সংবাদদাতা, হলদিয়া: মহিষাদলে মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিং তৈরির কাজ তিন বছরের বেশি বন্ধ হয়ে রয়েছে। উপকূলীয় নোনা আবহাওয়ার দরুণ ইতিমধ্যেই ক্ষয় ধরেছে বিল্ডিংয়ের কংক্রিট পাইলিংয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মীয়মাণ ৮ তলা অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ের প্রায় ৮৭০টি কংক্রিট পাইলিং ক্ষয়ের কবলে পড়েছে। এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যের শিক্ষাদপ্তর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে পিডব্লুডি। কংক্রিট পাইলিংয়ে ক্ষয়ের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সরকারি ইঞ্জিনিয়াররা। এভাবে মাঝপথে কাজ বন্ধ অবস্থায় আরও কিছুদিন পড়ে থাকলে ‘করোশন’ বা ক্ষয়ের কারণে কংক্রিটের পাইলিং ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়বে। পিডব্লুডির ইঞ্জিনিয়ারদের পরামর্শ, কাজ যতদিন না শুরু হচ্ছে, তার আগে কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। ট্রিটমেন্টের পাশাপাশি পাতলা ঢালাই দিয়ে মাটি ও লবণাক্ত জলের সংস্পর্শ থেকে পাইলিংগুলিকে বাঁচাতে হবে। তা না হলে ওই কংক্রিট পাইলিংগুলি বহুতলের জন্য ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়বে। ফলে ওই পাইলিংয়ের জন্য ব্যয় হওয়া প্রায় ২০ কোটি টাকা কার্যত জলেই যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এজন্য রাজ্যের কাছ থেকে নীতিগত অনুমোদন নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে এস্টিমেট করে কাজ করার কথা বলেছে পিডব্লুডি। মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ দীর্ঘদিন থমকে থাকায় একদিকে বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ, অন্যদিকে পিডব্লুডির ইঞ্জিনিয়াররা। সেজন্যই উদ্বিগ্ন হয়ে তাঁরা রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে গভীর সমস্যা ও উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। ২০১৮ সালে গান্ধীজির জন্মদিনে ২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস হয়। মহিষাদলের বামুনিয়ায় কাপাসএড়িয়া হাইরোড মোড়ের পাশে ২০ একর জমিতে তৈরি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস। ২৭৬ কোটি টাকা খরচে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার পরিকল্পনা হয়। প্রাথমিকভাবে ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। পিডব্লুডি বিশ্ববিদ্যালয় ভবন গড়ার জন্য টেন্ডার ডাকে। ২০১৯ সাল নাগাদ প্রাচীর তৈরির কাজ শুরু হয়। এজন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনের প্রথম দফার কাজের জন্য ২০ কোটি টাকার টেন্ডার ডাকা হয়। নতুন ভবনের পাইলিংয়ের কাজ যখন শেষের পথে সেই সময়ে ২০২১ সালের নভেম্বরে হঠাৎ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পিডব্লুডির চিঠি থেকে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের ২ নভেম্বর একটি ভিডিও কনফারেন্স মিটিংয়ে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের স্পেশাল সেক্রেটারির মৌখিক নির্দেশে কাজ বন্ধ হয়। তারপর থেকে গত তিন বছর ধরে বিল্ডিং তৈরির কাজ থমকে।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু নিয়ে ব্যাপক টানাপোড়েন চলতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে বিল্ডিং তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার কাজের মেয়াদও ফুরিয়ে যায়। শেষমেশ, শিক্ষাদপ্তরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঝুলে থাকায় ওই ঠিকাদার সংস্থাকে নিয়ম অনুযায়ী চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল বরখাস্ত করতে বাধ্য হয়েছে পিডব্লুডি। তবে তার আগেই ২০২৩ সালের মে মাসে ওই ঠিকাদার সংস্থা তার মেশিনপত্র নির্মাণস্থল থেকে সরিয়ে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস আপাতত হোগলা বাগানে পরিণত এবং পাইলিংগুলি জলে ডুবে রয়েছে। ওই ক্যাম্পাসে ঢোকার দু›টি গেট অবৈধ দখলদারদের কব্জায়। মহিষাদল রাজ কলেজের রবীন্দ্র ভবনের চার ও পাঁচ তলায় ৬টি রুমে বর্তমানে কোনওরকমে চলছে গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস। ২০২০ সাল থেকে সেখানেই শুরু হয়েছে পঠনপাঠন। বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও অঙ্ক, এই চারটি বিষয়ে ১২০টি আসন রয়েছে। চাহিদা থাকলেও স্থানাভাবে বাড়তি ছাত্রভর্তি বা নতুন পাঠক্রম চালু করা যাচ্ছে না। উপাচার্য পদ ছাড়া অন্য কোনও পদেই নিয়োগ হয়নি। স্থায়ী ক্যাম্পাসের অভাবে খুঁড়িয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ব্রিজভূষণ পরিদা বলেন, পিডব্লুডির চিঠির কথা রাজ্য সরকারকে জানিয়েছি। আশাকরি এবিষয়ে শিক্ষাদপ্তর দ্রুত পদক্ষেপ করার চিন্তাভাবনা করছে। নতুন ক্যাম্পাস চালু হলে আরও সময়োপযোগী কোর্স চালু হবে। স্থানীয় বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী বলেন, পিডব্লুডি যে আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছে তা খুবই উদ্বেগের। আসন্ন শীতকালীন বিধানসভা অধিবেশনে এবিষয়ে সরব হব।-নিজস্ব চিত্র