মানসিক অস্থিরতা দেখা দেবে। বন্ধু-বান্ধবদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। কর্মে একাধিক শুভ যোগাযোগ আসবে। ... বিশদ
মঙ্গলবার দমদম বেলঘরিয়া স্টেশনের মাঝে শ্রীপল্লির কাছে রেল লাইন পারাপার করতে গিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় এক দাদু ও তাঁর নাতনির। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু এই দুটি মৃত্যু নয়, এই রেল লাইনে দুই পারের বহু বাসিন্দার প্রাণ গিয়েছে। আকছার ঘটে দুর্ঘটনা। দ্রুত গতিতে আসা ট্রেন কেড়ে নেয় তরতাজা প্রাণ। দমদম ও বেলঘরিয়া দুই স্টেশনের মাঝে মাত্র দুটি আন্ডারপাস রয়েছে। একটি পাতিপুকুর, অন্যটি ৩৪ সি বাসস্ট্যান্ডের কাছে। বাকি পুরো রেল লাইনে দুই পারের মানুষ নিত্য ঝুঁকি নিয়েই পারাপার করেন। এই দুই স্টেশনের মাঝে লোকাল ও গ্যালপিং ট্রেন ৫০ থেকে ৭০ কিমি গতিবেগে চলে। সোজা রেল লাইন হওয়ায় ট্রেনের গতিবেগও থাকে বেশি।
এদিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, শ্রীপল্লির কাছে দুই আরপিএফ জওয়ান পাহারা দিচ্ছেন। কিন্তু, তাঁদের এড়িয়েই চলছে পারাপার। তবে লাইন পাহারায় স্থানীয় যুবকরা এগিয়ে এসেছেন। রানা দাস, সুব্রত ভক্ত, বাবলু সাধক, তপন সরকার, আকাশ সাহা লাইনের ধারে ঠায় বসে রয়েছেন। কেউ পারাপার করতে এলেই ফিরিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। যুবকরা বলেন, বরানগরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দারা এপারের (শ্রীপল্লি) দিকে আসতে বাধ্য হন। কারণ এই পারে রয়েছে ৬টি উচ্চ ও প্রাথমিক স্কুল। পড়ুয়াদের স্কুলে পৌঁছাতে ও নিয়ে আসতে লাইন পারাপার করতেই হয়। নইলে ৩ কিমি ঘুরতে হয়। সময় বাঁচাতে কেউই ৩ কিমি ঘুরে আসতে চায় না।
শ্রীপল্লির ১০০ মিটার দূরেই সিসিআর ব্রিজ। বুধবার দুপুর ১২টা নাগাদ দেখা গেল শিশু কোলে মহিলা, বৃদ্ধ বৃদ্ধা, স্কুল পড়ুয়া সকলেই ঝুঁকি নিয়ে রেল লাইন পারাপার করছেন। সাইকেল নিয়েও অনেককে পারাপার হতে দেখা গেল। এখানে নজরদারিতে কোনও আরপিএফ নেই। সিসিআর ব্রিজের কাছেই বাড়ি গোপাল সরকারের। ১৯৯৫ সালে তাঁর বাবা বাবলু সরকার ট্রেন লাইন পার হতে গিয়ে মারা যান। মৃতের স্ত্রী শেফালি সরকার স্বামীর কথা স্মরণ করতে গিয়ে কেঁদেই ফেললেন। তিনি বলেন, স্বামীর মত অনেকের প্রাণ গিয়েছে। যে কোনও প্রয়োজনে আমাদের ওপারে যেতে হয়। আর ওপারের মানুষ এদিকে আসে। স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্য বুবাই কর্মকার বলেন, কত মানুষ মারা গিয়েছেন, তার হিসেব নেই। আন্ডারপাস না হলে, আরও মানুষের প্রাণ যাবে।
এদিকে, দাদু-নাতনির মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি বনহুগলির জিএস টু এলাকা। ছোট্ট জুঁইয়ের বাবা-মা দু’জনেই বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। বাবা তারাশঙ্কর ধর কাঁদতে কাঁদতে বললেন, মেয়েকে নাচ শেখাতাম রিয়েলিটি শোয়ে চান্স পাবে বলে। স্বপ্ন দেখতাম, টিভিতে ওর নাচ দেখে একদিন সবাই আমার নাম জানবে। আজ ওর মৃত্যুর পর আমার নাম সবাই জানল। প্রিয় ছাত্রীর স্মরণে বরানগরের তীর্থভারতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এদিন ছুটি দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, আমার বিদ্যালয়ের ১৩৩ জন পড়ুয়ার মধ্যে ৪৫ জনই আসে রেল লাইনের ওপার থেকে। আন্ডারপাস ওখানে সত্যিই খুব জরুরি।
বরানগরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সুনত বিশ্বাস বলেন, আন্ডারপাসের দাবিতে ১০ বছর আগে থেকে চিঠিচাপাটি চলছে। রেলকর্তারা সার্ভেও করে গিয়েছেন। কিন্তু, আন্ডারপাস হয়নি। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, আন্ডারপাসের লিখিত দাবিদাওয়া এসেছিল বলে জানা নেই। আগে কী প্রক্রিয়া হয়েছিল, তা দেখা হচ্ছে।