ধর্মকর্মে সঞ্চীয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়। ... বিশদ
বছরের এসময় তিস্তার চরে খেতে সব্জির সমারোহ থাকে। ঝিঙে, লাউ, মুলো, বরবটি, বেগুন থেকে পালং, লালশাক, লঙ্কা কত কী! সেসব সব্জি দিয়েই রান্না হয় মা দুর্গার ভোগ। কিন্তু ক’দিন আগে উত্তাল তিস্তা সেই সব্জিখেত ভাসিয়ে ছাড়খার করে দিয়েছে। এতেই মাথায় হাত তিস্তার বাঁধের বাসিন্দা জ্যোৎস্না সরকার, তারা মণ্ডল, ববিতা মল্লিকদের। কীভাবে মায়ের ভোগের ব্যঞ্জন জোগাড় হবে তা ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা।
‘তিস্তার পাড়ে বাস ভাবনা বারোমাস’! কখনও তিস্তা ভয়ঙ্করী রূপ ধারণ করে দুকূল ভাসায়। কখনও আবার সেই তিস্তার বুকে মাছ ধরে, চরে সব্জি ফলিয়ে জোগাড় হয় পেটের ভাত। তাই উত্তরের এই খরস্রোতা নদী যাতে তাঁদের বিপদের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়, সেই প্রার্থনায় ২০১৮ সালে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন আট নম্বর স্পারের বাসিন্দারা।
তবে পুরুষরা নন, এগিয়ে আসেন মহিলারা। চরে শাক-সব্জি ফলিয়ে তা বাজারে বিক্রি করে যা রোজগার হয়, তা থেকে কিছুটা বাঁচিয়ে শুরু হয় পুজো। চরের জমিতে ফলানো শাক-সব্জিতেই ভোগ রেঁধে দেওয়া হয় দশভুজাকে। এবার পুজোর খরচ ধরা হয়েছে এক লক্ষ টাকা। সোমবার প্যান্ডেলের ফিনিশিং টাচ দিতে দিতেই জ্যোৎস্না সরকার, ববিতা মল্লিক বললেন, আমরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা থেকে প্রতিমাসে কিছুটা বাঁচিয়ে পুজোর খরচ জোগাড় করি। তবে সবটা তাতে হয় না। তখন পুরুষরা সাহায্য করেন।
তিস্তার বাঁধে তিন নম্বর স্পারের বাসিন্দারা অবশ্য অনেক আগে থেকেই দুর্গাপুজোর আয়োজন করে আসছেন। এটিই তিস্তাপাড়ের প্রথম পুজো। পরে যোগ হয় আট নম্বর স্পারের পুজো। তিন নম্বর স্পারের পুজো কমিটির সম্পাদক তপন দাস বলেন, এবার আমাদের পুজো ২৭ বছর। রাজ্য সরকারের দেওয়া অনুদান পেয়েছি। সেটা দিয়েই পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। এলাকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পাতপেড়ে খাওয়াদাওয়া সবই থাকছে।
জৌলুস না থাকলেও চরের পুজো ঘিরে প্রাণের টান। মণ্ডপের পিছনেই কুলকুল শব্দে বয়ে যাচ্ছে তিস্তা। তার বিশাল ক্যানভাসে বাড়তি মাত্রা যোগ করছে শুভ্র কাশের বন। পুজোর ক’দিন সবাই মিলে হইহুল্লোড়ে মাততে তৈরি আট থেকে আশি। আট নম্বর স্পারের ছেলেমেয়েরা পুজো মণ্ডপে মঞ্চস্থ করবে দু-দু’টি নাটক। তিস্তার কোলে সূর্য ঢলে পড়তেই এখন তারই মহড়া চলছে জোরকদমে।
নিজস্ব চিত্র।