বদমেজাজ ও কঠিন ব্যবহারে ঘরে-বাইরে অশান্তি ও শত্রুতা। পেট ও বুকের সংক্রমণে দেহসুখের অভাব। কর্মে ... বিশদ
তবে মরিয়া দর্শনার্থীদের আকূল চাহিদার কাছে হার মানতে হয়েছে প্রশাসনকে। ভিড়ে লাগাম পড়াতে প্রতিমা দর্শন পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হয়েছে উত্তরের এক পুজোয়। সেখানকার অভিনব প্যান্ডেল দেখতে আসা ভিড় সামাল দিতে উল্টোডাঙ্গা স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ানোও বেনজিরভাবে বন্ধ রাখতে হয়েছিল। ভিড়ের বহর বারবার করোনার আগের অতীতকে মনে করিয়ে দিয়েছে। বোঝার উপায় ছিল না যে করোনা সংক্রমণ বিদায় নেয়নি। অষ্টমী থেকে দশমী কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টির আশঙ্কা কেটে গিয়ে রোদ ঝলমলে আকাশ যেন পুজোর হুল্লোড়ে মেতে ওঠার আনন্দকে ইন্ধন জুগিয়েছে। কোথাও হয়তো বৃষ্টি হয়েছে কিন্তু তার প্রাবল্য ছিল সামান্যই। ফলে বরুণ দেবতার ছলাকলা আটকাতে পারেনি প্রতিমা দর্শন ও আনন্দ। বরং ঝকঝকে রোদ, নীলাকাশ, দিনে গরম ও বিকালে হালকা হিমেল হাওয়ার সঙ্গে অন্তরঙ্গ মধুচন্দ্রিমা সেরেছে বাঙালি।
তবে কয়েকদিনের এই অনাবিল আনন্দে যেন কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে করোনা। তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কাকে দূরছাই করেছে আমজনতা। কখনও যেন তা কাণ্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় রেখেছে। প্যান্ডেলে প্রতিমা দর্শন থেকে সিঁদুর খেলা ও বিসর্জনের উপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু আমজনতার কয়েকদিনের পুজো পরিক্রমার ঢল বুঝিয়ে দিয়েছে কোনও বিধিনিষেধই তাদের আটকাতে পারবে না। বস্তুত মাস্ক, স্যানিটাইজার ও শারীরিক দূরত্ব মানার যে বিধির কথা শোনা গেছে করোনার জন্মলগ্ন থেকে, তাকে সচেতনভাবে পাশে সরিয়ে রেখে বহু বাঙালি মেতেছে আনন্দযজ্ঞে। কে জানে এর পরিণতিতে কী অপেক্ষা করছে আগামী দিনে! তবে এই বেপরোয়া জনস্রোত থেকে করোনা সংক্রমণ ফের ছড়াতে পারে বলে চিকিৎসক মহলের আশঙ্কা। তাঁদের কথায়, অতীতে উৎসব থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর উদাহরণ থাকলেও তার থেকে কোনও শিক্ষাই নেয়নি রাজ্যবাসীর একাংশ। আদালত ও রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশিকা না মেনে তাঁরা অদূরদর্শিতারই পরিচয় রেখেছেন। একথা ঠিক, রাজ্যে করোনার গ্রাফ নিম্নমুখী। মমতার সরকারও সদাসতর্ক। কিন্তু শারদোৎসবের জনসমাগমের কারণে যদি সংক্রমণ বাড়ে তবে তা হতে পারে আত্মঘাতী। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, এমনটা যেন না হয়। তাই সংক্রমণের এই আশঙ্কাকে বাদ দিলে এবং মাত্র দু-তিনটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া পুজোর ক’টা দিন কেটেছে ভালোই। কড়া নজরদারিতেই নিয়ম মেনে চলছে বিসর্জনপর্ব। উৎসবের মধ্যেই জানা গেল, শিশু থেকে কিশোরদের ভ্যাকসিন দেওয়ার চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেতে চলেছে দেশ। তবে দু-একটি মন্দ খবরও বাংলার মানুষকে ভাবিয়েছে। ছত্তিশগড়ে একটি শোভাযাত্রায় কয়েকজনকে পিষে দিয়েছে গাড়ি। আবার প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের একাধিক জেলায় পুজো প্যান্ডেলে ভাঙচুর চালিয়েছে মৌলবাদীরা, যা দুর্ভাগ্যজনক। তবে আমাদের বাংলায় পুজোয় দলমত নির্বিশেষে ভিনধর্মী মানুষের মেলবন্ধন ঘটেছে। বিজয়ায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার সব মানুষের জন্য বিজয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল।