সব কর্মেই অর্থকড়ি উপার্জন বাড়বে। কর্মের পরিবেশে জটিলতা। মানসিক উত্তেজনা কমাতে চেষ্টা করুন। ... বিশদ
ছোট্ট জনপদ বীরপাড়া। মনে হতেই পারে, একটা লেভেল ক্রসিং কি ভোটে হার-জিতের ইস্যু হতে পারে? উত্তরটা আসলে এই জনপদে নয়, লুকিয়ে রয়েছে প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ার ক্ষোভে। ডলোমাইট দূষণের সাদা চাদরে মুড়ে থাকা শহর মুক্তি পায়নি, কুমারগ্রামে পড়ুয়াদের জন্য কমিউনিটি হল হয়নি, রেলের জমিতে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালও নিরুদ্দেশ। উনিশে এই সব প্রতিশ্রুতিই ছিল বিজেপির। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘এগুলো করে দেবে বলেই তো ভোট দিয়েছিলাম বিজেপিকে। মিটল কোথায়?’
আলিপুরদুয়ারের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে কথা না রাখার হতাশা। এই কেন্দ্রে একটা বড় ফ্যাক্টর চা-বাগান। উনিশে এই ভোটব্যাঙ্ক কাছে টেনেই বাজিমাত করেছিল বিজেপি। অথচ, চা-শ্রমিকদের দেওয়া যাবতীয় আশ্বাসও দিল্লি থেকে বাগডোগরা আকাশপথেই থমকে গিয়েছে। নাগরাকাটা চা-বাগানের মীনা ওরাওঁ বলছিলেন, ‘সাংসদের দেখাই তো পাইনি! সমস্যার কথা বলব কাকে?’ তাহলে কি সমাধান হয়নি? মীনা বললেন, ‘হয়েছে তো। পাট্টা পেয়েছি, বকেয়া সব টাকা মিটে গিয়েছে। চা-সুন্দরীর ঘরও পাব খুব তাড়াতাড়ি। এছাড়া লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা তো আছেই।’ চা-বাগানের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘সমস্যা অনেক আছে। কিন্তু আমাদের সংসারের হাল ধরে নিয়েছেন দিদিমণি। তাই মোদি কে, জানা বা দেখার ইচ্ছাই নেই।’
এখানেই অ্যাডভান্টেজ তৃণমূল। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘আলিপুরদুয়ারে এবার স্থানীয়-স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রকাশচিক বরাইককে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। একইসঙ্গে ২০১৯ ও ২০২১’এর ভোটে যাঁর হাত ধরে বিজেপি ভালো ফল করেছিল, সেই গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা এখন তৃণমূলে। সেটাই শহুরে এলাকায় বড় ফ্যাক্টর হবে।’ একই সুর এলাকার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের গলাতেও। তাঁরা জানেন, সাংগঠনিক দিক থেকে তৃণমূল নিজেদের অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছে। প্রচারে বাকি কাজ করে দিচ্ছে মানুষের ক্ষোভ আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিষেবা। জমির পাট্টা পাওয়া চা-শ্রমিকদের মধ্যে যে কী প্রভাব ফেলেছে, তা এলাকায় খানিক ঘুরলেই টের পাওয়া যায়। তার উপর আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক দল বদলে এখন তৃণমূলে। প্রকাশচিক বরাইক বলেন, ‘উন্নয়নের নিরিখেই এবারের ভোট। চা-শ্রমিকদের উন্নয়নে কেন্দ্র তো কিছুই করেনি। চা শ্রমিকদের জমির পাট্টা, ঘর তৈরির জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, বাগানগুলিতে ক্রেশ, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পানীয় জল প্রকল্প—সবই করেছে রাজ্য সরকার। শ্রমিকরাও এখন বুঝতে পারছেন, রাজ্যই তাঁদের পাশে।’ লোকসভা কেন্দ্রের বাকি ছ’টি দখলে আছে বলে বিজেপি আত্মবিশ্বাস দেখালেও সমীকরণ যে কঠিন, তা তলায় তলায় ইঙ্গিত দিচ্ছেন দলের কর্মীরা। তারপরও অবশ্য প্রতিশ্রুতি না রাখার সব অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গা। বলছিলেন, ‘বীরপাড়ায় রেল কাজ করতে প্রস্তুত। কিন্তু জমিজট দেখিয়ে রাজ্য এই সমস্যার সমাধান করছে না।’ বাকি প্রতিশ্রুতি নিয়ে তাঁর দাবি, শীঘ্রই কাজ দেখতে পাবে এখানকার বাসিন্দারা।