বিদ্যার্থীরা মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
এই ভারতের সবাইকে কি আপনার বন্ধনীতে রাখে কোনও ব্যাঙ্ক এবং ক্রেডিট কার্ড সংস্থা? বিশেষ করে যে ব্যক্তি সবদিক থেকেই অসচ্ছল বা আর্থিকভাবে দুর্বল, তাঁকে? বহু পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তির অকাল মৃত্যু হয়। অথচ তিনি রেখে যেতে পারেন না পরিবারটিকে বাঁচাবার মতো কিছু অর্থ-বিত্ত। হয়তো তাঁদের আছে মেধাবী, সম্ভাবনাময় এক বা একাধিক সন্তান। উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা হলে ওই ছেলে বা মেয়েই পরিবারটির মুখে হাসি ফোটাতে পারে। কিন্তু, দুঃস্থ পরিবারের পক্ষে সেটা মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। তার জন্য কিছু টাকার প্রয়োজন যে। টাকার জোগানটা নিয়মিত হওয়াও জরুরি। কারণ, তারা যে প্রতিষ্ঠানে পড়বে বা ট্রেনিং নেবে সেখানে ভর্তি হতে ফি জমা করতে হয়। তারপর গুনতে হয় প্রতিটা সেমেস্টারের খরচ। হস্টেল, যাতায়াত ইত্যাদি বাবদও ব্যয় করতে হয় আরও কিছু। কোনও কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পুরো কোর্স ফি-র একটা অংশ আগামও নিয়ে থাকে। সব মিলিয়ে এই ধরনের পরিবারের কাছে কয়েক হাজার অথবা তার চেয়ে একটু বেশি টাকা অমূল্যধনের মতোই। এই টাকা তারা শেষপর্যন্ত জোগাড় করতে পারে না। জমিজমা, ঘরবাড়ি বেচে শুরু করেও কারও কারও শেষরক্ষা হয় না। টাকার অভাবে মাঝপথেই রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হয় তারা। ফলে, বহু মেধাবী, সম্ভাবনাময় ছেলেমেয়ের সামনে চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় উচ্চশিক্ষার দরজা। বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী ছাড়া এঁদের মধ্যে কেউই ব্যাঙ্ক বা ক্রেডিট কার্ড সংস্থার দরজায় মাথা কুটেও সাড়া পাবেন না।
বস্তুত, এরকম একটি মহৎ প্রয়োজনে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বুধবার থেকে রাজ্যজুড়ে চালু হল ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’। ক্রেডিট কার্ডের জগতে নবতম সংযোজন, নতুন এক নাম। দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষা এবং বড় চাকরির জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণে ইচ্ছুক তরুণ-তরুণীরা ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। মাধ্যমিক পড়ুয়া থেকে পোস্ট ডক্টরাল গবেষক পর্যন্ত ৪০ বছরের যে-কেউ এজন্য আবেদন করতে পারবেন, কোর্স চলাকালীন যে-কোনও সময়ে। রাজ্যের সমবায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলো এই ক্রেডিট কার্ড ও ঋণ দেবে। পরিশোধের সময়সীমা থাকবে ১৫ বছর। ছাত্রছাত্রীর জন্য গ্যারান্টার থাকবে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কোনও সন্দেহ নেই, একজন মানবিক মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া এমন দরদি পরিকল্পনা নিতে পারেন না। মুখ্যমন্ত্রীর এই অভূতপূর্ব ঘোষণায় বাংলার শিক্ষানুরাগী মহল অভিভূত, উচ্ছ্বসিত। তাঁরা চান, পরিকল্পনাটি স্বচ্ছতার সঙ্গে ও সার্থকভাবে রূপায়িত হোক। তাহলে আগামী কয়েক বছরের ভিতরে এই একটামাত্র প্রকল্প বাংলার চেহারাটাই পাল্টে দেবে। দ্রুত কমে আসবে স্কুল-কলেজ-ছুটের হার। আগামী দিনে ভালো গবেষক, ডাক্তার, অধ্যাপক, নানাধরনের পেশাজীবী ও সিভিল সার্ভেন্টের আকাল কেটে যাবে। বাংলার আর্থ-সামাজিক ছবিতেও ফুটে উঠবে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন। ‘কন্যাশ্রী’র বিপুল সাফল্যের সঙ্গে যথার্থ সঙ্গতের নাম আজ ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’।