আমরা মেয়েরা

আইনের পথে পণের মোকাবিলা

পণপ্রথার শিকার হলে কীভাবে পাবেন আইনি সাহায্য? জানালেন আলিপুর পুলিস ও জাজেস কোর্ট, কাকদ্বীপ কোর্টের অ্যাডভোকেট মিন্টু চক্রবর্তী।

পণপ্রথা আসলে এক সামাজিক ব্যাধি। না! এ শুধুমাত্র কোনও বিজ্ঞাপনী লাইন নয়। আদতে বহু বছর ধরে চলে আসা এক নির্মম বাস্তব। ২০২৪-এ দাঁড়িয়ে বিয়ের ধরন বদলেছে। আধুনিক হয়েছে দাম্পত্য। পণ বা যৌতুক চাওয়া হয় এখন নানা কথার ভাঁজে। শুধু বিয়ের আগে নয়, বিয়ের পরও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য পণ চাওয়া হচ্ছে। যিনি ভুক্তভোগী, তাঁর কাছে আইনের কী সমাধান রয়েছে? বুঝিয়ে দিলেন আলিপুর পুলিস ও জাজেস কোর্ট এবং কাকদ্বীপ কোর্টের আইনজীবী মিন্টু চক্রবর্তী (ঋজু)। তিনি জানালেন, পণপ্রথার রক্ষাকবচ ১৯৬১ সালের ‘ডাউরি প্রহিভিশন অ্যাক্ট’-এ  রয়েছে, যাকে পণ/যৌতুক নিষিদ্ধ আইনও বলা হয় থাকে। 
আলোচনার শুরুতে তিনি জানালেন, আইন আইনের জায়গায়। এই সামাজিক ব্যাধিকে দূর করার বিভিন্ন প্রচেষ্টা সরকার করছে। বেসরকারি উদ্যোগেও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এগিয়ে আসতে হবে প্রতিটি নাগরিককে। প্রথমেই জেনে নেওয়া দরকার, পণ কী বা কোনটা? ‘আমরা দেখি হিন্দু বিয়েতে স্ত্রীধন দেওয়া হয়, সঙ্গে পণও রয়েছে। তাহলে কোনটা আমরা পণ হিসেবে ধরব? বিয়েতে বা বিয়ের সময়, বিয়ের আগে বা বিয়ের পরে যদি দেখা যায় বিয়ের উপহার হিসেবে কোনও অর্থমূল্য ধার্য হচ্ছে, অর্থাৎ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থমূল্য দিলে তবেই বিয়ে হবে, সেটা আইনের চোখে পণ হিসেবে ধার্য হবে। সেটা অনেক সময় বিয়ের আগে হয়। বিয়ের সময় বা বিয়ের পরেও এটা হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় কিছু না চাইতেই যে কোনও পক্ষ, অর্থাৎ বরের বাড়ি বা কনের বাড়ি স্বেচ্ছায় কোনও উপহার বর-বধূকে দিচ্ছে। কিছু পরিবারে তা দেওয়ার রীতিও থাকে, তাকে স্ত্রীধন হিসেবে ধরা হবে’, বললেন তিনি।
আইনজীবী জানালেন, পণ/যৌতুক নিষিদ্ধ আইন-এ চারটি শাস্তির ধারা রয়েছে। সেকশন থ্রি, সেকশন ফোর, সেকশন ফোর এ এবং সেকশন সিক্স। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন রাজ্য অনুযায়ী পণ/যৌতুক নিষিদ্ধ আইনের শাস্তির কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। আইনের সংজ্ঞায় কোনও পরিবর্তন নয়। আইনজীবীর কথায়, ‘উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, সেকশন থ্রি-র যে পানিশমেন্ট সেকশন, ১৯৭৫ সালে পশ্চিমবঙ্গে সেই পানিশমেন্ট সেকশনের সামান্য সংশোধন হয়। সেকশন থ্রি-র শাস্তি পশ্চিমবঙ্গের নিরিখে ধরা হলে, অপরাধ প্রমাণিত হলে তিন মাস থেকে অধিক তিন বছর পর্যন্ত অপরাধীর হাজতবাস হতে পারে এবং অপরাধীর জরিমানাও হতে পারে ২০০০ টাকা থেকে অধিক ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এখানে একটি নতুন সেকশন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সেটা হচ্ছে সেকশন ফোর এ।’
অভিজ্ঞতার নিরিখে তিনি দেখেছেন ইদানীং অন্য পন্থায় পণ চাওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, এমনকী সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখা যাচ্ছে, অনেকে লেখেন, ‘আমার সন্তানকে বিয়ে করলে সম্পত্তির নির্দিষ্ট শতাংশ ভাগ দেওয়া হবে।’ এই ধরনের প্রস্তাবগুলোও পণ হিসেবে এই আইনের আওতাধীন। আইনজীবীর কথায়, ‘এগুলো নিয়ে অনেক সময় আমরা চোখ বন্ধ করে থাকি। এসব নিয়ে আলোচনা কম হয়। কিন্তু এগুলোও আইনের আওতায় পড়ে। যদি এমন ধরনের বিজ্ঞাপন কেউ করেন, তোমাকে আমার সম্পত্তির অংশ দেওয়া হবে, যদি আমার সন্তানকে বিয়ে করো, তাহলে সেটা সরাসরি ডাউরি প্রহিভিশন অ্যাক্ট-এ সেকশন ফোর এ-এর আওয়ায় পড়ছে।’ 
রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী বা স্ব-ইচ্ছায় বিয়ের সময় পুত্র বা কন্যা সন্তানকে তার পরিবারের তরফে কিছু দেওয়া হলে সেটা পণের আওতায় পড়ে না। কিন্তু ‘রীতি’ বলে বেশিরভাগ সময়ই ঘুরপথে পণ চাওয়া হয়। বলা হয়, আপনি সন্তানকে এমন কিছু দিন, যা তার ভবিষ্যতের পক্ষে ভালো হবে। সেটা বর বা কনে যে কেউ হতে পারে। সেটাও পণপ্রথার আওতায় আসবে। ‘আসলে বিয়েটা যদি বলপূর্বক অর্থমূল্যের আদানপ্রদানের ওপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে সেটা এই আইনের আওতায় আসবে’, বললেন আইনজীবী।  
