কাজকর্মে নতুন সুযোগ আসতে পারে। কর্ম সাফল্যে আনন্দ লাভ। ব্যবসায় উন্নতি। গবেষকদের পক্ষে শুভ। ... বিশদ
বাবলা নদী ঘেঁষা পল্লিশ্রী গ্রামটির বাসিন্দা প্রায় দুই হাজার। ভোটার প্রায় ১১০০। তার মধ্যে মহিলা প্রায় ৭০০। অধিকাংশই কৃষিকার্যের উপর নির্ভরশীল। তবে অনেকে ছোটখাটো ব্যবসাও করেন। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, একসময়ে মহিলাদের কাজ ছিল সংসার সামলে স্বামীকে চাষের কাজে বা বাবলা নদীতে মাছ ধরায় সাহায্য করা। কিন্তু বছর দুয়েক হল ওই দু’টি কাজের সঙ্গে গ্রামের মহিলারা আরও একটি কাজে যুক্ত হয়েছেন। বালাপোশ তৈরি করছেন বছরভর। শীতের চারমাস মহিলাদের দম ফেলার ফুরসত থাকে না।
ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল বালাপোশ তৈরি কুটির শিল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মহিলারা সুচ সুতো নিয়ে বালাপোশ তৈরি করছেন। কোথাও আবার কয়েকজন মহিলা একসঙ্গে কাজ করছেন। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত মহিলারা এই কাজে ব্যস্ত থাকছেন। গ্রামের অনিমা সরকার লক্ষীর ভাণ্ডারও পান। তিনি বললেন, প্রায় দুই বছর ধরে এই কাজ করছি। প্রতিদিন তিনটে করে বালাপোশ তৈরি করতে পারি। এক একটি বালাপোশের মজুরি পাই ৮০ টাকা করে। তবে শীতকালের মতো বছরের অন্য সময়ে কাজের এতটা চাপ থাকে না। অনিমা আরও জানান, কয়েক বছর এই কাজ করে টাকা জমিয়ে নিজের কোনও উদ্যোগ বানাতে চাই।
প্রায় একই স্বপ্ন রয়েছে গ্রামের শঙ্করী সরকার। শঙ্করী বলেন, এই কাজ শুধু আমি নয়, অসুস্থ ও বৃদ্ধা ছাড়া গ্রামের সব মেয়েরা করেন। সংসার সামলে বাড়ির এসব কাজ করা হয়। রোজগার ও চাহিদা দুটোই রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় তিনবছর হল গ্রামে এই ব্যবসা শুরু করেন দুই যুবক। তাঁরা একটি দোকান খুলে প্রথমে কয়েকজন মহিলাকে দিয়ে বালাপোশ তৈরি করাতে থাকেন। তবে এখন ব্যবসার পরিধি বেড়ে যাওয়ায় গ্রামের কয়েকজন যুবক মিলে মহাজনি ব্যবসা চালাচ্ছেন। ব্যবসায়ী শ্রীবাস সরকার বলেন, গ্রামের প্রায় ৭০০ মহিলার মধ্যে সাড়ে ৬০০ মহিলা বালাপোশ তৈরি করছেন। কেউ কেউ মাসে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। এইসব বালাপোশ প্রতিবেশী গ্রাম ছাড়াও মালদহ, বীরভূমেও রপ্তানি করা হচ্ছে। প্রতিটি বালাপোশ সাড়ে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়ে থাকে।
প্রসঙ্গত, বালাপোশ তৈরির জন্য দু’টি পুরনো সিল্কের শাড়িকে জোড়া দিয়ে লেপের খোলের আকার দেওয়া হয়। তার ভিতরে সিল্কের তুলো ঢুকিয়ে উপরে কাঁথার মতো সেলাই করে বালাপোশ তৈরি করা হয়। গ্রামের মিঠু সরকার বলেন, মাত্র দুই বছরেই এই কাজ করে অধিকাংশ মহিলা স্বনির্ভর হতে পেরেছেন।