ধর্মকর্মে সঞ্চীয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়। ... বিশদ
বিজয়, রণজয়, সেলিম, ফিরদৌসরা (নাম পরিবর্তিত) গতবার পুজোয় চন্দ্রযানের মডেল বানিয়ে তাক লাগিয়েছিল। এবার তাদের তরফে হোম কর্তৃপক্ষের কাছে আবদার আসে ‘দুর্গা ঠাকুর গড়তে চাই আমরা’। শুনে খানিকটা চমকে গিয়েছিলেন সুপার। তাঁর কথায়, ‘ভেবেছিলাম, ছেলেরা বলছে বটে, পারবে তো? কিন্তু ফেলে দেওয়া ডিমের ট্রে দিয়ে ওরা যে এতসুন্দর মহিষাসুরমর্দিনী গড়বে, তা ভাবতেই পারিনি।’ এদের মধ্যে কারও কারও শৈশব এখনও কাটেনি। কেউ আবার সদ্য পা রেখেছে কৈশোরে। এই বয়সেই জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের সাক্ষী তারা।
বর্তমানে হোমের ৮০ জন আবাসিকের মধ্যে একজন পাকিস্তানের, বাংলাদেশের ২২ জন, আটজন মায়ানমারের, নেপালের দু’জন। অনুপ্রবেশের অভিযোগে কারও ঠাঁই হয়েছে হোমে। কেউ আবার জড়িয়ে পড়েছিল অপরাধমূলক ঘটনায়। এখন পরিজন, প্রিয়জনদের থেকে অনেক দূরে হোমের চার দেওয়ালের মধ্যে দিন কাটে ওদের। সরকারি ব্যবস্থাপনায় খাওয়াদাওয়া, খেলাধুলো, পড়াশোনা সবই রয়েছে। কিন্তু পুজো এলে তিস্তাপাড়ে কাশবনে লুকোচুরি কিংবা ঘুড়ি-লাটাই হাতে ইচ্ছেমতো বেরিয়ে পড়ার স্বাধীনতা নেই। হোমের সুপার বলেন, পুজোর সময় আর পাঁচটা শিশু-কিশোরদের মত হোমের ছেলেদের বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। ফলে তারা যাতে এখানেই আনন্দ করতে পারে, সেজন্য সাত বছর আগেই এই পুজো চালু হয়। এবার এখানকার আবাসিকদের হাতে তৈরি দুর্গা সেই পুজোয় বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। চলছে ফিনিশিং টাচ। দেবীর পায়ের কাছে লম্বা, বাঁকানো শিং সহ থাকছে মোষ। দুর্গার দশ হাতে অস্ত্র, অলঙ্কার সবই সযত্নে তৈরি করেছে হোমের ছেলেরা। তাদের হাতের নিখুঁত কারুকাজ দেখে আপ্লুত হোম কর্তৃপক্ষ। বাইরে থেকে আসবেন মহিলা পুরোহিত। হোমের চার দেওয়ালের মধ্যে মেয়ের হাতেই হবে মায়ের বোধন। সাক্ষী থাকবে সেলিম, ফিরদৌসরাও।