সামাজিক কল্যাণ কর্মে সাফল্য ও জনখ্যাতি। বাতজ সমস্যায় বিব্রত হতে পারেন। কাজ কারবারে শুভ। ... বিশদ
প্রকল্প অনুযায়ী, বাড়ি প্রতি সরকারি বরাদ্দ তিন লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা। যার মধ্যে ২৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে উপভোক্তাকে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২২ সালের শুরুতে শহরের ১৮টি ওয়ার্ড মিলিয়ে প্রায় ৪৮০০টি বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দু’বছর পেরিয়ে গেলেও তার মধ্যে ১১৫৬টি বাড়ি নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়নি। কেন্দ্রের রাজনীতিতে বাড়ি নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় হতদরিদ্র মানুষগুলো বিপাকে পড়েছেন। বুধবার ভোররাত থেকেই কখনও ঝেঁপে, কখনও হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাতেই ওই সমস্ত পরিবারগুলোর করুণ দৃশ্য প্রকট হয়েছে। এদের কারও বাড়ি লিন্টন পর্যন্ত উঠেই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অগত্যা অসম্পূর্ণ ওই বাড়িতেই ত্রিপল টাঙিয়ে কোনওরকমে বসবাস করছেন। আবার কেউ অন্যত্র ভাড়া দিয়ে রয়েছেন। আবার অনেক পরিবারের ঝুপড়ি ভেঙে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়। বর্তমানে ত্রিপল টাঙিয়ে কাটছে তাঁদের জীবন।
রামপুরহাট পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বৃদ্ধ মহম্মদ আলিজান। বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর বসবাস। তিনি বলেন, বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তি হিসাবে ৬০ হাজার টাকা পেয়েছি। সেই টাকায় কিছুটা অংশ নির্মাণ হয়েছে। তারপর থেকে আর একটিও টাকা পাইনি। পুরসভায় যাওয়া হলে বলছে, টাকা আসেনি। ফলে দু’বছর ধরে ঝড়, জলের মধ্যে ত্রিপল টাঙিয়ে বসবাস করছি। রাতে প্লাস্টিকের ত্রিপল নিরাপদ নয়।
জানা গেছে, কোথাও কোমর পর্যন্ত গাঁথনি উঠে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কোথাও লিন্টন, আবার কোথাও কেউ ছাদ ঢালাই দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। মাসের পর মাস ধরে ওই অবস্থায় পড়ে রয়েছে বাড়িগুলি। এক উপভোক্তা দিব্যেন্দু মাল বলেন, দিনমজুরি খেটে সংসার চলে। জায়গা না থাকায় পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ভেবেছিলাম তিনমাসের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। ফলে পাশেই বাড়ি ভাড়া নিয়েছি। কিন্তু একে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি, তার ওপর বাড়ি ভাড়া, কীভাবে মেটাব জানি না। পরিবারের মুখেই বা কীভাবে অন্ন তুলে দেব, ভেবে পাচ্ছি না। বাড়িটা হলে ভাড়ার টাকাটা বাঁচে। কেউ বলছেন, জানালা-দরজা না হোক, বাড়ির ছাদ হলেই ঢুকে পড়ব অসম্পূর্ণ বাড়িতে। প্রতিবেশীরা বলেন, ওই সমস্ত উপভোক্তার অবস্থা দেখলে চোখে জল আসে। কিন্তু তাঁদের করারও কিছু নেই। সকলেই কেন্দ্রের রাজনীতির বলি।
১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অষ্টম মণ্ডল বলেন, এই ওয়ার্ডেই প্রায় ৮০টি বাড়ি অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দু’একজন পুরসভা থেকে টাকা পেয়ে মেটাবে এই শর্তে ঠিকাদারকে দিয়ে বাড়ির ছাদ করিয়েছেন।
রামপুরহাট পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন ভকত বলেন, ওই সময় উপভোক্তারা কেউ প্রথম, কেউ দ্বিতীয় কিস্তি পেয়েছেন। তারপর কেন্দ্র থেকে আর কোনও বারদ্দ অর্থ আসেনি। ফলে ওই বাড়িগুলি অর্ধনির্মিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এখনও প্রায় দুশো উপভোক্তাকে প্রথম কিস্তিরই টাকা দেওয়া যায়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কেন্দ্র না দিক, আবাস প্রকল্পের টাকা ডিসেম্বর মাস থেকে রাজ্য সরকার দেবে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় আশায় বুক বাঁধছেন সুরতাজ মনসুরী, হাওয়াজান বিবি, দীপু দাস, সুবীর সিংরা। তাঁরা বলেন, সরকারি পাকা বাড়ির স্বপ্ন ফিকে হয়ে এসেছিল। মুখ্যমন্ত্রী সেই স্বপ্ন পূরণে আলো দেখিয়েছেন।