সামাজিক কল্যাণ কর্মে সাফল্য ও জনখ্যাতি। বাতজ সমস্যায় বিব্রত হতে পারেন। কাজ কারবারে শুভ। ... বিশদ
হাঁচির বাতাসও যাঁর সহ্য করার কথা ছিল না, তাঁরই টানা ১৫মাস কারাবাস হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, বাবার শাস্তির ভাগ মেয়েকেও পেতে হয়েছে! কিন্তু কোনও কথায় আমল না দিয়ে সর্বক্ষণ বাবাকে আগলে রেখে গিয়েছেন। মায়ের মৃত্যুর পর সেটাই ছিল যেন তাঁর প্রধান কাজ। তিহার থেকে বাবার আগেই নিজের মুক্তি হলেও অনুব্রতকে নিয়েই বোলপুরের বাড়ি ফিরলেন মেয়ে সুকন্যা।
গত দেড় দশক ধরে অনুব্রত মণ্ডল বীরভূমের কার্যত বেতাজ বাদশা। অনেকে বলেন, তাঁর কথায় বাঘে-গোরুতে এক ঘাটে জল খেত। কিন্তু পরিবারকে কখনোই রাজনৈতিক গণ্ডির মধ্যে আনতে পছন্দ করতেন না কেষ্ট। বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানও অনেকসময় এড়িয়ে চলতেন। মেয়ে সুকন্যাও বাবার রাজনৈতিক চৌহদ্দির মধ্যে কোনওদিনই ঢোকেননি। বরং বাবার সঙ্গে তাঁর কোনও ছবি নেই বলে আক্ষেপ করে বাবাকে টেনে নিয়ে গ্রামের বাড়ির দুর্গাপুজোয় সেলফি তুলতেন। পরপর মা, ঠাকুমার মৃত্যুতে কিছুটা অসহায় হয়ে পড়েন। তারপরই বাবা ও মেয়ে মিলেই থাকতেন নিচুপট্টির বাড়িতে। কিন্তু গোরু পাচার মামলায় কেষ্টর পাশাপাশি নাম জড়ায় সুকন্যারও। যেসব কোম্পানিতে গোরু পাচারের টাকা ঢুকেছে বলেছে অভিযোগ ওঠে তার গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন সুকন্যা। সেকারণে তাঁকে প্রথমে দিল্লিতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। গতবছর ২৬এপ্রিল বাবার মতো সুকন্যারও ঠাঁই হয় তিহার জেলে। তার আগে বাবা জেলে থাকাকালীন কলকাতার চিনার পার্কের বাড়ি ও বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়িতে সুকন্যা থাকতেন। টিভিতে সর্বক্ষণ বাবার নামে বিষোদ্গার শুনতেন। এও শোনা যায়, তাঁর কোনও খোঁজখবর নেননি দলের কেউ। প্রাথমিক স্কুলের চাকরি নিয়েও নানা প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু কোনও বিষয় নিয়েই মুখ খুলতে কিংবা কারও বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
সূত্রের খবর, তিহার সেল থেকেই বাবার সমস্তকিছুর তদারকি তিনি করতেন। বাবার ওষুধপত্র থেকে শুরু করে আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ। এমনকী কেষ্টর সঙ্গে একই সেলে থাকা বিহারের এক জেলবন্দি কী রান্না করে বাবাকে খাওয়াবেন, তাও নাকি মাঝেমধ্যে বার্তা আকারে পাঠাতেন সুকন্যা। বাবার জেলমুক্তির ১২দিন আগে সুকন্যা তিহার থেকে বেরলেও তিনি বোলপুর আসেননি। বাবাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে এলেন। সোমবার সন্ধ্যায় তিহার জেলের বাইরে দেখা যায়, বাবার জন্য নতুন জুতো নিয়ে মেয়ে হাজির। বলতে শোনা যায়, ‘বাবা, ওগুলো ফেলে দিয়ে এটা পরো।’ তারপর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফেরা। হাতে মায়ের একটি ছবি। সুকন্যা বাবার জন্য যেন মা ও মেয়ে উভয়ের ভূমিকায় পালন করছেন। মঙ্গলবারও বাবার সঙ্গে কেউ কথা বলতে এলে সুকন্যাও পাশে বসে শুনছেন। প্রয়োজনে মতামতও দিচ্ছেন। মনে করা হচ্ছে, হয়তো বাবাকে কেউ যাতে আর ভুল পথে চালনা না করতে পারে তাই কড়া দৃষ্টি রাখছেন সুকন্যা। দলের এক কর্মী বলেন, মেয়েটা দাঁতে দাঁত চেপে লড়ছে। সত্যিই ও সুকন্যা!