সামাজিক কল্যাণ কর্মে সাফল্য ও জনখ্যাতি। বাতজ সমস্যায় বিব্রত হতে পারেন। কাজ কারবারে শুভ। ... বিশদ
কিন্তু কেন জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের দাবি? সমাজমাধ্যমে বাংলাদেশের স্বঘোষিত নিয়ন্ত্রকরা লিখছেন—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, একজন হিন্দু। ‘ঠাকুর’ পদবির একজন হিন্দুর লেখা গান কীভাবে একটা ইসলামিক দেশের জাতীয় সঙ্গীত হয়?’ আবার কেউ লিখেছেন—‘বিধর্মী রবীন্দ্রনাথ ওই গানটি তাঁর আরাধ্যা মা কালীর ভজনায় লিখেছিলেন! সেই গান এখনই পরিবর্তন করা হোক! গানের মধ্যে বাংলাদেশ সংক্রান্ত একটি শব্দও নেই।’ এহেন আজগুবি যুক্তিগুলিকে সমর্থন করছে জামাত, হেফাজতে ইসলামের মতো মৌলবাদে বিশ্বাসী সংগঠনের মাঝারি স্তরের নেতারা। সে দেশের ইসলামিক ‘হুজুররা’ বিভিন্ন ধর্মীয় জলসায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের দাবিতে গলা চড়াচ্ছেন। তবে জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের এহেন তোড়জোড়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বাংলাদেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। গত ৬ সেপ্টেম্বর গোটা দেশজুড়ে ‘সমবেত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত’ কর্মসূচি নিয়েছিল উদীচী, জাতীয় খেলাঘর ও আসরের মতো সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলি। কিন্তু মৌলবাদীদের হুমকি এবং কর্মসূচিটি আওয়ামি লিগের, এই প্রচার চালিয়ে গোটা পরিস্থিতি বিগড়ে দেওয়া হয়। ঢাকার শহিদ মিনারে কর্মসূচির জন্য নির্ধারিত জায়গায় বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে মাদ্রাসার ছাত্ররা জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের দাবিতে অবস্থান শুরু করে দেয়। নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে কর্মসূচি বাতিল করে দেয় সেনা। কিন্তু পিছপা হয়নি বাংলাদেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। শুক্রবার ঢাকার একটি অডিটোরিয়ামে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা। পাশাপাশি সমাজমাধ্যমেও সরব হয়েছেন কয়েকশো মানুষ। সেখানে হিজাব মাথায় দিয়ে কোনও মহিলা রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সঙ্গীতের পক্ষে সওয়াল করলেই, তাঁর গায়ে ইহুদি ও ইজরায়েলের তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাউকে বলা হচ্ছে, হিজাব খুলে ঘোমটা টেনে ভারতে চলে যাও। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০১৪ সালের ২৬ মার্চ ঢাকার জাতীয় প্যারেড ময়দানে ‘ও আমার সোনার বাংলা......’ ২, ৫৪, ৫৩৭ জন সমবেত কন্ঠে গেয়ে নাম তুলেছিলেন গিনেস বুকে।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরোধী এহেন জিগির মূলত কে তুলল? ১৯৭১’এর স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্বে পাকসেনা বাহিনীকে সর্বান্তকরণে সাহায্য করতে ‘রাজাকার’ বাহিনী গড়েছিলেন যিনি, তিনি জামাতের গোলাম আজম। প্রধান যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গোটা দেশে ঘৃণিত ছিলেন। ৯০ বছরের কারাদণ্ড ভোগের সময় জেলেই মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। গোলাম আজমের পুত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে ১৫ বছর আগে বহিঃষ্কৃত প্রাক্তন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আজমি গত বুধবার সমাজমাধ্যমে জাতীয় সঙ্গীত ও সংবিধান পরিবর্তনের দাবিতে সোচ্চার হয়ছেন। তারপর থেকেই ‘নখ-দাঁত’ বের করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরোধিতায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে মৌলবাদীরা।