ধর্মকর্মে সঞ্চীয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়। ... বিশদ
স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘড়িতে তখন বেলা ১১টা। বিকট আওয়াজে কেঁপে ওঠে গোটা লোকপুর। ধোঁয়ায় ঢেকে যায় খাদান চত্বর। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে লোহার টুকরো, দলা পাকানো মানুষের দেহাংশ। আবার কোথাও কাটা হাতের টুকরো। কোথাও আবার পায়ের আঙুল। পোড়া গন্ধে দম আটকে যাওয়া অবস্থা। খাদানের ১০০ ফুট এলাকাজুড়ে সে এক বীভৎস দৃশ্য। ঠিক ক’টা দেহের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে? গোনা যাচ্ছে না। স্থানীয়রা বললেন, কমকরে ৬ জনের দেহ এভাবে পড়ে রয়েছে। চতুর্থীর সকালে এমনই মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকল লোকপুরের নাকরাকোন্দার সগরভাঙা কয়লা খাদান।
মৃতদের নাম, পরিচয় সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকারিভাবে জানানো হয়নি। তবে, অসমর্থিত সূত্রের খবর, মৃতের সংখ্যা ৮ জন হতে পারে। মৃতদের বাড়ি স্থানীয় গাংপুর, ভাদুলিয়া, বাস্তবপুর, নওপাড়া গ্রামগুলিতে। এছাড়াও একজন পশ্চিম বর্ধমানের ও আরও এক জন ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
কয়লা খাদানটি সরকার নিয়ন্ত্রিত পিডিসিএলের। সেখানে কয়লা তোলার কাজে সহযোগী হিসেবে বরাত পেয়েছিল গঙ্গারামচক কোল মাইন সংস্থা। খাদান ফাটানোর বিস্ফোরণের কাজে যুক্ত ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, এদিন সকালে একটি গাড়িতে করে একইসঙ্গে ‘বুস্টার’ ও ‘ননেল’ আনা হচ্ছিল। সাধারণত একই গাড়িতে সেগুলি রাখা যায় না। পাশের একটি কয়লা ব্লকে গর্ত করে সেখানে বারুদ ভরা ছিল। সেখানেই বিদ্যুতের তার ও অন্যান্য বিস্ফোরক দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হতো। সেই সময়ই একটি পাথর বোঝাই ডাম্পার একেবারে কাছাকাছি চলে আসে। স্থানীয় মানুষজনদের দাবি, কখনই বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ির কাছাকাছি লোহা বোঝাই গাড়ি আনা যায় না। তাতে শর্ট সার্কিট থেকে বিস্ফোরণ হওয়ার প্রভুত সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই হয়েছে বলে অনুমান। বিস্ফোরক বোঝাই গাড়িটিতে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমিকরা ছিন্নভিন্ন হয়ে কয়েকফুট দূরে গিয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে লোকজন আসার আগেই পৌঁছে যায় চিল, কুকুর। যে কয়েকজন মারা গিয়েছেন তাঁরা সকলেই কয়লা ব্লক ফাটানোর কাজই করতেন।
খবর পেয়ে মৃতদের পরিবার সহ বিশাল পুলিস বাহিনী হাজির হয় খাদানে। বিকেল পর্যন্ত দেহাংশগুলি একত্রিত করতে বেশ বেগ পেতে হয় পুলিসকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনায় মৃত শ্রমিকদের পরিবারের একজনকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন। সংস্থার তরফেও মোটা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়। ঘটনার পর ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকার বাসিন্দারা। কোনওরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই জিলেটিন স্টিক, ডিটোনেটর গাড়িতে করে খাদানে নিয়ে আসা হয় বলে অভিযোগ তাঁদের। ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেলেন লক্ষ্মীকান্ত ভাণ্ডারি। তিনি বলছিলেন, ‘আমরা প্রচণ্ড আওয়াজ শুনে ছুটে আসি। কোনও নিয়ম মেনে এখানে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় না। এলাকার স্বার্থে এই কয়লা কোম্পানি কাজ করে না। আলাদা করে রাস্তা করে না। খোলা রাস্তাতেই জিলেটিন স্টিক আনে। কত শ্রমিককে যে খাদানে চাপা দিয়ে মেরেছে, তা কেউ জানে না!’ মৃত মঙ্গল মারান্ডির (৩০) স্ত্রী বুড়ি মারান্ডি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘সকালেই কাজে এল। কি যে হয়ে গেল বুঝতে পারছি না।’
এদিন সন্ধ্যার পর মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন জেলাশাসক বিধান রায়। অতিরিক্ত পুলিস সুপার (বোলপুর) রানা মুখোপাধ্যায়। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে তাঁরা জানিয়েছেন, মৃতদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করা হবে। ফরেন্সিক দল আসছে। কীভাবে ঘটনাটি ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিটোনেটর বোঝাই এই গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র