নয়াদিল্লি: ‘কব্জিতে এঁটে বসেছে হাতকড়া। দু’পা শিকল দিয়ে বাঁধা। মার্কিন সেনা-বিমানের সিট থেকে এক ইঞ্চিও নড়তে দেওয়া হয়নি... ঠায় ৪০ ঘণ্টা। গোটা বিমানে একটামাত্র শৌচাগার। তাও কেঁদেকেটে আদায় করতে হয়েছে সেখানে যাওয়ার অনুমতি। তাও হাত-পায়ের বেড়ি খোলেনি। কোনওমতে পা ঘষটে ঘষটে পৌঁছতে হয়েছে। বিমানকর্মীরা শৌচাগারের দরজা খুলে ভিতরে ঠুসে দিয়েছে আমাদের। শুধু শারীরিক-মানসিক যন্ত্রণা নয়, এ যেন নরকের থেকেও ভয়াবহ অভিজ্ঞতা! অমানবিক বললে কম বলা হয়।’ বৃহস্পতিবার, ২৪ ঘণ্টা পরেও সেকথা মনে করে শিউরে উঠছেন হরবিন্দর সিং। বুধবার প্রথম দফায় ১০৪ জন ভারতীয় ‘অবৈধ’ অভিবাসীকে ফেরত পাঠিয়েছে আমেরিকায় সদ্য ক্ষমতায় আসা ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার। পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুরের বাসিন্দা হরবিন্দর তাঁদেরই একজন। ভারতীয় ‘অবৈধ’ অভিবাসীদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্যত স্বীকার করেছেন মার্কিন বর্ডার পেট্রলের প্রধান মিখাইল ডব্লু ব্যাঙ্কস। দাগী অপরাধীদের মতো হাতে-পাড়ে বেড়ি পরানো অবস্থায় ভারতীয়দের মার্কিন সেনার বিমান সি-১৭ গ্লোবমাস্টারে তোলার ভিডিও তিনি পোস্ট করেছেন। সঙ্গে হুঁশিয়ারি, ‘অবৈধ ভিনদেশিদের সফলভাবে ভারতে পাঠানো হল। যদি বেআইনিভাবে কেউ আমেরিকায় পা রাখে, তাহলে এভাবেই তাড়িয়ে ছাড়ব।’
এক সপ্তাহ পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রওনা হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ‘বন্ধু’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বৈঠক করার কথা। তার ঠিক আগে এমন ঘটনা। ভারতীয়দের যে ভাবে হাতকড়া পরিয়ে সেনা বিমানে এ দেশে পাঠিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন, তা নিয়ে বিতর্ক চরমে। সংসদের ভিতরে-বাইরে সরব বিরোধীরা। এবার মুখ খুললেন ভুক্তভোগীরাও। ফলে মার্কিন সফরের আগে চরম অস্বস্তিতে মোদি।
প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কিলোমটারের দীর্ঘ যাত্রাপথে দেশে ফেরা ভারতীয়রা ভালো করে খেতেও পারেননি। হরবিন্দর বলেন, ‘হ্যান্ডকাফ পরেই খেতে হচ্ছিল। বারবার হাতকড়া খোলার আর্জি জানিয়েছিলাম। মার্কিন সেনা, বিমানকর্মীরা এবং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা যেন সেকথা কানেই তুলছিলেন না।’ তবে এই অভিযোগকে কোনও বড় বিষয় হিসেবে দেখতে নারাজ মার্কিন কর্তৃপক্ষ। ‘সব পেয়েছির দেশে’ যাওয়ার স্বপ্ন যে এভাবে দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে, সেকথা ভাবতেও পারেননি যশপাল সিং। পাঞ্জাবের গুরুদাসপুরে হরদোয়াল গ্রামের এই বাসিন্দার অভিযোগ, আমেরিকায় যাওয়ার জন্য এজেন্টকে ৩০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। সে-ই এভাবে ডুবিয়েছে। তিনি বলেন, ‘গত বছর জুলাইতে দেশ ছাড়ি। এরপর ছ’মাস ব্রাজিলে ছিলাম। তারপর বেআইনিভাবে আমেরিকায় প্রবেশ করতে গিয়ে ইউএস বর্ডার পেট্রলের হাতে ধরা পড়ে যাই।’ ১১ দিন হেফাজতে থাকার পর তাঁকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। যদিও বিমানে ওঠার সময় মনে হয়েছিল, অন্য কোনও ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জলন্ধরের বাসিন্দা ২৭ বছরের দেবেন্দ্রজিৎ সিংয়ের অবস্থা আরও করুণ। গত রাতে দেশে ফেরেন। আর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তাঁর কোনও খোঁজ মিলছে না।