বিদ্যার্থীরা মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
হয়তো মনে মনে তিনিও প্রমাদ গোনেন অন্তত দু’টি কারণে: (এক) রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে অনুৎপাদক সম্পদের (এনপিএ) পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ব্যাপারটা হল দীর্ঘদিনেও আদায় না-হওয়া ঋণ। প্রদত্ত ঋণ বাবদ আসল ও সুদ মিলিয়ে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যাঙ্কের প্রাপ্য, সেই টাকা আদায় হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে এলেই তাকে এনপিএ বলা হয়। ভারতীয় অর্থনীতির একটি অভিজ্ঞতা হল, গরিব ও মধ্যবিত্তরা কম টাকা ঋণ নেয় এবং তারা নিতান্ত বিপাকে না পড়লে যথাসময়ে সেই টাকা পরিশোধও করে। সুদের বোঝা বড় হয়ে যাওয়ার ভয় পায় তারা। তাই খেলাপিদের তালিকায় এই শ্রেণির লোকের সংখ্যা নগণ্য। এই ধরনের খেলাপিদের কাছে ব্যাঙ্কের মোট প্রাপ্যও তুলনামূলকভাবে কম হয়। তবু, এই শ্রেণিকে ঋণ মঞ্জুর করতে বিশেষ অনীহা দেখায় ব্যাঙ্কগুলি। গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির আর্থিক উন্নয়নের পথে ব্যাঙ্কের এই মানসিকতা একটি বড় অন্তরায়। অন্যদিকে, বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি, মেহুল চোকসি গোছের লোকরা সরকারি, বেসরকারি কিছু ব্যাঙ্ক এবং অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ বাগিয়ে নেয়। হাজার হাজার কোটি টাকা মঞ্জুরের আগে ঋণগ্রহীতার যোগ্যতা নানাভাবে যাচাই হওয়া আবশ্যক। কিন্তু বড় খিলাড়িরা ওই কঠিন ধাপ সহজেই এড়াতে সফল হয়। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে তারা ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। সহজ অনুমান এই যে, অত্যন্ত মজবুত রাজনৈতিক খুঁটির জোরেই তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের চাহিদা মাফিক ঋণ মঞ্জুরে বাধ্য করতে পারে। (দুই) নির্বাচনে কালো টাকার খেলা মোদির আমলে কমেনি, বরং বেড়েছে বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের আক্ষেপ। ভোটের প্রচারে বিধি অনুসারে সর্বাধিক যত টাকা খরচ করা যায়, বেশিরভাগ দল তার তোয়াক্কাই করে না। গাড়ি (এমনকী হেলিকপ্টারও) সংগ্রহ, হোটেল ভাড়া, খাওয়া-দাওয়ার খরচ, বেআইনি অস্ত্র সংগ্রহ, গুন্ডাদের ইনাম, ভোটারদের উপঢৌকন বিতরণ প্রভৃতি মিলিয়ে যে খরচ হয় তা পুরাকালের রাজসূয় যজ্ঞকেও ছাপিয়ে যায়, কোনও সন্দেহ নেই। বহুকাল ধরে গবাদি পশুর মতোই বেচাকেনা হয় নানা স্তরের জনপ্রতিনিধি—সম্প্রতি যা মাত্রা ছাড়িয়েছে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে—ভোট উপলক্ষে এই যে ভূতের পিতৃদেবের শ্রাদ্ধশান্তির বিপুল আয়োজন, তার পিছনে গৌরী সেনটি কে? একের পর এক ব্যাঙ্কের তহবিল চৌপাট করে দেওয়ার কারিগর, করব্যবস্থাকে ফোঁপরা করার ওস্তাদরা কি এই সুযোগটির সদ্ব্যবহার করে না? সব সরকারই দাবি করে, তারা অতন্দ্র প্রহরী। তাদের সামনে দিয়ে একটি মাছিও গলে যেতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে সাত সমুদ্র তেরো নদী নির্বিঘ্নে পেরিয়ে গিয়েছে একের পর এক কীর্তিমান। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি ও মেহুল চোকসি। কয়েক বছর ধরে কী যে আইনি প্রক্রিয়া হচ্ছে তা আম জনতা বোঝে না, তাদের কাউকেই দেশে ফেরাতে পারেনি মোদি সরকার। আইপিএল দুর্নীতির হোতা ললিত মোদিকে দেশে ফেরাবার ব্যাপারেও সরকার একইভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে।
এর মধ্যে একটাই সুখবর দিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ইডির বিবৃতি অনুসারে বিজয়, নীরব ও মেহুলের বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তি বেচে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলিকে তারা ৯,৩৭১ কোটি টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে। অঙ্কটা ব্যাঙ্কগুলির মোট প্রাপ্য ২২,৫৮৬ কোটি টাকার থেকে অনেক কম। তবুও এজন্য ইডির প্রশংসা প্রাপ্য। প্রতারকদের বাজেয়াপ্ত হওয়া সম্পত্তি বেচে ব্যাঙ্কগুলিও নিজ উদ্যোগে ১,৩৫৭ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে। এই পলাতক ‘ত্রিরত্ন’-এর আরও বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। সেগুলিও বেচে অবিলম্বে ব্যাঙ্কের প্রাপ্য মেটানো হোক। ফেরারদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় হাজির করার প্রক্রিয়াটাও চলুক। একই সঙ্গে খুঁজে বের করতে হবে, এই প্রতারকদের অভয়দাতাদের। কাঠগড়ায় তুলতে হবে তাদেরকেও। এই দু’পক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না-হলে ব্যাঙ্ক জালিয়াতিতে লাগাম পড়া অসম্ভব। অর্থনীতির উপর এদের কালো ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। দুর্নীতির দুর্নাম নিয়েই দশকের পর দশক পেরবে আমাদের প্রিয় দেশ।