ধর্মকর্মে সঞ্চীয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়। ... বিশদ
মুরারইয়ের শেষপ্রান্তে দামোদরপুর পিরলিপুর গ্রাম। একটি গ্রাম হলেও অর্ধেক অংশ ঝাড়খণ্ডের অর্ন্তগত। তবে দেখে বোঝার উপায় নেই। রবিদাস, কর্মকার, মুসলিম, রাজপুত মিলিয়ে প্রায় হাজার দেড়েক মানুষের বসবাস। সকলেই দিনমজুর, কৃষিজীবী। দুই রাজ্যের বাসিন্দা থেকে পডুয়াদের স্কুল, বাজার থেকে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে আম্ভুয়া হয়ে মুরারইয়ের রাজগ্রামে আসতে হয়। আগে গ্রাম থেকে আম্ভুয়া যাওয়ার প্রায় হাফ কিমি রাস্তা কাঁচা ছিল। জলকাদায় পা পিছলে পড়ে গিয়ে জখম হতেন গ্রামবাসীরা। বিকল্প রাস্তাও ছিল না। রাস্তাটি এতটাই বেহাল ছিল যে, রোগীকে কোলে চাপিয়ে পাকা রাস্তা পর্যন্ত এনে অ্যাম্বুলেন্সে চাপাতে হতো। গ্রামে দুর্গাপুজো না হওয়ায় সাইকেল চালিয়ে বা হেঁটে আশপাশের গ্রামে ঠাকুর দেখতে যেতে হতো। খারাপ রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটায় অনেকে ছেলেমেয়েদের ছাড়তে চাইতেন না। ফলে দূর থেকে ভেসে আসা ঢাকের বাজনা শুনেই এই গ্রামের পুজো কাটত। মনভার থাকত বাড়ির মহিলা থেকে ছোটদের। সেই আক্ষেপ মেটাতে ২০১৯ সালে দুই রাজ্যের মানুষ মিলে দুর্গাপুজো করার উদ্যোগ নেন। সেইমতো গ্রামবাসীদের দানে ঝাড়খণ্ড-বাংলা সীমান্তে দুর্গামন্দির গড়ে ওঠে। ২০২১ সালে সেই মন্দিরে মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে দেবীকে গ্রামে আসার আহ্বান জানিয়ে পুজো শুরু হয়।
এবার তাঁদের পুজো চতুর্থ বর্ষে পড়ল। তবে এখন আর গ্রামে বেহাল রাস্তা নেই। বর্তমান সরকার গ্রামের রাস্তা ঢালাই করে দিয়েছে। গ্রামের বধূ শিউলি কর্মকার, কল্পনা রবিদাস সহ গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, বাঙালি হয়েও বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের আনন্দের স্বাদ পেতাম না। গ্রামে দুর্গাপুজো না থাকায় ফাঁকা ফাঁকা লাগত। এখন চারবছর ধরে পুজোর সময় ভীষণ আনন্দ হয়। মণ্ডপে আড্ডা, একসঙ্গে ভোগ খাওয়া, কত আনন্দ! আমরা গ্রামবাসীরা মিলেই পুজোর দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছি। গ্রামবাসী হর রাজবংশী বলেন, আগে এই গ্রামে একমাত্র উৎসব ছিল কার্তিক ও অন্নপূর্ণা পুজো। দুর্গাপুজোর আয়োজনের প্রসঙ্গ যখন ওঠে তখন উদ্দীপনা এতটাই ছিল যে, দুই রাজ্যের বাসিন্দারা মিলিতভাবে দুর্গামন্দির তৈরির জন্য জমি থেকে অর্থদান করেছেন। সকলের লক্ষ্য, আন্তরিকভাবে পুজো চালিয়ে যাওয়া।
পুজোর আর মাত্র দু’দিন। মূর্তি গড়ার কাজ শেষ। এখন গ্রামবাসীরাই মন্দিরে নতুন রঙের প্রলেপ দিচ্ছেন। আট থেকে আশি সকলের এখন ঠিকানা দুর্গামন্দির চত্বর। দেবী দুর্গার পুজো দুই রাজ্যের মানুষকে এক সূত্রে বেঁধেছে। তবে মন্দিরটি যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটি ঝাড়খণ্ডে । পুজোর অনুদান পান না তাঁরা। গ্রামবাসীদের আক্ষেপ, তখন যদি বাংলায় মন্দিরটি করতাম, তাহলে এই অনুদান পুজোর জৌলুস আরও বাড়িয়ে তুলত। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার দামোদরপুর পিরলিপুর গ্রামে দুর্গা প্রতিমা।