বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
রামচন্দ্র গুহর ‘ইন্ডিয়া আফটার গান্ধী’র এই বিবরণটার হঠাৎ দরকার কেন পড়ল? মোক্ষম কারণটা হল, সামনে লোকসভা ভোট। ভারতের সংবিধান নিয়ে গবেষণা করার টানে মার্কিন ছাত্র ছুটেছিলেন নেহরুর শেষযাত্রায়। প্রমাণ পেয়েছিলেন সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটিকে সংবিধানে ঠাঁই দেওয়ার যৌক্তিকতার। আজও কি শব্দটির একইরকম প্রাসঙ্গিকতা সংবিধানে আছে? কিছু রাজনৈতিক দল ভোটের স্বার্থে যে মেরুকরণের রাজনীতি সফলভাবে এদেশে আমদানি করেছে, তাতে ভালোরকম ধন্দ জাগে বইকি! তামাম বিরোধী দলের অভিযোগ অবশ্যই বিজেপির বিরুদ্ধে। আরএসএস যার চালিকাশক্তি। এবং রামমন্দির যে দলের মুখ্য নির্বাচনী ইস্যু। সেই ইস্যু অবশ্যই আজ ভূমিষ্ঠ হয়নি (ছিল প্রথম থেকেই)। ১৯৯৭ সালে একটি সাক্ষাৎকারে লালকৃষ্ণ আদবানি নিজেই বলেছিলেন, ‘বিজেপির উপর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের কার্যত নৈতিক কর্তৃত্ব রয়েছে।’ বিষয়টি অবশ্য সর্বজনবিদিত। বাবরি সৌধ ধ্বংস, রথযাত্রা, রামসেতুর মতো ইস্যুর উপর ভিত্তি করেই অটলবিহারী বাজপেয়ির সরকার কেন্দ্র দখল করেছিল। পাশাপাশি ছিল কার্যত হাইপ্রোফাইল নেতৃত্ববিহীন কংগ্রেস, হাওলা কেলেঙ্কারি, বিদেশিনী ইস্যু। এরপরও অবশ্য রাজনীতির তুলনায় ধর্মীয় মেরুকরণেই বেশি জোর দিয়েছে বিজেপি। অটলবিহারী বাজপেয়ি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কতটা বাস্তববাদী কিংবা সংস্কারপন্থী ছিলেন, সে প্রশ্ন আলাদা। তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের সঙ্গে বিজেপির প্রচারের কোনও সম্পর্কই নেই। ওই সাক্ষাৎকারেই আদবানি বলেছিলেন, ‘জাতপাতের টেনশন থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হল হিন্দুত্ব। জাতপাতের রাজনীতি করে বিভিন্ন দল শুধুই ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করে গিয়েছে। বি আর আম্বেদকরের প্রতিবাদের মূল প্রতিপাদ্যই ছিল, রীতিনীতি এবং উচ্চবর্ণের নামে সামাজিক অবক্ষয়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তার মূলে আঘাত করেছিল। রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছিল হরিজনের হাতে। তাই শুধু ১৯৯১ সালের ভোটেই উত্তরপ্রদেশ, বিহারে জাতপাতের রাজনীতি চোখে পড়েনি।’ আদবানি তখন বিজেপির লৌহপুরুষ। তাঁর মতামতের গুরুত্বও তাই সেই সময় মারাত্মক। মুসলমান সম্প্রদায় নিয়েও তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘মুসলিমদের অনেকেই তো যেচে এসে আমাকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমরাও সেটা ভেবেচিন্তে দেখি। আমাদের কাছে সবারই মতামতের গুরুত্ব আছে।’ যদিও তাঁর উত্তরসূরিদের মধ্যে এমন প্রবণতা খুব একটা চোখে পড়ে না। যোগী আদিত্যনাথ থানার মধ্যে রীতিমতো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জন্মাষ্টমী পালন করেছিলেন। যুক্তি ছিল, মুসলিমরা তো রাস্তা আটকে নামাজ পড়ে। তাহলে জন্মাষ্টমী পালনে দোষ কী? তাঁকে কে বোঝাবে যে, রাস্তায় নামাজ পড়াটাও একজন ভারতীয় নাগরিকের ধর্মের মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু সরকারি মেশিনারি ব্যবহার করে থানায় ধর্মানুষ্ঠান পালনটা নয়।
ফেরা যাক ভোটের সমীকরণে। ২০১১ সালের সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে মুসলিম নাগরিক ১৪.২৩ শতাংশ। এর মধ্যে অবশ্য সবাই ভোটার নয়। কিছু বয়সের জন্য। আর কিছু ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ায়। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, কর্ণাটকের মতো রাজ্যে একটা মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে। একটি মুসলিম পরিবারে যদি চারজন ভোটার থাকেন, তাহলে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে নাকি একজন বাদ হয়ে যান। সবার ক্ষেত্রে নয়। