কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
বোলপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী ফিরোজ পাল বলেন, লাভপুরের ওই খুনের মামলায় আগের চার্জশিটে মনিরুল সাহেবের নাম ছিল না। সেই সময় চার্জশিটে ৪২ জনের নাম ছিল। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিস আদালতে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিয়েছে। এই চার্জশিটে ২৩ জনের নাম রয়েছে। তাতে মুকুল রায়ের নামও রয়েছে। মামলাটি বারাসত আদালতে স্থানান্তরিত হবে। ওই আদালতে এমএলএ, এমপিদের মামলা চলে। তাই নিয়ম মেনে সেখানেই মামলাটি চলবে। তবে, কোন কোন ধারা অভিযুক্তদের দেওয়া হয়েছে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের লাভপুর হত্যা মামলার নতুনভাবে তদন্ত করে চার্জশিট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। তাই চলতি মাসে ঘটনার তদন্তকারী অফিসার বোলপুর আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। চার্জশিট জমা পড়তেই বীরভূম জেলায় রাজনৈতিক তর্জা উস্কে উঠেছে। তবে মৃতদের মা জরিনা বিবি মনিরুল ইসলাম সহ অন্য অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।
প্রসঙ্গত, বালিঘাট নিয়ে দ্বন্দ্ব মেটাতে ২০১০ সালে লাভপুরের নবগ্রামে মনিরুল সাহেবের বাড়ির উঠানে সালিশি সভা হচ্ছিল। সেই সালিশি সভায় বচসার জেরে কটুন শেখ, ধানু শেখ ও তরুক শেখকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে। সেই সময় মনিরুল সাহেব তৃণমূলে ঢুকে গিয়েছেন। ঘটনার পর মৃতদের পরিবারের তরফে মনিরুল ইসলাম সহ ৫২ জনের নামে লাভপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গেই মনিরুল ইসলাম লাভপুর থেকে তৃণমূলের বিধায়ক হয়ে যান। পরে এক জনসভায় মনিরুল সাহেব তিনজনকে মারার প্রসঙ্গ তোলেন। যা ঘিরে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। পরে অবশ্য পুলিসের তরফে যে চার্জশিট জমা পড়ে তাতে মনিরুলের নাম ছিল না। সেই খবর জানতে পেরে নিহতদের পরিবার হাইকোর্টে পুনরায় তদন্তের আবেদন করেন। চলতি বছরেই ৪সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বীরভূম পুলিসকে মামলাটির ফের তদন্তের নির্দেশ দেয়।
এরই মধ্যেই চলতি বছরে লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরপরই তৃণমূলের বিধায়ক মনিরুল সাহেব দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন। ঘটনার পুনরায় তদন্তে থাকা বিশেষ দল চলতি সপ্তাহে বোলপুর আদালতে নতুন চার্জশিট পেশ করে। নতুন সেই চার্জশিটে মনিরুল ইসলামের সঙ্গেই বিজেপির রাজ্য নেতা মুকুল রায়ের নাম রয়েছে।
উল্লেখ্য, ঘটনার সময় মুকুলবাবু তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাই ওই ঘটনার পিছনে তাঁর ‘প্ররোচনা’ রয়েছে বলে পুলিস চার্জশিটে নাম উল্লেখ করেছে বলে সূত্রের দাবি।
জেলা পুলিসের এক কর্তার দাবি, প্রথম দিকে আদালতে মামলাটি চলার সময় সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে মনিরুল ইসলামের নাম বাদ গিয়েছিল। পরে ফের হাইকোর্টে আবদেন জানানো হলে তদন্ত শুরু হয়। সেই তদন্তেই তাঁদের নাম উঠে আসে। তাই চার্জশিটে নাম উল্লেখ হয়েছে।
এই ঘটনায় মৃতদের মা জরিনা বিবি বলেন, আমাদের অভিযোগ করার পরও মনিরুল ইসলামের নাম বাদ গিয়েছিল। কিন্তু, এবার পুলিস তার নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে। তাতে আমরা খুবই খুশি। আমার ছেলেদের যারা মেরেছে সেই মনিরুল ইসলাম সহ বাকিদের ফাঁসি চাই।
মনিরুল ইসলাম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, আইন আইনের পথে চলবে। আইনের মাধ্যমে লড়াই করব। তাতেই সবকিছু প্রমাণ হয়ে যাবে।
অন্যদিকে, বিজেপির বীরভূম জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, লাভপুরের ওই ঘটনায় পুলিস আগে মনিরুল সাহেবের নাম এফআইআর থেকেই বাদ দিয়েছিল। এখন ফের নাম সংযোজন করেছে। তাই এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই করা হয়েছে। তৃণমূলের কথা শুনে পুলিস এটা করেছে। এছাড়া রাজ্য নেতা মুকুলবাবুর নামও চার্জশিটে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বাড়ি কলকাতায়। অথচ বীরভূমের মামলায় তাঁর নাম জড়ানো হয়েছে। তাই এটা যদি সত্যি হয় তাহলে জেলাজুড়ে বিজেপি আন্দোলন করবে।
অন্যদিকে, বিচারবিভাগীয় বিষয় বলে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। দলের দাবি, হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিস ঘটনার তদন্ত করেছে। তাই তদন্তে যা উঠে এসেছে পুলিস তা করেছে।