চাকরিজীবীদের কর্মোন্নতি ও পদোন্নতির সঙ্গে বেতন বৃদ্ধির যোগ। যানবাহন চালনায় সতর্ক হন। ... বিশদ
স্ত্রীর এবং নিজেরও জীবন বাজি রেখে টোটো চালিয়ে প্রায় কলকাতা এসেই পড়েছিলেন ষাট বছরের প্রৌঢ় উপেন্দ্রবাবু। রাতে কলকাতার কাছাকাছি ডানকুনিতে পৌঁছে টোটোর ব্যাটারি যায় শেষ হয়ে। রাস্তায় কয়েকজন তাঁকে দেখতে পান। কথাবার্তার পর তাঁরা জানতে পারেন মুর্শিদাবাদে সালারে থাকেন উপেন্দ্র। অসুস্থ স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন কলকাতা। প্রৌঢ়ের এই মরণপণ যাত্রার কথা লহমায় ছড়িয়ে পড়ে ডানকুনিতে। খবরটি ডানকুনি পুরসভার চেয়ারম্যান হাসিনা শবনমের কানে পর্যন্ত পৌঁছয়। তিনি একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে কলকাতা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বুধবার গভীর রাতেই স্ত্রী শিবানীকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন উপেন্দ্র। স্ত্রীর পাশে বসে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এসেছিল তাঁর। হাসিনা শবনমের প্রতি কৃতজ্ঞতায় কপালে হাত ঠেকালেন। বলেন, ‘এত রাতে অচেনা-অজানা জায়গায় সাহায্য পাওয়ার কথা কল্পনাও করিনি। পুরসভার চেয়ারম্যান যা করেছেন তা সারাজীবন মনে থাকবে।’ শিবানীদেবী পাশে শুয়ে। বলেন, ‘আমার চিকিৎসা করাতে করাতে মানুষটা নিঃস্ব হয়ে গিয়েছেন। মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতা যেতে অ্যাম্বুলেন্সে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা লাগত। কলকাতায় কতদিন থাকতে হবে, চিকিৎসা করাতে কত খরচ হবে তার ঠিক নেই। স্বামী আর ছেলে মিলে ঠিক করেছিল টোটোতে করে গেলে পাঁচ হাজার টাকা বেঁচে যাবে।’ পুরসভার চেয়ারম্যান জানান, শিবানীদেবীকে কলকাতা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর রাতেই পিজিতে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ঘটনার কথা শুনে চমকে গিয়েছিলাম। ওই দম্পতির জীবন সংগ্রামকে কুর্নিশ। দ্রুত শিবানীদেবী সুস্থ হয়ে উঠুন।’ মুর্শিদাবাদের সালারের বাসিন্দা উপেন্দ্রবাবু। ছেলে আর পঞ্চাশ বছর বয়সি স্ত্রীকে নিয়ে সংসার। স্ত্রী শিবানীদেবী কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা চলছিল। চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে করতে সংসারে অভাব বৃদ্ধি পায়। সম্প্রতি শিবানির প্রেসার মারাত্মক বেড়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ কলকাতায় নিয়ে যেতে বলে। বুধবার ভোরবেলা স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে টোটোয় বেরিয়ে পড়েন উপেন্দ্র। ডানকুনি পৌঁছনোর পরে টোটোর ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে যায়। রাত সাড়ে এগারোটার সময় চার্জ দেওয়ার জায়গা খুঁজছিলেন। তখনই কথায় কথায় স্থানীয় কয়েকজন টোটোচালক ও তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় কর্মীরা সব জানতে পারেন। তারপর কলকাতা আসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেন পুরসভার চেয়ারম্যান। - নিজস্ব চিত্র