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই এই ঘটনাটি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন একদিকে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং নারীর নাম তালিকায় ঢোকানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলির কলকাঠি নাড়ার খেলায় নিঃশব্দে বাদ হয়ে যাচ্ছেন কোনও না কোনও ভোটার। তাঁদেরও আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফের ভোটার তালিকায় নাম তোলার আগ্রহ দেখা যায় না। ফলে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় ভোটার সংখ্যা। যা গণতন্ত্রের পক্ষে মোটেই খুব ভালো বিজ্ঞাপন নয়। বিষয়টা যতটা রাজনৈতিক, ততটাই সামাজিকও বটে। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর পরও ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটানোর লক্ষণ দেখা যায় না। তার উপর এক রাজ্য থেকে কর্মসূত্রে, বা অন্য কোনও কারণে আর এক রাজ্যে গিয়ে অনেকেই নতুন করে ভোটার কার্ড করেন। সৌজন্যে সেখানকার রাজনৈতিক দল। বছরখানেক আগের একটা হিসেব অনুযায়ী, দিল্লিতে এমন ৪ লক্ষ মানুষ আছেন, যাঁরা দু’টি করে ভোটার কার্ডের অধিকারী। যাই হোক, সেটা মুদ্রার উল্টো পিঠ। এক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, দেশের ১৪ শতাংশ মুসলিম নাগরিক একটা লোকসভা ভোটে কি আদৌ নির্ণায়ক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে? উত্তরটা হল, পারে। গোটা দেশে এমন ১৪টি লোকসভা আসন আছে, যেগুলি মুসলিম প্রধান। সেগুলির মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরে তিনটি, অসমে চারটি, কেরলে দু’টি, পশ্চিমবঙ্গে তিনটি এবং বিহার ও লাক্ষাদ্বীপে একটি করে। ১০১টি আসনে মুসলিম ভোটার ২০ শতাংশের বেশি। ৫০টির মতো কেন্দ্রে এক-তৃতীয়াংশ। পরিসংখ্যান যদি এমন হয়, তাহলে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক ধরতে কেনই বা রাজনৈতিক দলগুলি তেড়েফুঁড়ে নামবে না? দেদার সংরক্ষণ, বাড়তি সুবিধা, আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গে চোখ বন্ধ করে রাখা এবং নানান প্রকল্প। যা দেখে বিজেপি ও আরএসএস স্লোগান তোলে মুসলিম তোষণের। পশ্চিমবঙ্গও এ ধরনের অভিযোগের বাইরে যায় না! কারণ এ রাজ্যে ৬ কোটি ৯৭ লক্ষ ভোটারের মধ্যে মুসলিম প্রায় ৩০ শতাংশ। যে শাসক দলই এখানে ক্ষমতায় আসে, তারা এই ভোটব্যাঙ্কটিকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করে। লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে তো সর্বভারতীয় দলগুলিরও একই অ্যাজেন্ডা হয়।
গত ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে অবশ্যই এমন কোনও সমীকরণ খাটেনি। শুধু উত্তরপ্রদেশেই বিজেপি ৮০টির মধ্যে ৭১টি আসন দখল করেছিল। যে রাজ্যে ধর্ম এবং জাতপাতের রাজনীতিকে কাজে লাগিয়েই কি না দলগুলি ক্ষমতা দখল করে! কীভাবে এটা সম্ভব হয়েছিল? প্রথম কারণ অবশ্যই মোদি-ঝড়। দ্বিতীয়ত, জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায়ের নিরিখে প্রত্যেকেই সেবার ভেবেছিল বিজেপিকে সুযোগ দেওয়া উচিত। নরেন্দ্র মোদি দেশের এবং রাজ্যের উন্নয়ন করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর রিপোর্ট কার্ড বেরিয়ে গিয়েছে। সংস্কারের বহু পদক্ষেপে তিনি হোঁচট খেতে পারেন, কিন্তু মোদির ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। আর রাফাল দুর্নীতি? বোফর্স মামলায় রাজীব গান্ধীর যোগ শেষ পর্যন্ত প্রমাণ হয়নি। রাফালের ক্ষেত্রেও সবটাই অভিযোগের স্তরে আছে। তার উপর পাকিস্তানের ঘরে ঢুকে মেরে আসার আবেগটা মোদির পক্ষে। যোগ হয়েছে আবার নীরব মোদির লন্ডনে গ্রেপ্তারের ‘সাফল্য’। ‘চৌকিদার’কে কেউ যদি বেগ দিয়ে থাকে, তাহলে তাঁরই দলের যোগীদের মতো সরকারেরা। ধর্মের রাজনীতি, গোরক্ষার নামে খুন... এমন অনেক কিছুই নম্বর কেটে নিয়েছে বিজেপির। ফল বোঝা গিয়েছে উপনির্বাচনগুলিতে। ২০১৪ সালে বিজেপি প্রাপ্ত মুসলিম ভোট এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে ১০ শতাংশ। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে দলিত সমর্থন। নম্বর কেটে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে অন্য রাজ্যেও। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস। খ্রিস্টমাসের আগের সন্ধ্যায় ৩২ জন পাদ্রী ক্যারল গাইতে গাইতে যাচ্ছিলেন। একটি সংগঠনের লোকজন তাঁদের উপর হামলা চালায়। