু আসল, তার নকলও নাকি বাজারে মিলবে! নকল টাকা ...। শিক্ষিত সুঠাম দেবাঞ্জন দেব জালিয়াতি করার জন্য এই সময়কার সবচেয়ে আলোচিত বিষয়টিকে বেছে নিয়ে মারাত্মক অপরাধটি করেছেন। মাস্ক-স্যানিটাইজার-টিকা—মানুষের জীবনে এখন রোটি-কাপড়া-মকানের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। সেসব কার্যত ঘরের দরজায় পৌঁছে দিয়ে ক্রমশ বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছিলেন শীর্ষস্তরের আমলার জাল পরিচয়ে ওই ব্যক্তিটি। খবরে প্রকাশ, এই প্রতারকের ফাঁদে পড়ে যেসব মানুষ টিকা নিয়েছেন তার কোনওটিই করোনার ভ্যাকসিন নয়। আর এখানেই নানা প্রশ্নের হাত ধরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে হাওয়ার বেগে। দেবাঞ্জনের ব্যবস্থাপনায় যাঁরা টিকা নিয়েছেন যথোচিত গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের নতুন করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। ঘটনাটি নজরে আসতেই প্রশাসন তৎপর হয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপও নিয়েছে। হাত গুটিয়ে বসে থাকেনি পুরসভা। তদন্ত করে যেসব তথ্য মিলছে তা বেশ চাঞ্চল্যকর। কিন্তু প্রশ্ন হল, এমন আরও ভুয়ো ভ্যাকসিন রাজ্যের অন্য কোনও শিবির থেকে দেওয়া হয়নি তো? গুরুত্ব সহকারে তা খতিয়ে দেখা দরকার। নজরদারি বাড়াতে হবে। কসবার একটি ক্যাম্পে ভুয়ো ভ্যাকসিন যে প্রশ্নগুলিকে সামনে এনে দিল তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, প্রাসঙ্গিক এবং আতঙ্কিত হওয়ার মতোই। খতিয়ে দেখতে হবে কাদের কাছ থেকে এই ভুয়ো টিকা তিনি সংগ্রহ করলেন? সামগ্রিকভাবে এরাজ্যে টিকাকরণ কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবেই চলছে। দেশের অন্য কোনও কোনও রাজ্যে মহামূল্যবান এই প্রতিষেধকের অপচয় ঘটলেও এরাজ্যে তা না হওয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার প্রশংসার দাবিদার। সেখানে ভুয়ো টিকার এই ঘটনার পিছনে জাল ওষুধ চক্রের যোগসাজশ বা অন্যকোনও গভীর চক্রান্ত আছে কি না তা দেখা দরকার।
অভিযুক্ত ব্যক্তি ঠিক কী কী অন্যায় করেছেন, কত মানুষের সর্বনাশ করেছেন, কতদিন ধরে এবং কীভাবে এই জাল ছড়িয়েছেন তা নিশ্চয় পুলিস খতিয়ে দেখবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর কী শাস্তি হবে এবং কতদিনে, তা এদেশে অন্তত সহজে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষেধকের জাল ব্যবসা যিনি বা যাঁরাই করুন না কেন তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়াই উচিত। যে প্রশ্নগুলি জনমানসে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে তা হল, টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা বা সরকার ব্যতীত কারও কাছে টিকার ভায়াল পৌঁছানো সম্ভব নয়। তাহলে ধৃত ব্যক্তি কসবা বা মধ্য কলকাতার একটি কলেজে শিবির করছেন জানার পরও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাদের এবং পুলিসের মনে কোনও প্রশ্ন জাগল না কেন? প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে, কোনও একজন ব্যক্তির উদ্যোগে ভ্যাকসিন শিবির কীভাবে চলল? সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে তা খুঁজে বের করতেই হবে। এটাও বলা জরুরি, টিকা নিয়ে এসএমএস না পেয়ে যে স্বাভাবিক চিন্তা থেকে অভিনেত্রী-সাংসদ মিমি চক্রবর্তী সক্রিয় হয়ে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন, অন্যদের ক্ষেত্রে সেই সচেতনতা দেখা গেল না কেন? শুধুমাত্র প্রশাসন একা পারবে না। এই ধরনের জালিয়াতদের রুখতে মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। শুধু অন্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়া যাবে না।