প্রীতেশ বসু, কলকাতা: বিগত ১৩ বছরে উম-পুন, ডানা, বুলবুলসহ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের দাপট সামলেছে বাংলা। রাজ্যকে এছাড়াও একাধিকবার মোকাবিলা করতে হয়েছে বন্যার। সিকিমের হড়পা বানের কারণে দার্জিলিং, কর্শিয়াং ও কালিম্পং ভয়াবহ দুর্যোগের কবলে পড়েছে। বিরোধী রাজ্য হওয়ায় বাংলাকে প্রত্যেকবারই পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না-দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দিল্লির বিরুদ্ধে। এমতাবস্থায় আচমকাই, বিগত ১৩টি অর্থবর্ষে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ঘটে যাওয়া ক্ষয়ক্ষতির হিসেব চেয়ে পাঠাল কেন্দ্র! ফলে ২০১১-১২ থেকে শুরু করে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ধস, খরা, অগ্নিকাণ্ড, ক্লাউড বার্স্ট, ফসলে পোকা ধরাসহ নির্দিষ্ট ১২ ধরনের বিপর্যয়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাঠাতে হবে নবান্নকে। সূত্রের খবর, তথ্য হিসেবে কেন্দ্রকে রিপোর্ট দিতে হবে একেবারে অর্থবর্ষ ধরে ধরে এবং নির্দিষ্ট ফরম্যাটে। এই সময়কালে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কতজনের মৃত্যু হয়েছে? কী তার কারণ? প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে গবাদি পশু মারা গিয়েছে কত? কত বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে? পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব চাওয়া হয়েছে চাষের ক্ষয়ক্ষতিরও। আর এখানেই রাজ্যের প্রশাসন মহলের প্রশ্ন, কেন্দ্র হঠাৎই এমন তথ্যাদি তলব করল কেন? বিষয়টি রাজ্যকে পরিষ্কার করে জানানোও হয়নি। ফলে এই রিপোর্ট তলবের নেপথ্যে সিঁদুরে মেঘই দেখছে রাজ্য প্রশাসন। রাজনৈতিক কারণেই ১০০ দিনের কাজ, আবাস প্রকল্প এবং গ্রাম সড়ক যোজনার টাকা কেন্দ্র আটকে দিয়েছে বলেই নবান্নের অভিযোগ। নবান্নের প্রশ্ন, এবার কি তাহলে বিপর্যয় মোকাবিলা খাতেরও কোনও তহবিলে কোপ দিতে চলেছে কেন্দ্র? কারণ, রাজ্যের পক্ষে এই রিপোর্ট দেওয়া যে কোনও সমস্যার নয়, তা কেন্দ্রও জানে। কিন্তু, কোনও বৈধ কারণ ছাড়াই একাধিক ক্ষেত্রের টাকা যে আগে বন্ধ করেছে মোদি সরকার! তাই রেকর্ড বলছে, এই রিপোর্টকে সামনে রেখে নতুন কোনও খাতের টাকা বন্ধ করে দেওয়া দিল্লির পক্ষে অস্বাভাবিক নয়।
তবে এসবের তোয়াক্কা না করে এখনও দিল্লিতে রিপোর্ট পাঠানোরই পক্ষে নবান্ন। তাই এই রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে প্রতিটি জেলা প্রশাসনের কাছে। সেই জেলাভিত্তিক রিপোর্ট বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরে দ্রুত পাঠানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে তাড়াতাড়ি রিপোর্ট দিতে হবে কলকাতা পুরসভা, কৃষিদপ্তর এবং প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরকেও। রাজ্যের এক আধিকারিক জানান, নবান্নের কাছে প্রত্যেক বছরের বিস্তারিত তথ্য থাকেই। কিন্তু আমরা নির্ভুল তথ্য দেওয়ার পক্ষপাতী। তাই জেলা, কলকাতা পুরসভা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলি থেকে ফ্রেশ রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সমস্ত তথ্য মিলিয়ে দেখে তবেই সেসব দিল্লিতে পাঠানো হবে।