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বদলে থানায় ওই ৩২ জনকেই আটকে রাখা হয়। ওই শীতের রাতে তাঁদের মাটিতে বসে থাকতে হয়। এমনকী থানায় এসে ওই সংগঠনের কর্মীরা তাঁদের মারধর করে এবং গাড়ি জ্বালিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। ‘গোরক্ষা’ কিংবা ‘ধর্মরক্ষা’র নামে বহু ঘটনাই বেশ কিছু রাজ্যে বিজেপির, বা আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে নরেন্দ্র মোদির সংস্কারী ভাবমূর্তিকে পিছনের সারিতে ঠেলে দিয়েছিল। হয়তো ভোটের মুখে এসে কিছুটা হলেও বিজেপি উন্নয়ন এবং মোদিকে আবার রাজনীতির এই ম্যারাথন দৌড়ের সামনের দিকে আনতে পেরেছে। এখানেও একটা ভাবনার মতো পরিসংখ্যান আছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছিল ১৯.১ শতাংশ ভোট। সম্মিলিত ইউপিএর ছিল ২৩ শতাংশ। সেখানে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করেছিল। আর বাকি আঞ্চলিক দলগুলির মিলিত ভোট ছিল? ৩৮ শতাংশ। অর্থাৎ এনডিএর প্রাপ্ত ভোটের সমান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একের বিরুদ্ধে এক ফর্মুলা কিন্তু এই পরিসংখ্যানের নিরিখে দারুণ লাগসই। একইরকম চিত্র যদি আসন্ন নির্বাচনেও দেখা যায়, তাহলে আঞ্চলিক সব দল এবং ইউপিএর ভোট হয়ে যাবে ৬১ শতাংশ। হেলায় বিজেপিকে হারিয়ে সরকার গঠন করবে মহাজোট। কিন্তু সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার আগে যেভাবে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের জোটের দফারফা হয়ে গেল, তাকে অশনি সংকেত ছাড়া কীই বা বলা যায়! প্রাক-ভোট না হোক, নির্বাচন পরবর্তী যাতে সমঝোতা ঠিকমতো হয়, তার জন্য অবশ্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মমতা। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অস্ত্রই হল সংখ্যালঘু ভোট।
মাইনরিটিস এগ্রিমেন্ট বা দিল্লি চুক্তি। ১৯৫০ সালের ৮ এপ্রিল স্বাক্ষরিত হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। যার মূল বিষয়বস্তু ছিল, দু’দেশই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার স্বার্থে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেবে। বিষয়টা কিন্তু আদৌ সেই পথে এগয়নি। উদাসীনতা এবং তোষামোদ চলেছে সমান তালে। ২০১৪ সালে বিজেপির ইস্তাহারে ছিল ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ... বিজেপি সকলের ন্যায়বিচারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও কিন্তু বিজেপিকে ঢেলেই ভোট দিয়েছিল। এমনকী উত্তরপ্রদেশের রামপুরের মতো আসন... যেখানে মুসলিম ভোট ৫০ শতাংশেরও বেশি, সেখানেও বিজেপির হিন্দু প্রার্থীই জয়লাভ করেছিল। অথচ বাকি সব দলের প্রার্থীই ছিল মুসলিম। যদিও পরিস্থিতিতে অনেক বদল এসেছে। উত্তরপ্রদেশেরই কইরানা কেন্দ্রের উপনির্বাচন যার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
অর্থাৎ, ধরে নেওয়া যেতেই পারে এবার বিজেপির ঝুলিতে মুসলিম ভোট কমছে। পাশাপাশি আরও একটা চমকদার পরিসংখ্যান আছে। ২০০৯ সালে, অর্থাৎ দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার গঠনের সময় কংগ্রেস পেয়েছিল প্রায় ৩৮ শতাংশ ভোট। ২০১৪ সালেও কিন্তু ঠিক তাই। তাহলে কেন কংগ্রেস দলটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হল? উত্তরটা হল, ভোট বিভাজন। যেখানে বিজেপির সরাসরি লড়াই, সেখানে সংখ্যালঘু এবং পাশাপাশি জাঠ বা দলিতদের ভোট মূলত কংগ্রেসের দিকেই গিয়ে থাকে। কিন্তু যদি আরও দু’টি বা একটি বড় আঞ্চলিক দল মঞ্চে ঢুকে যায়, বিজেপির কোনও অসুবিধা নেই। যে ভোট কংগ্রেসের পাওয়ার কথা ছিল, সেটাই সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টির মতো দলগুলির মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বিরোধীদের জয় নিশ্চিত করতে পারে একমাত্র মহাজোট। আর বিজেপি? নরেন্দ্র মোদি এখনও দেশজুড়ে প্রচারে নামেননি। তিনি জনসভায় সেঞ্চুরি করার লক্ষ্য নিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। যা বদলে দিতে পারে সব সমীকরণ। পশ্চিমবঙ্গে কতটা পারবেন সন্দেহ আছে। কিন্তু বাংলা ছাড়াও তো পড়ে আছে গোটা দেশ! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্যই গেম চেঞ্জার। মোদিও কিন্তু সার্জিকাল স্ট্রাইকে বিশ্বাসী।