বদমেজাজ ও কঠিন ব্যবহারে ঘরে-বাইরে অশান্তি ও শত্রুতা। পেট ও বুকের সংক্রমণে দেহসুখের অভাব। কর্মে ... বিশদ
অতএব সঙ্গত প্রশ্ন, এই ক্লায়েন্ট কে? ভারত সরকার নয় কি? সরকার যদি অস্বীকার করতে চায় তবে পরিষ্কার করে দিক সেই রহস্যময় চরিত্রটির নাম। অনুমান করা যায় যে, পাল্টা একগুচ্ছ প্রশ্নবাণে জর্জরিত হওয়ার ভয়েই মোদি সরকার রহস্যের ঘেরা টোপ নির্মাণে সচেষ্ট হয়েছিল। কয়েকজন মন্ত্রীর ফোনেও আড়িপাতা হয় বলে গুঞ্জন রয়েছে। অপকর্মটিতে সরকারের কোনও হাত না-থাকলে সংশ্লিষ্ট ডিভাইসগুলির ফরেন্সিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়নি কেন? এই ভয়ানক কাণ্ডটি নিয়ে সরকার স্বাভাবিক উদ্বেগটুকুও প্রকাশ করেনি। সরকারের এই বিস্ময়কর নির্লিপ্তি থেকে এই সন্দেহই জাগে যে, তবে কি নিজের কিছু মন্ত্রীকেও এই সরকার বিশ্বাস করতে ভয় পায়! ভারত সরকার যে অবস্থানই নিক না কেন, পেগাসাস বিষয়ে প্রচারিত পুরো অভিযোগটিকেই, যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে ফ্রান্স এবং ইজরায়েল। ভারতের ওই দুই বিশিষ্ট বন্ধু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা পরস্পর কথা বলেছেন। এই বিষয়ে তদন্তও করাচ্ছেন তাঁরা। সঙ্গত কারণে তদন্তের দাবি ওঠে ভারতেও। কিন্তু মোদি সরকার এই ধরনের তদন্তের ঘোর বিরোধী। এমনকী, নস্যাৎ করে দিয়েছিল সংসদেও বিতর্কের দাবি। দাবিটি প্রথমদিকে সীমাবদ্ধ ছিল নাগরিক সমাজ এবং বিরোধীদের মধ্যে। পরে বিমুখ করা হয় সংসদকেও। দুটি ক্ষেত্রেই তারা পার পেয়ে গিয়েছে বলে মনে করেছিল সরকার। তাই সাহস এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে সরকার পরে সর্বোচ্চ আদালতকেও জবাব দিতে অস্বীকার করে। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গেও টালবাহানা করতে কুণ্ঠিত বোধ করেনি সরকার। ১৬ আগস্ট তারা কোর্টে তিনপাতার সংক্ষিপ্ত এক হলফনামা দিয়েছিল। সরকার জেদ ধরেছিল, এর বাইরে আর কিছু জানাবে না বলে। এতে বিস্ময় প্রকাশ করেন এই মামলার আবেদনকারীরা। স্বভাবতই ভয়ানক ক্ষুব্ধ হয় শীর্ষ আদালত। সরকারের এই অন্যায্য ভূমিকায় আদালত কতটা বিরক্ত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি এন ভি রামনার বেঞ্চ রায়দান স্থগিত রেখেই তা বুঝিয়ে দিয়েছিল।
জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে মোদি সরকার সংসদ, শীর্ষ আদালত-সহ পুরো দেশকে বোকা বানাবার কৌশল নিয়েও শেষরক্ষা করতে পারল না। অবশেষে যথেষ্ট কঠোর অবস্থান নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। অথচ মুখরক্ষার অনেক সুযোগই সরকার পেয়েছিল। সুযোগ সুপ্রিম কোর্টও দিয়েছিল। কিন্তু সেসব হেলায় হারিয়েছে। সরকার অতি চালাকি করার চেষ্টা করেছিল। অতি চালাকের পরিণাম যা হয়, নিয়মমতো হয়েছে ঠিক সেটাই। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ অ্যান্ড কোম্পানির মুখ পুড়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতকে নস্যাৎ করে দিয়ে পেগাসাস ইস্যুতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করল সর্বোচ্চ আদালত। কোর্ট পরিষ্কার করে দিয়েছে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে দায় এড়িয়ে গেলেও আদালত নির্বাক দর্শক হয়ে থাকবে না। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত কমিটির কাজে সুপ্রিম কোর্টেরও যে সদা-সতর্ক নজর থাকবে তাও পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের মুখরক্ষার কিছুটা উপায় এখনও আছে—এই কমিটির কাজে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করা। ছলচাতুরির বদভ্যাস ছেড়ে সরকার এটুকু যেন করে। তাহলে পেগাসাস রহস্যের কিনারা হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।