ব্যবসা সূত্রে উপার্জন বৃদ্ধি। বিদ্যায় মানসিক চঞ্চলতা বাধার কারণ হতে পারে। গুরুজনদের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন ... বিশদ
সিরিয়াল নিয়ে রাখঢাক না রেখেই এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সিরিয়ালে একটা ঘরে তিনটে বউ দেখানোর দরকার কী? তিন-চারটে কুটুন্তির কী দরকার? এ যেন কৈকেয়ী-মন্থরার যুগ। একে অপরকে বিষ খাওয়াচ্ছে। জলে ওষুধ মিশিয়ে দিচ্ছে। এসব সামাজিক অবক্ষয় ডেকে আনছে। দয়া করে এসব বেশি দেখাবেন না। যাঁরা এসব জানেন না, তাঁরাও জেনে যাচ্ছেন। ভালো জিনিস বেশি করে দেখান।
মুখ্যমন্ত্রীর সেই মনের কথাই উঠে এসেছে মন্ত্রকের নোটিসে। ১৯৯৪ সালের কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক রুলস-এর সংশোধন চায় তারা। সেখানে টিভির অনুষ্ঠানে মহিলাদের দেখাতে হবে ‘পজিটিভ’ রোলে। অর্থাৎ সংসারে প্যাঁচ কষে অন্যকে বিপদে ফেলার ‘খল’ চরিত্রগুলিতেই আপত্তি কেন্দ্রের, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। মহিলারা সমাজে নেতৃত্ব দেন, তাঁরা সাহসী হন এবং তাঁদের নৈতিকতা থাকে, এমন চরিত্রই আনতে হবে গল্পে বা ঘটনায়। সংশোধনীর বিষয়ে যদি কারও কোনও মতামত বা পরামর্শ থাকে, তাহলে মন্ত্রককে এক মাসের মধ্যে জানাতে হবে। ১ নভেম্বর এই মর্মে নোটিস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের আন্ডার সেক্রেটারি সোনিকা খট্টর।
এদিকে বউদির বিরুদ্ধে ননদ আদাজল খেয়ে না লাগলে, অথবা বউমার গুণে শাশুড়ি পঞ্চমুখ হলে সিরিয়ালের কাহিনী তো আলুনি হয়ে যাবে। তার দায় কে নেবে? আইন করে সব মহিলাকে ভালো চরিত্রে দেখানো কি আদৌ সম্ভব, প্রশ্ন তুলেছেন বাংলা সিরিয়ালের অন্যতম কাহিনীকার-প্রযোজক ও পরিচালক সুশান্ত দাস। কৃষ্ণকলি, আলোছায়া, কে আপন কে পর, কুঞ্জছায়া বা চিরদিনই তুমি যে আমার-এর মতো জনপ্রিয় সিরিয়ালগুলির স্রস্টা সুশান্তবাবুর কথায়, সিরিয়াল পারিবারিক বিনোদন। সেখানে এমন কিছু দেখানো উচিত নয়, যা সমাজে অবক্ষয় ডেকে আনে। পাশাপাশি একথাও ঠিক, বাংলা সিরিয়ালে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিন্তু নারীদের উত্তরণের গল্প বলা হয়। তাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করতেই কিছু খারাপ চরিত্র আনতে হয়। সমাজেও কি সবাই ভালো? খারাপ লোক নেই? সেগুলিরই প্রতিফলন থাকে সিরিয়ালগুলিতে। তবে অভিনেত্রী লাবনি সরকার অবশ্য কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, এটি সাধু উদ্যোগ। কারণ, একদিকে মেয়েরা বিশ্ব জয় করছে, অন্যদিকে সিরিয়ালগুলিতে নারীদের দু’শো বছর আগের মানসিকতা দেখানো হচ্ছে। নামজাদা মহিলা চিত্র নাট্যকাররাই সিরিয়ালে নারীদের চরিত্রকে ধুলোয় লুটিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন। অভিনয় আমার রুটিরুজি। এসব কথা বলা হয়তো উচিত নয়। তবু বলছি, নারীদের মানসিকতাকে কদর্য করে দেখানোর ধুম লেগেছে সিরিয়ালগুলিতে। এসব বন্ধ হওয়া উচিত। তবে অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তীর কথায়, কেন্দ্রীয় সরকার ঠিক কী চায়, তা আরও স্পষ্ট করে বলা দরকার। কারণ তাদের বক্তব্যটি বাস্তবসম্মত নয়। অভিনেতা সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, তাহলে তো রামায়ণ বা মহাভারতের মতো কাহিনীতে সীতাহরণ বা বস্ত্রহরণ দেখানো যাবে না। রবীন্দ্রনাথের চোখের বালিও তো পর্দায় না দেখানোর কথা!