সুকান্ত বসু, কলকাতা: এক বালককে নৃশংসভাবে খুনের মামলার শুনানি যখন একেবারে শেষ পর্যায়ে, তখন বিচারক ‘ব্যক্তিগত কারণে’ এই মামলার শুনানি আর শুনতে চান না বলে মামলাটিকে মুখ্য বিচারকের এজলাসে পাঠিয়ে দিলেন। এই ঘটনায় কলকাতা নগর দায়রা আদালতের আইনজীবীদের মধ্যে শোরগোল পড়ে যায়। প্রবীণ আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, এটা নজিরবিহীন ঘটনা। এভাবে মামলা স্থানান্তরের কথা সাম্প্রতিক অতীতে তাঁরা শোনেননি বলেও জানান। কোর্ট সূত্রের খবর, কলকাতা প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক গুরুপদ বিশ্বাস গত সোমবার এই খুনের মামলাটি তাঁর এজলাস থেকে স্থানান্তর করে দেন কলকাতা নগর দায়রা কোর্টের মুখ্য বিচারক সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলালের এজলাসে। সূত্রের খবর, আগামী ১০ এবং ১১ ডিসেম্বর মুখ্য বিচারকের এজলাসে এই মামলার সওয়াল শুরু হবে। ওইদিন সরকারপক্ষের সওয়ালে অংশ নেওয়ার কথা। এনিয়ে মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী নবকুমার ঘোষ বলেন, পুরো ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। মামলা স্থানান্তরের কথা শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি। কী কারণে বিচারক এই মামলা স্থানান্তর করলেন, তা বলতে পারব না। আমরা চাই, এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। বিচারক গুরুপদ বিশ্বাসের কোর্টে সরকারপক্ষের সওয়াল হয়ে গিয়েছে, সেখানে এখন চলছিল দুই অভিযুক্তের আইনজীবীর সওয়াল। তার মধ্যেই এই ঘটনা ঘটে গেল। আইনজীবীদের কথায়, যেহেতু মামলাটি অন্য কোর্টে স্থানান্তর হল, তাই নতুন করে ফের দু’পক্ষের সওয়াল শুনতে হবে বিচারককে। এদিকে, অন্য এজলাসে মামলা স্থানান্তরের বিষয়ে দুই অভিযুক্তের আইনজীবী গণেশ মাইতি কোর্ট চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, এই মামলায় উষ্মা প্রকাশ করে আমি কিছু কথা বলেছিলাম। তারপরই জানতে পারলাম, মামলাটি প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কী নিয়ে উষ্মা প্রকাশ? যদিও তা নিয়ে খোলসা করে কিছু বলেননি গণেশবাবু। তিনি বলেন, আমার মক্কেলরা দীর্ঘদিন জেল হেফাজতে আছে। তাই এই মামলা ভালোয় ভালোয় শেষ হোক, এটাই চাইছি।
কী ছিল অভিযোগ? পুলিস ও কোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালে বউবাজার থানা এলাকায় সাড়ে ৯ বছরের এক বালককে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগে এও বলা হয়েছে, অপহরণের পর তাকে একটি গোডাউনে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করার পর মৃতদেহটি একটি জুতোর বাক্সে ভরে গঙ্গায় ফেলে দেওয়া হয়। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিস দু’জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ, হত্যা ও সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের হয়। মৃতদেহের সন্ধানে পুলিস গঙ্গায় ডুবুরি নামিয়ে নানা জায়গায় তল্লাশি চালায়। কিন্তু মৃতদেহের সন্ধান পায়নি পুলিস। ঘটনার গুরুত্বের কথা অনুধাবন করে মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে কলকাতা গোয়েন্দা পুলিসের হোমিসাইড শাখা। তদন্ত শেষ করে পুলিস ব্যাঙ্কশাল কোর্টে চার্জশিট দেয়। পরে কলকাতা নগর দায়রা কোর্টের প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে চার্জ গঠন করে শুরু হয় মূল মামলার বিচার। সেখানে মামলার শুনানি যখন একেবারে শেষ পর্যায়ে, তখনই এজলাস বদলের ঘটনাটি ঘটে।