সৌম্যজিৎ সাহা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: সাপ-লুডো খেলায় ভোটদানে সচেতনতার পাঠ! শুনতে অবাক লাগলেও গণতন্ত্রের মাহাত্ম্য বোঝাতে লুডোর বোর্ডকেই অস্ত্র করছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী ব্লক প্রশাসন। কিন্তু কীভাবে? ধরা যাক, লুডো বোর্ডের সিঁড়ি হল গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের উন্নত মাধ্যম। আর সাপ হল অবনতির প্রতীক। পুট কিংবা ছক্কা এখানে ভোটবিধি মেনে চলার নির্ণায়ক শক্তি। বোর্ডের উপর যে সংখ্যাই পড়ুক তা দিয়ে সিঁড়ির ঘরে পৌঁছলে আপনি ঊর্ধ্বমুখী। সাপের মুখে পড়লে নিম্নমুখী। ভোটদান প্রক্রিয়াও অনেকটা সাপ-লুডো খেলার মতোই। বলছেন বাসন্তী ব্লকের নির্বাচনী আধিকারিকরা। তাঁদের ব্যাখ্যা—গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্ত করতে নিজের ভোট নিজে দিন। স্বচ্ছতার সঙ্গে সিঁড়ির ঘরে যান। সেই ঘর বলতে বুথ। ইভিএমে বোতাম টিপুন। সিঁড়ি বেয়ে সোজা উপরে উঠে পড়ুন। তবে ভুলেও সাপের মুখে পড়বেন না! অর্থাৎ কারও কোনও প্রলোভনে পা নয়। টাকার বিনিময়ে ভোট নয়। অন্যের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনিয়ে নেওয়াও নয়। তা হলেই সমুহ বিপদ! নড়বড়ে হয়ে যাবে সংসদীয় গণতন্ত্রের কাঠামো।
এখন মোবাইল ও ট্যাবের যুগ। চূড়ান্ত ব্যস্ত সকলেই। শহরাঞ্চলে অবসর-যাপন বলে কিছু নেই। সাপ-লুডো খেলার সময় কোথায়! তবে গাঁ-গঞ্জে এখনও লুডোর আসর বসে। হেঁশেল সামলে বেশিরভাগ মহিলা সেখানে অংশ নেন। বহু বৃদ্ধ-বৃদ্ধাও আসরে যোগ দেন। অনেক মাথা খাটিয়ে লুডো খেলার এই জনপ্রিয়তাকে ভোটদানে সচেতনতা বৃদ্ধির মোক্ষম দাওয়াই হিসেবে ব্যবহার করেছেন আধিকারিকরা। জেলার বিভিন্ন ব্লক নিজেদের মতো করে নানা উদ্ভাবনী কর্মসূচি নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার করছে। ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনার মোড়কে লুডো খেলার বোর্ডকে ঢুকিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে বাসন্তী ব্লক প্রশাসন।
সিঁড়ি ও সাপের প্রতীককে সামনে রেখে ভোটদানের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। গণতান্ত্রিক কাঠামোয় ভোট প্রক্রিয়া বলতে বোঝানো হয়েছে বোর্ড। কী কী কাজ করলে গণতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো হবে আর কোনটা করলে খারাপ হবে—সেটাই তুলে ধরা হয়েছে অভিনব এই প্রচার-পদ্ধতির মাধ্যমে।
বিভিন্ন সিঁড়ির মুখে একাধিক ভালো কথা লেখা রয়েছে। যেমন,  নিজের ভোট নিজে দিতে হবে। কোনও প্ররোচনায় পা দেব না। কোন‌ওরকম ঝামেলা করব না। বয়স্ক মহিলা ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহিত করতে হবে। একইভাবে সাপের মুখে পড়লে ফল খারাপ হয়, সেটাকে হাতিয়ার করে নেতিবাচক দিকগুলিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে টাকা নিয়ে ভোট দেওয়ার প্রসঙ্গ। বলা হয়েছে, টাকা নিয়ে ভোট একেবারেই নয়। অন্যের হয়ে ভোট দেওয়াও অপরাধ। আবার সবাইকে জানিয়ে ইভিএমে বোতাম টেপাও সুস্থ গণতন্ত্রের লক্ষণ নয়। বাড়ির মহিলাদের ভোটদানে বাধা নয়। এ রকম বহু নেতিবাচক বার্তা দিয়ে সাধারণ ভোটারদের বোঝানো হচ্ছে—এইসব কাজ করলে তাঁরা বিপদেও পড়তে পারেন। সে ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ভাবে ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাপের মুখ এড়িয়ে চলতে হবে। 
বাসন্তীর বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এই সাপ-সিঁড়ি খেলার ছবি ছাপিয়ে বিলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। বিডিও সৌগত সাহা বলছিলেন, ‘এই  জনপ্রিয় খেলার মাধ্যমে বাসন্তীর বিভিন্ন এলাকার মানুষদের সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভোট প্রক্রিয়ায় কোন কাজগুলি ভালো আর কোনগুলি খারাপ, মূলত সেসবই  তুলে ধরা হয়েছে।’ বাসন্তী বিধানসভার মোট ২০টি সেক্টর আছে। সব মিলিয়ে প্রথম পর্যায়ে এক হাজার ছবি ছাপিয়ে ভোটারদের বিতরণ করা হবে। জেলাশাসকের তরফেও এই উদ্যোগকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।