এই আলোচনায় সেকশন সিক্স খুব জরুরি বলে জানালেন আইনজীবী মিন্টু চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘আইনের বইতে লেখা থাকলেও এটা নিয়ে আলোচনা খুব কম হয়। ধরুন, কনেকে উদ্দেশ্য করে সম্পত্তি দেওয়া হল। সেকশন সিক্সে বলা রয়েছে যাকে যৌতুক দেওয়া হয়, সেই মহিলা ভিন্ন অন্য কেউ সেটা পেলে, যদি যৌতুক বিয়ে করার আগে নিয়ে থাকে, তাহলে বিয়ের তিন মাসের মধ্যে ওই যৌতুক যার উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে, (এখানে কনে) তাকে হস্তান্তর করে দিতে হবে। অর্থাৎ কোনওভাবেই তা আটকে রাখা যাবে না। যদি যৌতুক বিয়ের সময় বা বিয়ের পর নেওয়া হয়, তাহলে তা প্রাপ্তির তারিখ থেকে তিন মাসের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। আবার কখনও নাবালিকার সঙ্গেও এই ঘটনা ঘটে। কনে নাবালিকা থাকা অবস্থায় যৌতুকের আদান প্রদান হলে যখন ওই নাবালিকার ১৮ বছর বয়স হবে, তার থেকে তিন মাসের মধ্যে তাকে যৌতুক হস্তান্তর করে দিতে হবে। যদি না দেওয়া হয় তখন তা সেকশন সিক্সের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’ 
এই হস্তান্তরের নিয়ম অনুযায়ী কোনও সম্পত্তির প্রাপ্য অধিকারী মহিলা যদি হস্তান্তরের আগেই মারা যান, তাহলে ওই সম্পত্তি প্রাপক মহিলার ওয়ারিশরা দাবি করতে পারবেন। কিন্তু যদি এই প্রাপক মহিলা তাঁর বিয়ের সাত বছরের মধ্যে অস্বাভাবিক কারণে মারা যান, তাহলে তাঁর সন্তান না থাকলে ওই সম্পত্তি মহিলার বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করতে হবে, আর যদি সন্তান থাকে, তাহলে তার সন্তানকে ট্রান্সফার 
করতে হবে।   
পণ শুধুমাত্র কনের বাড়ি থেকে চাওয়া হয়, তা নয়। পুরুষও পণ প্রথার শিকার। আইনজীবী জানালেন, সেকশন টু ডাউরি প্রহিভিশন অ্যাক্টের আওতায় মহিলা এবং পুরুষ উভয়েই সমাধান পাবেন। ‘ডাউরি প্রহিভিশন অ্যাক্ট-এ কোনও নির্ধারিত সীমা নেই। অর্থাৎ বিয়ের ১০ বা ১৫ বছর পরও যদি কেউ যৌতুক চায়, বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্যও যৌতুক চায় এবং সেই অনুযায়ী যদি অত্যাচার করে সেক্ষেত্রে তা ডাউরি প্রহিভিশন অ্যাক্টের আওতায় আসবে’, বললেন আইনজীবী।  
অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, অভিযোগকারিণী এমন কিছু করতে চাইছেন না যাতে পুরুষটির জেল বা ওই ধরনের শাস্তি হবে। কিন্তু একটা মীমাংসা করতে চাইছেন। আইনজীবীর পরামর্শ, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্লকে প্রোটেকশন অফিসার রয়েছেন। তাদের কাছে যাওয়া যেতে পারে। মহিলা কমিশনের কাছে অভিযোগ করতে পারেন। এইসব জায়গায় দু’জনকে বসিয়ে একটা আলোচনাসাপেক্ষে মীমাংসা করা যেতে পারে। তাছাড়াও ভুক্তভোগীরা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন। 
তবে সবথেকে বড় বিষয় প্রমাণ। আইন প্রমাণ ছাড়া অপরাধীর শাস্তিবিধানে অপারগ। আইনজীবীর মতে, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে যৌতুক চাওয়া হয়, সেটা তো লিখিত নয়। চার দেওয়ালের মধ্যে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ঘটনাটি ঘটে। এখন সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইলে এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থাকে। কিন্তু যৌতুক চেয়েছিল কি না, তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। যদি দেখা যায় অনলাইন টাকা ট্রান্সফার হয়েছে, সেক্ষেত্রে সেটা প্রমাণ হিসেবে দেখাতে পারে। তাছাড়া কোনও মহিলা যদি এই যৌতুকজনিত অত্যাচারের জন্য মারা যান, তাহলে তা সেকশন ৮০ ভারতীয় ন্যায় সংহিতা ২০২৩ এর আওতায় যৌতুকের ফলে মৃত্যু ঘটেছে বলে ধরে নেওয়া হবে।’
স্বরলিপি ভট্টাচার্য
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মস্থলে জটিলকর্মে অনায়াস সাফল্য ও প্রশংসালাভ। আর্থিক দিকটি শুভ। ক্রীড়াস্থলে বিশেষ সাফল্য।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১০ টাকা৮৪.৮৪ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৪ টাকা১১২.১৯ টাকা
ইউরো৯১.৫৩ টাকা৯৪.৭৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
14th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা