উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৪নভেম্বর সিউড়ির রবীন্দ্রসদনে দলের জেলা পর্যায়ের বিজয়া সম্মিলনীতে অনুব্রতবাবু আগামী চারমাসের কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন। সেইমতো দলের ব্লক, অঞ্চল ও বুথস্তরের নেতৃত্ব এবং কর্মীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে আসতে বলা হয়। তার জেরে আজ, শুক্রবার থেকে সেই সম্মেলন শুরু হতে চলেছে। সিউড়ির পুরন্দরপুরে এই সম্মেলন প্রথম হচ্ছে। সাঁইথিয়া ও সিউড়ি বিধানসভার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ব্লকগুলির নেতা-কর্মীরা এই সম্মেলনে হাজির থাকবেন। পরে অবশ্য সাঁইথিয়াতেও এরকমই একটি সম্মেলন হবে।
দলের বীরভূম জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, আজ, পুরন্দরপুরে প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখা হয়েছে। যদিও ব্লক নেতৃত্বই এই সম্মেলনের আয়োজন করছে। সম্মেলনে জেলা কমিটির নেতৃত্বের প্রশ্নের উত্তর দিতে বুথস্তরের নেতারা পড়াশোনা করেছেন।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা নেতৃত্ব বুথের হাল-হকিকত সম্পর্কে জানতে চাইছেন স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে। সেইমতো সব এলাকাতেই ব্লক সভাপতিদের কার্যত হিমশিম অবস্থা। জেলার প্রত্যেকটি ব্লকের নেতৃত্বই অঞ্চল ও বুথের নেতাদের নিয়ে প্রাথমিক একটি করে সম্মেলনে করেছে। তাতে বুথের খুঁটিনাটি তথ্য জানানো হয়েছে। তার জেরে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রশ্নবানের কাছে দাঁড়ানোই এখন অঞ্চল ও বুথস্তরের নেতৃত্বের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের অনেকেই বলছেন, সব তথ্য জানার পরও জেলা নেতৃত্বের কড়া প্রশ্নের উত্তর দিতে অনেকেরই গলদঘর্ম শুরু হয়ে যায়।
তৃণমূল সূত্রে খবর, জেলা সভাপতি প্রত্যেকটি বুথের বিষয়েই খোঁজ নিতে পারেন। সেই বুথে কত ভোটার রয়েছেন। কত পুরুষ, কত মহিলা। গত লোকসভা নির্বাচনে কত ভোটে লিড ছিল বা পিছিয়ে ছিল তার উত্তর দিতে হতে পারে। এমনকী, সেই বুথে হারের কারণ কী? সেটাও জানা হবে। তাছাড়া হারের কারণ নিয়ে পর্যালোচনা করে তার মীমাংসা করা গিয়েছে কিনা সেই ব্যাপারেও সদুত্তর চাইতে পারেন জেলা সভাপতি। বুথ সভাপতিদের উত্তর মিলিয়ে দেখবেন জেলার নেতারা। সঠিকভাবে উত্তর দিতে না পারলে নেমে আসতে পারে শাস্তির খাঁড়া। ওই সম্মেলন থেকেই সংশ্লিষ্ট নেতাকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে দল।
প্রসঙ্গত, বীরভূমে কার্যত ‘কর্পোরেট’ স্টাইলে দল চালায় তৃণমূল। গত ২০১৬সালের বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল নেতৃত্ব জেলাজুড়ে এভাবেই বিধানসভা ভিত্তিক বুথ সম্মেলন করেছিল। তাছাড়া লোকসভা ভোটের আগেও এরকম সম্মেলন হয়েছে। তার জেরে জেলায় লোকসভা নির্বাচনের দু’টি আসনে তৃণমূল জয় পেলেও বুথে দলের হার হয়েছে। পুরসভাগুলির অধিকাংশ ওয়ার্ডেও তৃণমূলের ভরাডুবি হয়েছে। সেইসব ফলাফলের পর্যালোচনা ইতিমধ্যে করেছে দল। কিন্তু, এবার ২০২১সালের বিধানসভা নির্বাচন তৃণমূলের কাছে অনেকটাই চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে জেলায় তৃণমূলের সঙ্গে সঙ্গেই টেক্কা দিচ্ছে বিজেপি। বিজেপি বহু বুথে লোকসভা নির্বাচনে ভোটের নিরিখে এগিয়ে থাকায় তারা উজ্জীবিত। তাই বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতিতে এখন থেকেই অনুব্রতবাবু ঢাকে কাঠি দিচ্ছেন। আজ, শুক্রবার থেকে আগামী ৭ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা সম্মেলন হবে। প্রথমদিকে বিধানসভা ভিত্তিক বুথ সম্মেলন হবে। পরে ডিসেম্বর মাস থেকে ব্লকভিত্তিক মহিলা সম্মেলন হবে। তৃণমূলের আর এক সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, বিজেপি আগে উজ্জীবিত থাকলেও বর্তমানে তাদের সংগঠন মুখ থুবড়ে পড়েছে। এনআরসি ইস্যুতে বিজেপির প্রতি মানুষের কোনও আস্থা নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরেই গভীর বিশ্বাস রাখবেন মানুষ। তাই মানুষের সেই আবেগের পাশে দাঁড়াতে বুথস্তরে সংগঠন মজবুতির কাজ চলছে। সেইজন্য জেলা সভাপতি বুথভিত্তিক সম্মেলনে নামছেন। সম্মেলনগুলিতে অনুব্রতবাবুর পাশাপাশি আমরাও বুথস্তরের নেতৃত্বকে প্রশ্ন করব।
সিউড়ির একটি বুথের সভাপতি বলেন, আজ, পুরন্দরপুরের সম্মেলনে অংশ নেওয়ার আগে বুথের যাবতীয় তথ্য জোগাড় করে নিয়েছি। জেলা সভাপতির সব প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত রয়েছি।
বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, তৃণমূল বিধানসভাভিত্তিক বুথ সম্মেলন করলেও কোনও লাভ হবে না। তাদের নেতাদের ‘কীর্তি’ মানুষ বুঝে গিয়েছেন। তাই অবাধ ভোট হলে মানুষ বিজেপিকেই সমর্থন করবেন।