সৌরাংশু দেবনাথ , কলকাতা : ‘আমার পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকার প্রয়োজন নেই।’ লন্ডন থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলের শুরুতেই বলে উঠেছিলেন। মিনিট কুড়ির কথোপকথনে ঝরে পড়েছিল অনেক অভিমান ও আক্ষেপ। মাত্র ২৮ টেস্টে পৌঁছে গিয়েছিলেন ১০০ উইকেটে। সাড়া জাগানো শুরুর পরও তাঁর কেরিয়ার থেমে গিয়েছিল ৩৩টি টেস্টেই। সেই ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হয় আজও। বর্তমানকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অকপট দিলীপ দোশি।

প্রশ্ন: কেরিয়ারের প্রথম টেস্ট সিরিজে ২৭ উইকেট ছিল আপনার। নিশ্চয়ই শুনেছেন, সম্প্রতি সেই রেকর্ড স্পর্শ করেছেন অক্ষর প্যাটেল?
দোশি: আমাকে ১০ বছরেরও বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছিল অভিষেকের জন্য। গর্বের মুহূর্ত। অভিষেক সিরিজে ২৭ উইকেট নেওয়ার পর ভীষণ আনন্দ লাগছিল। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে অক্ষরের অনুভূতিটা ভালোই উপলব্ধি করতে পারছি। তবে রেকর্ড চিরস্থায়ী নয়। কেউ না কেউ তা ছাপিয়ে যায়।

প্রশ্ন: ক্রিকেটমহলের বিশ্বাস, আরও অনেক বেশি টেস্ট খেলার দক্ষতা ছিল আপনার। আপনি কী মনে করেন?
দোশি: ৩২ বছর বয়সে অভিষেক সত্ত্বেও আরও অনেকদিন খেলার ক্ষমতা আমার ছিল। কিন্তু অনেকে তা চাননি। টেস্ট খেলার আগে কখনও ইরানি কাপে খেলার অনুমতি পর্যন্ত পাইনি। কারণ আমি উইকেট নিলে অনেকের সমস্যা হতো। জাহির আব্বাসদের বিরুদ্ধে কেরিয়ারের শেষ টেস্টেও আমাকেই সেরা বোলার হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন ধারাভাষ্যের দায়িত্বে থাকা প্রসন্ন, লালা অমরনাথের মতো ব্যক্তিত্বরা। তা সত্ত্বেও পরের টেস্টে বাদ পড়েছিলাম। প্রাদেশিকতা কিংবা পক্ষপাতিত্ব, যে নামেই ডাকা হোক, এটাই ভারতীয় ক্রিকেটের নোংরা রাজনীতি। তারই শিকার হয়েছিলাম আমি।

প্রশ্ন: আইপিএল কতটা ক্ষতিকর হয়ে উঠছে স্পিনারদের কাছে?
দোশি: আইপিএলে মাত্র চার ওভার হাত ঘুরিয়েই রাতারাতি নায়কের সম্মান মেলে। এই ফরম্যাটে প্রায়শই উপহার মেলে উইকেট। সেই সাফল্যের নিরিখে দেশের হয়ে খেলে ফেলে কেউ কেউ। দেখুন, ভালো স্পিনার হতে গেলে লাইন-লেংথ ও ফ্লাইটের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি। মুশকিল হল, এখন কারও কাছে শেখার সময়ই নেই। তবে আমাকে মুগ্ধ করছে অশ্বিন।

প্রশ্ন: অশ্বিন তাঁর বোলিং নিয়ে নানা পরীক্ষা করেন। আপনি কি তা সমর্থন করেন?
দোশি: অশ্বিন খুব বুদ্ধিমান। ও নিশ্চয়ই বোঝে যে, স্পিনারের ৯৮-৯৯ শতাংশ উইকেটই আসে স্টক বলে। ওর মতো বড়মাপের স্পিনার বৈচিত্র্যেই ব্যাটসম্যানকে বোকা বানাতে পারে। অতিরিক্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন নেই।

প্রশ্ন: ভারতের সর্বকালের সেরা ম্যাচ উইনার বোলার হিসেবে কার কথা বলবেন?
দোশি: নিয়মিত যিনি ম্যাচ জেতান, আমার কাছে তিনিই প্রকৃত ম্যাচ উইনার। যেমন কপিল দেব। আবার দু’তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়েও ম্যাচ জেতানো যায়। আমাদের সময়ে বেদি, প্রসন্নর থেকে তাই এগিয়ে রাখতাম সেলিম দুরানিকে। এমনকী চন্দ্রশেখরও ছিলেন একজন ম্যাচ উইনার। এখন জাদেজা, অশ্বিন, সামি, বুমরাহ, অক্ষররাও বিভিন্ন কন্ডিশনে ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখে।

প্রশ্ন: রিস্ট স্পিনারদের দিন কি শেষ হতে চলেছে?
দোশি: কুলদীপ যাদব এখনও টেস্ট খেলার উপযুক্ত নয়। তাই সাফল্য পাচ্ছে না। তার মানে রিস্ট স্পিনারদের দিন শেষ, এটা মোটেই নয়।