প্রেম-প্রণয়ে কিছু নতুনত্ব থাকবে যা বিশেষভাবে মনকে নাড়া দেবে। কোনও কিছু অতিরিক্ত আশা না করাই ... বিশদ
দেওয়াল দখল রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের অন্যতম মাধ্যম। সে ক্ষেত্রে বাড়তি ক্ষমতা ধরে অবশ্যই শাসকদল। টক্কর দিতে শক্তিশালী বিরোধীরাও কম যায় না। যেমনটি দেখা গিয়েছিল বাম শাসন উচ্ছেদের সন্ধিক্ষণে। এ ছাড়াও প্রতিটি নির্বাচনে দেওয়ালে প্রচার-যুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক দলই পিছিয়ে থাকতে চায় না। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে ভর্তি হয় থানার জেনারেল ডায়েরির খাতা। কোথাও কোথাও রং-তুলি হাতে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন দলের কর্মীরা। কখনও সখনও তা হয়ে ওঠে রক্তক্ষয়ী। পুলিস যায়। পরিস্থিতি সামলায়। আসলে, দেওয়াল দখলই যে প্রার্থীর কাছে বড় আত্মবিশ্বাস!
এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। তার উপর কোভিডের সৌজন্যে এই ‘প্রচার মাধ্যম’-এর গুরুত্ব বেড়েছে অনেকটাই। সবই হচ্ছে ভার্চুয়ালে। তা হলে কেনই বা পিছিয়ে থাকবে ভোটের প্রচার? নির্ঝঞ্ঝাট ‘ফেসবুক ওয়াল’। যার দখলকে ঘিরে গোলমালের বালাই নেই। পেশিশক্তি দেখানোর জায়গা নেই। যে দলের কর্মীরা যত বেশি ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে পাণ্ডিত্য দেখাবেন, তাঁরাই এগিয়ে থাকবেন। এখানে মস্তিষ্কের লড়াই-ই শেষ কথা! ফলে সোশ্যাল মিডিয়াকে অস্ত্র করে কোন দল কত বেশি মানুষের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে, সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এবং সেটা ডান, বাম সব দলের কাছে সমান গুরুত্বের।
‘ব্রিগেড’, ‘রানি রাসমণী রোড’, ‘ধর্মতলা চত্বর’, মায় ‘স্কুল মাঠ’, কিংবা ‘রাস্তার মোড়’—সবই এখন ঢুকে পড়েছে ডিজিটাল প্লাটফর্মে। যাবতীয় বিক্ষোভ-আন্দোলন, দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া—সবই বন্দি হয়েছে ফেসবুক, ট্যুইটার অথবা হোয়াটসঅ্যাপে। তাতে সুফলও মিলছে। এবার এগিয়ে আসছে একুশের বিধানসভা ভোট। প্রচার, পাল্টা প্রচারে তেতে উঠছে সোশ্যাল মিডিয়া। তাকে ঠিকঠাক ব্যবহারে মনোযোগীও হয়েছেন সব দলের নেতারা। দলের কর্মসূচি লাইভ হচ্ছে নেতাদের ফেসবুক পেজে। মিছিলে পা মেলানো। অবস্থান বিক্ষোভে বক্তব্য রাখা—সবটাই হচ্ছে লাইভে।
রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কথাই ধরা যাক। রাজনীতির পুরনো ঘরানার মানুষ তিনি। পোড়খাওয়া রাজনীতিকদের একজন। সভা-সমিতি, স্ট্রিট কর্নার, মিটিং-মিছিলে তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ। অথচ, আজকের নেট-যুগের সঙ্গেও তাঁর সখ্য কম নয়। শোভনদেববাবুর নিজের কথায়, ‘রাজনীতির ওল্ড স্কুলের ছাত্র আমি। কিন্তু নিউ স্কুলের লাইভ প্লাটফর্মকে গ্রহণ করতে আমার অসুবিধা হচ্ছে না। ফেসবুকের পোস্ট করলেই কয়েক হাজার মানুষ প্রত্যুত্তর দিচ্ছেন। তাতে বাড়তি উৎসাহ পাচ্ছি।’ প্রযুক্তির সুফল নিচ্ছে একদা ব্যাঙ্কে কম্পিউটারের বিরোধিতায় সরব হওয়া বাম দলগুলিও। ক’দিন আগে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রবীণ সিপিএম নেতা গৌতম দেবকেও ফেসবুক লাইভে দেখা গিয়েছে। দলের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। প্রচারের ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে স্বাগত জানিয়েছেন গৌতমবাবু। বিধানসভাভিত্তিক প্রচারেও ‘ফেসবুক পেজ’-এর ব্যবহারে বিশেষ জোর দিয়েছে তৃণমূল। ‘ডিজিটাল দমদম’, ‘ডিজিটাল দমদম টিম’ নাম দিয়ে প্রচার চলছে। দলের লোগো দিয়ে টি-শার্টও তৈরি হয়েছে। এই পরিকল্পনা মন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক ব্রাত্য বসুর। আবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের ফেসবুক পেজে বার্তা দেওয়া হয়েছে, ‘ভয়েস অফ ডেমোক্রেসি’। সেখানেও থাকছে দৈনন্দিন কর্মসূচির কথা। সেই সঙ্গে মন্ত্রী-নেতাদের স্ট্যাটাস আপটেড চলছে দিনভর। রাজনীতির আঙিনায় কি তা হলে অতীত হয়ে যাচ্ছে দেওয়াল লিখন? যুগের দাবিকে তো মানতেই হবে!