পেশাদারি উচ্চশিক্ষায় দ্রুত অগ্রগতি ও সেই সূত্রে কর্মপ্রাপ্তির সুবর্ণ সুযোগ আসতে পারে। মিত্রবেশী শত্রু দ্বারা ... বিশদ
এই ঘটনায় নেতাদের ‘মানবিকতা’ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যে পার্টির নেতারা গরিব পড়ুয়াদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে আওয়াজ তোলেন, মুখোশের আড়ালে তাঁদের আসল ‘চরিত্র’ কি এমনই? জয়ন্ত বাউরি নামে ওই হতদরিদ্র পড়ুয়াও প্রশ্ন তুলছেন, ‘আমি যে ছাত্র সংগঠন করি, যে পার্টিকে ভোট দিই, তারা নাকি গরিব ঘরের ছেলেদের নিয়ে আন্দোলন করে! শিক্ষার অধিকারের কথা বলে। হাসি পাচ্ছে নিজের উপরেই।’ দু’দিন আগেই গোটা ঘটনাটি তিনি জানিয়েছেন এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সুব্রত মাহাতকে। বিষয়টি নিয়ে এসএফআইয়ের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও তুমুল চর্চা শুরু হয়েছে। সুব্রত বলেন, ‘আমি নিজে জয়ন্তর বাড়ি গিয়েছে। ওর পরিবারের অবস্থা সত্যিই খারাপ। ওর ভাড়া যাতে মকুব করা হয়, তার জন্য আমি পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করব।’
প্রসঙ্গত, পুরুলিয়া শহরের নডিহায় বামেদের ‘কৃষক ভবন’ একসময় গমগম পার্টি কর্মীদের কোলাহলে। তবে, ২০১১ সালের পালাবদলের পর সংগঠনের রক্তক্ষরণ শুরু হতেই একের পর এক দলীয় কার্যালয় বন্ধ হতে থাকে। অন্ধকার ঘনিয়ে আসে কৃষক ভবনেও। কৃষকসভার নেতারা অনুভব করেন, এত বড় বাড়িতে যদি কেউ না থাকে, তাহলে তো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাবে। সিদ্ধান্ত হয়, দুঃস্থ মেধাবী পড়ুয়াদের কৃষক ভবনে রেখে যৎসামান্য খরচায় পড়ানো হবে। বর্তমানে প্রায় ১৫জন পড়ুয়া এই মেসবাড়িতে থাকেন। প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ দিতে হয় ৭০০ টাকা। জয়ন্তও তাদেরই একজন।
এসএফআই কর্মী জয়ন্তর বাড়ি মানবাজারের জিতুজুড়ি পঞ্চায়েতের সিঁদুরপুড়ে। গত বছরই সিধো কানহো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত নিয়ে এমএ পাশ করেছেন। বর্তমানে বিএড করছেন। পাশাপাশি প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেট পরীক্ষার জন্যও। জয়ন্ত বলেন, ‘বাড়িতে দুই বোন আছে, তারা প্রতিবন্ধী। বাবা কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। মায়ের হার্টের অসুখ। প্রতি মাসে চিকিৎসা খরচ সামলে সংসার চালাতেই হিমশিম অবস্থা পরিবারের। তাদের থেকে কীভাবে আমার মেস ভাড়ার টাকা চাইব?’ জয়ন্তর দাবি, ‘কিছু টিউশনি, আর স্কলারশিপের টাকায় নিজের খরচ নিজেই চালাতাম। কিন্তু, বর্তমানে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ঠিকমতো দু’বেলা খেতে পারছি না। ভাড়া কীভাবে দেব?’ তাঁর অভিমান, ‘ভাড়া দিতে না পারার কারণে অনেকবার ছোট হতে হয়েছে। আমি বলেছি টিউশনি পেলেই ভাড়া মিটিয়ে দেব। কিন্তু, আমার কথা না শুনেই আমাকে মেস ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেছেন কৃষকসভার নেতারা। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আমাকে বিনা পয়সায় রাখতে পারবেন না। রুম খালি না করে দিলে বিছানাপত্তর বাইরে বের করে দেবে। আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে তো মাস শেষে ভাড়া মিলবে।’
এনিয়ে কৃষক সভার সম্পাদক কাশীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ফোনে বলেন, ‘কৃষক ভবনের যা নিয়ম আছে, সেই ভাবেই চলবে। বাইরের কারও সঙ্গে এনিয়ে আলোচনা করব না।’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় অবশ্য বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, অর্থের জন্য কাউকে কৃষকভবন থেকে বিতাড়িত করা হবে না। অর্থের জন্য কারও পড়াশোনা বন্ধ হবে না। আমরা ওই পড়ুয়ার পাশে রয়েছি।’